"বিডিএমও প্রস্তুতি" বইয়ের ভূমিকা: দেখতে দেখতে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড এক যুগেরও বেশি সময় পার করে ফেললাে। ২০০১ সালে নিউরনে অনুরণন শুরু করার সময় আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সাদামাটা। কাজ করতে গিয়ে আমরা প্রথমেই অভাব বােধ করেছি গণিতের বইয়ের পাঠ্যপুস্তকের বাইরে গণিতের যে বিশাল জগৎ তার সঙ্গে আমাদের শিক্ষার্থীদের তেমন কোন যােগাযােগই নেই। শুরু হল দেশ-বিদেশ থেকে গণিতের বই সংগ্রহ করে সেগুলাে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ আমাদের গণিতবিদ ও শিক্ষাবিদরা লিখতে শুরু করলেন বাংলায় গণিতের বই। গণিত অলিম্পিয়াডের প্রথম দশকে আমাদের প্রচেষ্টা ছিল গণিতকে জনপ্রিয় করে, গণিতের প্রতি আগ্রহি করে তােলে, এমন বই প্রকাশ করা। এর মধ্যে আস্তে আস্তে আমাদের শিক্ষার্থীদের মানও বাড়তে শুরু করে। আমাদের গণিত অলিম্পিয়াডের সমস্যাগুলাে সহজ গণণা থেকে ধারণা ও বিশ্লেষনের প্রতি আগাত থাকলাে। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডেও আমরা কিছুটা হলেও সাফল্য পেতে শুরু করলাম। কাজেই গণিতের বইয়ের ব্যাপারেও আমাদের আগাতে হল মজার গণিত থেকে বের হয়ে গাণিতিক সমস্যা সমাধানের কৌশল এবং এর পাশাপাশি গণিতের বিভিন্ন বিষয়বস্তুকে সহজ ভাষায় তুলে ধরার বইয়ের দিকে। "BDMO প্রস্তুতি" এই বইটি সেই প্রচেষ্টারই ফসল। বইটিতে অলিম্পিয়াডের নানান সমস্যা সমাধানের জন্য যা যা প্রযােজন তার একটি নির্দেশনা রয়েছে। রয়েছে প্রচুর উদাহরণ এবং অনুশীলন করার জন্য নানা সমস্যা। সব মিলিয়ে যারা বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে ভাল করে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পয়াডে অংশ নিতে আগ্রহি, এই বইটি তাদের প্রস্তুতিতে খুবই সহায়ক। এই বইটি জুনিয়র, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপযােগী করে লেখা। সেভাবেই বিষয়বস্তুকে সাজানাে হয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছে নাম্বার থিওরির বিভিন্ন বিষয়, জ্যামিতি ও কম্বিনেটরিক্সে। আমাদের দেশের স্কুল পর্যায়ের সিলেবাসে সংখ্যাতত্ত্বের খুব একটা জায়গা নেই। একইভাবে আমাদের দেশের সিলেবাসে জ্যামিতি এখনাে আটকে আছে উপপাদ্যের প্রমাণ মুখস্ত করাতে। সেটির প্রয়ােগের ব্যাপারটা এখনাে মুখ্য হয়নি এদেশে। যদিও আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় কয়েক দশক ধরে সেই পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই বইটিতে তারও একটি ধারণা পাওয়া যাবে। তবে, সবকিছু ছাপিয়ে এই বইটি হবে গাণিতিক সমস্যা সমাধানের একটি বড় হাতিয়ার যা শিক্ষার্থীকে কেবল অলিম্পিয়াড সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবে না, বরং তাকে গণিতের রস আস্বাদনেও প্রভূত সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সফলতার গল্পের সাথে যে ব্যক্তির নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তিনি মুনির হাসান। তিনি একইসাথে একজন বিজ্ঞানী, লেখক, ব্লগার ও উদ্যোক্তা, যিনি তারুণ্য ও উদ্যোক্তা এই দুইয়ের মেলবন্ধনে বেকারত্বের বাঁধা ডিঙোতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য উৎসাহ জাগানিয়া প্লাটফর্ম ‘চাকরি খুঁজবো না, চাকরি দেবো’ এর সাড়া জাগানো পথচলা ও সাফল্যের পেছনেও রয়েছে এই মানুষটিরই হাত। মুনির হাসানের আরেকটি পরিচয় হলো- তিনি বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (BdOSN) এর সহকারী প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে মুনির হাসান দৈনিক প্রথম আলোর যুব কর্মসূচী সমন্বয়কের কাজে নিয়োজিত আছেন। মুনির হাসানের জন্ম ১৯৬৬ সালের ২৯ জুলাই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। সেখানেই সেন্ট মেরিজ, মুসলিম হাই স্কুল ও মুসলিম এডুকেশন সোসাইটিতে শেষ করেন হাই স্কুলের পাঠ। বাকি শিক্ষাজীবন জুড়ে আছে চট্টগ্রাম কলেজ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে অবদান ও সম্পৃক্ততার জন্য বন্ধু মহলে ‘ম্যাথ মুনির’ নামে পরিচিত হলেও বুয়েটে তাঁর পড়ার বিষয় ছিলো ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং। দৈনিক সংবাদের সাপ্তাহিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ফিচার পাতায় লেখালেখি করতে গিয়ে সাহচর্য পেয়েছেন আ. মু. জহুরুল হক, আবদুল্লাহ আল-মুতী, শরফুদ্দিন কিংবা এ আর খানের মতো বিজ্ঞান লেখক ও বিজ্ঞান কর্মীদের। তাঁদের অনুপ্রেরণায়ই বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার কাজে আরও উদ্যমী হয়েছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ভোরের কাগজ ও প্রথম আলোর বিজ্ঞান বিষয়ক ফিচার পাতারও করেছেন সম্পাদনা। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে ২০০৩ সালে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদের সাহচর্যে গড়ে তোলেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। বর্তমানে সেই সফল কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন মুনির হাসান। তাঁর অসাধারণ সব কাজের সাথে তাল মিলিয়ে, অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সময়ে সময়ে বেশ কিছু বইও লিখেছেন মুনির হাসান। মুনির হাসান এর বই সমগ্র এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শরবতে বাজিমাত, গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং, গল্পে গল্পে ধাঁধা, অঙ্কের ধাঁধা ধাঁধায় অঙ্ক ইত্যাদি। মুনির হাসান এর বই সমূহ এর মধ্যে লেখকের বুয়েটে জীবন নিয়ে লেখা আত্মজৈবনিক বই ‘পড়ো পড়ো পড়ো’ পেয়েছে অসম্ভব পাঠকপ্রিয়তা। তাঁর জীবনেরই মতো মুনির হাসানের বই তাঁর পাঠকদের উদ্দীপিত করে নিজের পছন্দে নিজের জীবন বেছে নিতে ও গড়ে তুলতে।