মহাক্ষমতাধর স্রষ্টার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা... তাঁর অনুগ্রহেই সম্ভব হয় বান্দার পক্ষে কোনো কাজ সম্পাদন করা... তিনি না চাইলে বৃক্ষের একটি পত্রও পড়ে না- তিনি হলেন মহান আল্লাহ ৷ ‘সুওয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবিয়্যাত' গ্রন্থটির অনুবাদ সম্পন্ন করার এ আনন্দঘন মুহূর্তে সেই মহান আল্লাহর যথার্থ কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা আর ভাষা আর ক্ষমতার কোনোটিই যখন আমার নেই তখন হৃদয়ের অতলান্তিক কোমল ভূমি থেকে বিপুল উচ্ছাসে শুধু এটুকুই উচ্চারণ করতে পারি ai shak। অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর... ‘ড. আব্দুর রহমান রাফাত পাশা' আরববিশ্বতো বটেই দক্ষিণ এশিয়ার এ অঞ্চলেও অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম। তার লেখা আরবী গদ্য মধুর মতো মিষ্ট, অশ্রুর মতো আদ্র, পর্বতের মতো সুদৃঢ় আর প্রেমের মতো আকর্ষণীয়... নামে যেমন খ্যাতিমান কাজে তিনি তার চেয়ে বেশি শক্তিমান... তার লেখা সুওয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবা, সুওয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবিয়্যাত এবং সুওয়ারুম মিন হায়াতিত তাবেঈন আরববিশ্বে যেমন জনপ্রিয় এই বাংলাদেশের আরবী সাহিত্যপ্রিয় পাঠকমহলেও তেমনি লোভনীয়... আরবী সাহিত্যের ছাত্র থাকাবস্থায় ড. অক্ষর বিন্যাসে অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দেন শ্রদ্ধেয় মাওলানা আব্দুল্লাহ আল ফারূক। আল্লাহ তা'আলা এ দুজনসহ সংশ্লিষ্ট সবার শ্রম ও মেহনতকে কবুল করুন... তাদেরকে জাযায়ে খায়ের দান করুন... পাঠক সমীপে... একটি ভাষার রং-স্বাদ-সৌরভের শতভাগ অন্য ভাষায় প্রকাশ করা দুষ্কর বটে— বরং অসম্ভব বলা চলে... তবে অনুবাদকের দক্ষতা ও আন্তরিকতায় এ অভাব কিছুটা মোচন হয়... এ বইটির অনুবাদে মূলের ভাব, ভাষা, শৈলী ও আঙ্গিক অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করা হয়েছে... আমাদের সাফল্য বা ব্যর্থতা মূল্যায়নের ভার পাঠকের... বইটি যেহেতু বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠকের হাতে যাবে তাই এ সুযোগে সকল শ্রেণীর পাঠকের কাছে দু'আ চেয়ে নিচ্ছি, আল্লাহ এর ক্ষুদ্র-বৃহৎ যে কোনো পরিমাণ কাজ সম্পাদনকারীকে তাদের পিতা-মাতাকে ক্ষমা করুন এবং তাদের জন্যে জান্নাতের ফয়সালা করে দিন... আ-মিন... ইয়া আরহামার রা-হিমিন ।
১৯২০ খ্রিস্টাব্দে উত্তর সিরিয়ার আরিহা শহরে জন্ম। জন্মের চার মাসের মাথায় বাবাকে হারান। চার বছর বয়সে মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেলে দাদার কাছেই লালিত-পালিত হন। সিরিয়ার প্রাচীনতম শরয়ী শিক্ষাগার হালাব শহরের মাদরাসা খুরভিয়ায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন। তারপর মিসরের আল-আজহার ইউনিভার্সিটি থেকে অর্জন করেন উসূলে ফিক্হের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি। আল-আজহারে পড়াশোনা শেষ করে কায়রো ইউনিভার্সিটিতে আরবি ভাষা ও সাহিত্যের উচ্চতর গবেষণা সম্পন্ন করে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ড. আবদুর রহমান রা‘ফাত পাশা শিক্ষকতা, সাহিত্যসাধনা ও গবেষণাতেই জীবনভর সম্পৃক্ত ছিলেন। এক সময় দামেস্ক ইউনিভার্সিটির কলা অনুষদের প্রভাষক ছিলেন। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে সৌদি আরব সফরে গেলে রিয়াদের ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সউদ ইউনিভার্সিটি থেকে অধ্যাপনার প্রস্তাব পেয়ে সেখানেই স্থির হয়ে যান। আরবি ভাষার সেবা, সাহিত্যসাধনা ও গবেষণার পাশাপাশি মুহাম্মদ ইবনে সউদ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে সেখানেই কাটিয়ে দেন জীবনের বাকি বাইশটি বছর। ইসলামি সাহিত্যের উৎকর্ষ বৃদ্ধিতে ড. রা‘ফাত পাশা প্রধানত দুটো ভাগে কাজ করেছেন। এক. ইসলামের স্বর্ণযুগে রচিত দাওয়ামূলক কবিতা সম্ভারকে শিল্পের নিক্তিতে মেপে সমালোচনা। দুই. ইসলামের অতীত ইতিহাসকে খ্যাত ও বিস্মৃত মনীষীদের জীবনীর আদলে অনন্য রচনাশৈলিতে উপস্থাপন।জীবনী সাহিত্যে রা‘ফাত পাশা যে কাজগুলো করে গেছেন, তা আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। ‘সুয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবা’, ‘সুয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবিয়াত’ ও ‘সুয়ারুম মিন হায়াতিত তাবেয়িন’ শিরোনামের তিনটি গ্রন্থ তাঁকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এ ছাড়া ‘আদ-দীন আল-কাইয়িম’, ‘লুগাত আল-মুসতাকবিল’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ আরও বিপুল কাজ করে গেছেন তিনি। ৬৬ বছর বয়সে প্যারালাইসিসের কারণে ড. রা‘ফাত পাশার শরীরের একাংশ বিকল হয়ে যায়। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময় ডাক্তারের পরামর্শে কিছু দিনের জন্য হাওয়া বদলের উদ্দেশে তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যান এবং সেখানেই জুলাইয়ের ১৮ তারিখ মুতাবেক ১১ জিলক্বদ ১৪০৬ হিজরী শুক্রবার রাতে ইন্তিকাল করেন। ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক ‘ফাতেহা’ গোরস্তানে তাঁকে সমাহিত করা হয়, যেখানে শুয়ে আছেন বিপুল সংখ্যক সাহাবী আজমাঈন ও তাবেয়িনে কেরাম।