গলিতে ঢুকেই প্রথমে পোড়ো বাড়িতে পাড়ার ছেলেদের জিমন্যাস্টিকের আখড়া, আগে এখান দিয়ে সন্ধ্যার পর একা চলতে নীলার সাহসে কুলোত না। শক্তিচর্চা করছে অথচ ছোকরাগুলোর হ্যাংলামো যায়নি। মেয়ে দেখেছে কি শিস দিয়েছে। প্রথম প্রথম গা জ্বলে যেত। ইচ্ছে হত এদের কাউকে ডেকে আচ্ছা করে ধমকে দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাহস করে উঠতে পারেনি। ক্রমশ জ্বলুনি কমল, কৌতূক-বোধ এল। আহা, শিস দিয়ে সুখ পায়, পাক। গায়ে তো কিছু ফোস্কা পড়বে না । তারপর থেকেই শুরু হল ভাড়াটে বাড়ির সারি। একতলার ঘরে ক্যানেস্তারা আর প্যাকিং বাক্সের গুদাম, দোতলার ঘর পিছু এক একটি পরিবার। স্বল্প পরিসর, স্বপ্নতর আলো হাওয়া। প্রথম প্রথম গলি থেকে বড়ো রাস্তায় পড়লে নীলার চোখ ঝলসে যেত। ব্যায়ামের আখড়ার পর প্রমথর দোকান। প্যারিস জুয়েলারী। প্রো: শ্ৰী প্রমথনাথ পোদ্দার। নিরালোক ঘুরঘুট্টি ঘরে শিকে ঘেরা দরজার আড়ালে টিমটিমে একটা আলো জ্বালিয়ে প্রমথ পোদ্দার কাজ করছে, দৃশ্যটা প্রথম প্রথম কেমন অদ্ভুত লাগত। আর, এমন তন্ময় হয়ে মাথা নিচু করে কাজ করে লোকটা, কিন্তু রাস্তায় কারুর পায়ের শব্দ হলে মুখ তুলে তাকায় ঠিক, খুশি হলে আলাপও করে।
সন্তোষকুমার ঘোষ (জন্ম: ৯ সেপ্টেম্বর ১৯২০ - মৃত্যু: ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫) একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। সন্তোষকুমার ঘোষ বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুরের রাজবাড়ীর বাসিন্দা ছিলেন। তিনি ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে বিএ পাস করেন। কবিতা দিয়ে তাঁর সাহিত্য রচনার শুরু হয় । তাঁর প্রথম উপন্যাস নানা রঙের দিন থেকেই তাঁর মধ্যে এক নতুন রচনাশৈলির পরিচয় পাওয়া যায় । কিনু গোয়ালার গলি তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস । তাঁর আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস শেষ নমস্কার - শ্রীচরণেষু মাকে । এই গ্রন্থটি ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করে। কয়েক দশক ধরে তিনি নিজস্ব ভঙ্গিতে বহু ছোটগল্প লিখেছেন । তাঁর অন্যান্য বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জল দাও, সময় আমার সময় প্রভৃতি। তাঁর সাংবাদিক জীবনের শুরু ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে যুগান্তর পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসাবে। এরপর বাংলা ও ইংরেজি আরও কয়েকটি পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার বার্তা-সম্পাদক হিসাবে যোগ দিয়ে বাংলা সাংবাদিকতায় নতুনত্ব আনেন। পরবর্তীকালে তিনি এই পত্রিকার সংযুক্ত সম্পাদক হন। তিনি অনেক সাংবাদিকও গড়ে তুলেছিলেন। সন্তোষকুমার ঘোষ একজন রবীন্দ্র অনুরাগী ছিলেন ।