"প্রতিবেদন লিখনের কলাকৌশল" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: বাংলা ভাষায় গবেষণা পদ্ধতি ও প্রতিবেদন লিখন বিষয়ে হাতে গােনা দু'-একটি বই রচিত হলেও শুধুমাত্র প্রতিবেদন লেখার নিয়ম-কানুন সম্পর্কিত বই নেই বললে চলে। গবেষণা পদ্ধতি বিষয়ক বইগুলাের শেষাংশে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম-কানুন সম্বলিত অধ্যায় সকল শ্রেণির ব্যবহারকারীর চাহিদা পূরণ করে না বলেই মনে হয়েছে। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন সংস্থাগুলােকে নানা ধরনের প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হয় । আবার সাম্প্রতিককালে বে-সরকারি বাণিজ্যিক সংস্থাগুলােও বার্ষিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। তাই পেশাগত জীবনেও অনেককেই প্রতিবেদন লেখার নিয়ম-কানুনের সাথে নতুন করে পরিচিত হতে হয়। কিন্তু প্রতিবেদন লেখার নিয়ম-কানুন সম্পর্কিত বিশেষায়িত বইয়ের অভাবে যথাযথ রীতি-নীতি মেনে প্রতিবেদন লিখতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রেই মুখবন্ধ আর ভূমিকা' লেখার মধ্যে তারতম্য দেখা যাচ্ছে না। নিয়ম মেনে ‘গ্রন্থপঞ্জি’ লেখার অনুশীলন খুব কমই দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের বিচ্যুতিসহ প্রকাশিত হচ্ছে অনেক প্রতিবেদন-এমনকি গবেষণা প্রতিবেদনও। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণীর গবেষণা প্রতিবেদন, ফ্রিল্যান্স গবেষকদের অ্যাকশন রিসার্চ, কিংবা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার নানা ধরনের প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে এ বইটি সহায়ক হবে বলে মনে করি।
১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের একমাত্র হল ছিল রোকেয়া হল। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর থেকেই জগন্নাথ হল, ইকবাল হলের স্বাধীনতাকামী ছাত্রদের পাশাপাশি রোকেয়া হলের ৭ জন ছাত্রীও বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ডামি রাইফেল নিয়ে শক্র মোকাবিলার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছিল। তাঁরা ২৫ মার্চে হলেই থেকে যান। গণহত্যার তাণ্ডব শুরুর পর-পরই রোকেয়া হলের হাউস টিউটর ৭ জন ছাত্রীকে নিজ কোয়ার্টারের স্টোর রুমে লুকিয়ে রেখেছিলেন। ছাত্রীদের না পেয়ে পাকিস্তানী সেনারা হলের কর্মচারি কোয়ার্টারে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালায়। ২৬ মার্চ ঢাকা শহরে ছিল কারফিউ। ২৭ তারিখে কারফিউ শিথিল করা হলে ঐ ৭ ছাত্রী হলের পেছন দিকে দিয়ে বেরিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তাদের-ই একজন সাবিহা ঘটনাক্রমে কুষ্টিয়া জেলা সামরিক আইন প্রশাসকের কার্যালয়ে টাইপিস্ট হিসেবে চাকরি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। তিনি এই সুযোগ কাজে লাগান মুক্তিবাহিনীর জন্য গোয়েন্দাতথ্য সরবরাহের মতো দুঃসাহসী কাজে। প্রতিটি দিন, প্রতিটি তথ্যপাচারের ঘটনাই ছিল শ্বাসরুদ্ধকর। ধরা পড়ে যান তিনি কুষ্টিয়ায় চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরুর ২ দিন আগে ৭ ডিসেম্বর। সাবিহার ঊর্ধর্তন কর্মকর্তা প্রায়-বৃদ্ধ পাঠান সৈনিক সাবিহাকে মেয়ে-জ্ঞান করত। সাবিহা ধরা পড়ার পরে সে চেষ্টা করেছিল সাবিহার সম্ভ্রম রক্ষার জন্য। পারা-না-পারা সেতো ছিল আর এক যুদ্ধ। সাবিহার জীবনে নেমে আসে চূড়ান্ত বিপর্যয়। ১২ ডিসেম্বর পাকিস্তানী ক্যাম্প থেকে অনেক বাঙালি নারীকে উদ্ধার করা হয়। বিজয়ের উল্লাসে কেউ ভাবল সাবিহা বীরঙ্গনা, কেউ ভাবল সে-তো সেনা ক্যাম্পে চাকরি করেছে? তাহলে কি সে শত্রুর সহযোগী? সাবিহাসহ গোটা পরিবারের ওপরে নেমে এল ঘোর অমানিশা।