জীবনের পথে চলা যেন মহাসমূদ্রে পাড়ি দেওয়া। মহাসমূদ্রে পাড়ি দিতে যেমন লাগে জাহাজ তেমনি জীবন সমুদ্র পাড়ি দিতেও লাগে স্বপ্ন। অনেকেই স্বপ্নের চাইতে অনেক বেশি অবারিত ধারায় পেয়ে থাকে। আবার অনেকেই শত সাধনার দ্বারাও স্বপ্নকে লালন করতে পারে না। স্বপ্ন বুঝি ওদের কাছে দুঃস্বপ্ন। স্বপ্নের আগুনে ঝলসে যায় ওদের জীবন। ওদের স্বপ্নগুলি প্রভাতের রাঙা ইচ্ছাগুলাে বিষন্ন সন্ধ্যায় মরে যায়। তবুও ওরা বার বার স্বপ্ন দেখে একদিন ওদের স্বপ্নগুলাে ডানা মেলে আকাশে উড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য সুদূর এক পল্লীগ্রাম থেকে আসে লােটাস নামক এক তরুণ। জীবনের বিভিন্ন বাঁকে ভিন্ন জনের সাথে পরিচয় ঘটে লােটাসের। বাসেই পরিচয় ঘটে হেনা নামের এক তরুণীর সাথে। সময়ের তালে তালে পরিচয় ঘটে অচিরা, শ্রাবণ, কচিসহ আরও অনেকের সাথে। জীবনের গােধূলী লগ্নে ওরা দেখে সবাই যেন জীবন যুদ্ধে বিধ্বস্ত সৈনিক। বাস্তবের আঘাতে শুধু ক্ষত-বিক্ষত হওয়া; এটাই যেন ওদের নিয়তি। ওরা চাইলেই একজন অন্যজনকে ধরে রাখতে পারেনি। সবাই নিজে নিজে দগ্ধ হয়েছে নীরবে কিন্তু কাউকে দগ্ধ করতে চায়নি। তারপরেও অনেকের হৃদয়ের বীণায় আর বাজেনি কখনও সুর। হৃদয়ের অনল, বাস্তবের অনল আর আবেগের অনল মধ্যে রয়েছে বিস্তর ব্যবধান। ওদের এক একজনের স্টেশন বুঝি ভিন্ন জায়গায়, জীবনের বিভিন্ন মােড়ে থেমে গেছে। ওদের জীবন। আসলে ওরা তাে ভিন্ন পথের যাত্রী।
১৯৮৫ সালের ১৫ই অক্টোবর যশাের জেলার অন্তর্গত হামিদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মঞ্জুরুল ইসলাম। পিতা মরহুম ওহাব আলী সরদার ও মাতা মননায়ারা বেগমের বড় আদরের সন্তান তিনি। ৯ ভাইবােনের মধ্যে তাঁর অবস্থান ৭ম। শৈশব কৈশাের কেটেছে যশাের জেলায়। গ্রামের বাড়িকে কেন্দ্র করে তাঁর বেড়ে ওঠা। তিনি নিজ গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং আল-হেরা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তারপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করেন। বর্তমানে মরুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ রেজাল্টের অপেক্ষায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের শুরু থেকেই লেখালেখির শুরু। পূর্ব প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ছিন্নলতা (২০০৯) তাঁর প্রথম উপন্যাস। প্রথম উপন্যাসে তিনি রকি সাহিত্য পুরস্কার ২০১০ অর্জন করেছেন। জীবনকে তিনি দেখেন বাস্তবতার কঠিন নিরিখে। তিনি তাঁর সাহিত্যে মানুষের জীবনের কথা, সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতির কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তাঁর মতে উপন্যাস শুধু আনন্দের উপকরণ নয়, উপন্যাসে থাকবে জীবনের কথা, থাকবে সমস্যার কথা, দুঃখের কথা, আনন্দের কথা।