আইজ্যাক আসিমভ যখন বইটি লেখেন তখন তাঁর উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকানদের সবকিছুর শুরু ও বিবর্তন সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা দিবেন। কিন্তু বইটি শুধু বিজ্ঞানের ওপর আলোকপাত করার উদ্দেশ্য নিয়ে এ বইটি লেখা হয়নি। বইয়ের শুরুর দিকের কয়েকটি অধ্যায়ে বিজ্ঞানের কথা নেই বললেই চলে।প্রাগৈতিকহাসিক যুগের ইতিহাস দিয়ে শুরু হয়েছে। তারপর ইতিহাস থেকে সরে যেতে যেতে আসিমভ আলোচনা করেছেন স্তন্যপায়ী প্রাণী ও সরীসৃপদের উদ্ভবের কথা। বিষয় হিসেবে এটি প্রাণিবিজ্ঞান হলেও স্থলচর প্রাণীদের আলোচনার অবকাশে তিনি স্থলভাগ সৃষ্টি, এর উতকর্ষতা এবং বিবর্তনের ইতিহাস জানিয়েছেন।পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর, মহাদেশ, বনভূমি আর আগ্নেয়গিরির সৃষ্টির কথাও বর্ণিত হয়েছে। এরপর সোরজগত, মহাশূন্য, সূর্য, চাঁদ, গ্যালাক্সির প্রসঙ্গ উঠে এসেছে এ গ্রন্থে। তাই এই বইটি কখনো বিজ্ঞানের বই, কখনো ইতিহাসের বই, কখনো ভূবিজ্ঞানের বই আবার কখনো প্রাণিবিজ্ঞানের বই হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। দ্য গডস দেমসেলভস এর জন্য তিনি একই সাথে হুগো ও নেবুলা এওয়ার্ড লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে সাইন্স ফিকশন রাইটার্স এসোসিয়েশন অব আমেরিকা তাকে গ্রান্ড মাস্টার অব সাইন্স ফিকশন এর সম্মানে ভূষিত করে।
বিংশ শতকের অন্যতম সেরা লেখক আইজ্যাক আসিমভ সাহিত্যজগতের এক উজ্জ্বল নাম। তিনি ১৯২০ সালের ২ জানুয়ারি সোভিয়েত রাশিয়ার পেত্রোভিচি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারের সাথে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ব্রুকলিনে শুরু করেন নতুন জীবন। ছোটবেলায়ই তাঁর বাবা তাকে লাগিয়ে দেন নিজেদের ক্যান্ডিশপে দোকানদারির কাজে। ছোট্ট আসিমভ পাঁচ বছর বয়সেই নিজে নিজে পড়তে শিখে যান। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি হাই স্কুল শেষ করেন এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি ১৯৩৯ সালে ব্যাচেলর অব সায়েন্স এবং পরবর্তীতে এমএ ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে তিনি বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি হলেও তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করতে নিয়মিত শিক্ষকতা করেননি। ১৯৫০ সালে বের হয় তাঁর প্রথম বই ‘পেবলস ইন দ্য স্কাই’, যা জয় করে নেয় সাধারণ পাঠকের মন। এরপর একের পর এক লেখা বের হতেই থাকে তাঁর। তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যকর্মের মূল আধেয় হলো সায়েন্স ফিকশন, পপুলার সায়েন্স, রহস্য ইত্যাদি। সৃজনশীল মেধাসম্পন্ন এই লেখক ৫০০টিরও বেশি বই রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। জনপ্রিয় লেখক আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমূহ হলো, ‘আই,রোবট (১৯৫০)’, ‘ফাউন্ডেশন (১৯৪২)’, ‘দ্য এন্ড অব ইটারনিটি (১৯৫৫)’, ‘দ্য কেভস অব স্টিল (১৯৫৩)’, ফ্যান্টাস্টিক ভয়েজ (১৯৬৬)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত উপন্যাসই শুধু নয়, তুমুল জনপ্রিয় তাঁর ছোটগল্পগুলোও। আসিমভ এর রচনাগুলো থেকে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের চলচ্চিত্র, যার মাঝে আছে ‘আই,রোবট (২০০৪)’, ‘বাইসেন্টেনিয়াল ম্যান (১৯৯৯)’ ইত্যাদি। বিশ্বজোড়া প্রকাশিত আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমগ্র জয় করে নিয়েছে সায়েন্স ফিকশন পাঠকদের মন। তাঁর বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বের নামিদামী পরিচালক তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র, বানিয়েছেন সিরিজ। ১৯৮৭ সালে ‘সায়েন্স ফিকশন রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ তাকে ‘গ্র্যান্ড মাস্টার অব সায়েন্স ফিকশন’ সম্মানে ভূষিত করে। তাঁর লেখা ‘ফাউন্ডেশন (ট্রিলজি)’ ১৯৬৬ সালে এনে দেয় ‘হুগো এওয়ার্ড’, ‘দ্য গডস দেমসেল্ভস’ এনে দেয় একইসাথে ‘হুগো’ ও ‘নেবুলা’ অ্যাওয়ার্ড। কল্পবিজ্ঞানের এই মহা কারিগর ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল ব্রুকলিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।