ফ্ল্যাপে লিখা কথা জীবনের কথাকার হাসান আজিজুল হক। রক্তমাংসের অস্তিত্ব খুঁড়ে খুঁড়ে তুলে আনেন ধ্রুপদী সব গল্পউপন্যাস। সেখানেই থেমে থাকেন না তিনি। আরো তলমূলে চলে যান নিরেট নিরঞ্জন সত্যের সন্ধানে। তত্ত্বজিজ্ঞাসার চোখে তলিয়ে দেখেন ভিতরের বিশ্বরূপটাকে।একের পর এক সৃষ্টি হতে থাকে মননঋদ্ধ প্রবন্ধগুলি। নয় নয় করে প্রায় অর্ধশত প্রবন্ধ রচনা করেছেন হাসান আজিজুল হক। সাহিত-সংস্কৃতি-দর্শন-রাজনীতি-সমাজ; সারস্বত আচরণের নানা বিদ্যা অবলীলায় ছুঁয়ে গেছে এইসব বিচিত্র গদ্যলেখা।মনস্বিতা-বুদ্ধিবৃত্তি-শুভবুদ্ধি তিনের সমন্বিত শব্দরূপ মূলতঃ। গতানুগতিক কেতাবী ভারমুক্ত, কথ্যরসে প্রাণিত, জিজ্ঞাসায় আক্রান্ত নতুনতর মূল্যায়ন প্রয়াসে আকর্ষক প্রবন্ধগুলি ছ’টি বইয়ে ছড়িয়ে ছিল। এবারে ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’ শিরোণামে গুচ্ছাকারে সূচিবদ্ধ হল। এখন বলা যেতে পারে, কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধসাহিত্য, দুটি মাধ্যম মিলিয়ে একটি পূর্ণায়ত পরিচিতি পেয়ে যান লেখক। সে পরিচিতি পেয়ে যান লেখক। সে পরিচিতিরি যথাযথ অভিধা : ‘মানতান্ত্রিক হাসান আজিজুল হক’।
সূচিপত্র ভাষারীতি অপ্রকাশের ভার মুখের কথা প্রমিত বাংলাভাষা ভাষার মানচিত্র বাংলাগদ্যে দর্শন চর্চা শিক্ষা, শিক্ষার মাধ্যম শরৎচন্দ্র : একসঙ্গে চোখে জগদীশ গুপ্ত : কথাসাহিত্যে বিপরীত স্রোত মহাদেশের কথক শক্তি, শক্তিদা, শক্তি চট্টোপাধ্যায় স্বপ্নছায়াকল্পনার মূর্ত বাস্তব কাজী নজরুল ইসলাম ও বাঙালি সংস্কৃতি বন্ধুর আলেখ্য জীবনের গাঢ় সমাচার শিব্রাম চকরবরতির ব্যাপারসাপার তাঁর মনস্বিতা কান্ডজ্ঞানের দর্শন স্রোতের বিপরীতে দুষ্পাঠ্য কররেখা মানুষের মুখ রবীন্দ্র-উপন্যাসে স্বদেশ ভাবনা আখতারুজ্জামানের ইলিয়াসের বিষবৃক্ষ লেখকের উপনিবেশ শিল্পীর দায়িত্ব সাহিত্যের বাস্তব জীবনের জঙ্গমতা : লেখকের দায় এইসব তত্ত্ব : বিভ্রমের হাতছানি বাংলাদেশে, বঙ্কিমচর্চা শিল্পে ইন্দ্রিয়গোচরতা : চলচ্চিত্র : সাহিত্য ভোরের ভৈরকী : এখলাসউদ্দিন আহ্মেদের শিশু-কিশোর রচনা উত্তর আধুনিকতা : সময় ফুরায় না সব লেনদেন একুশের ভাষা আন্দোলন নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা : মায়া-প্রপঞ্চ বাঙালি সংস্কৃতির কি হবে গণ-প্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা : সমূহনাশের সংকেত শিক্ষা-ব্যবস্থা-কি চাই কি চাই না মার্কস ও এঙ্গেলস : তাঁদের নারীবাদী তত্ত্ববিষয়ে দুএকটি মন্তব্য জীবনযাপনে সাম্প্রদায়িকতা : দাঙ্গা আর দেশভাগ সাম্প্রদায়িকতা : ব্যাধি, না ব্যাধির উপসর্গ আধুনিকতা, লোকযাত্রা ও সংস্কৃতির রূপান্তর
সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্যের গৌরবময় একটি নাম হাসান আজিজুল হক। ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান জেলার যবগ্রামে তার জন্ম । নিজের গ্রাম থেকে স্কুলের পড়া সাঙ্গ করে ওপার-বাংলায় চলে যান। তিনি, দর্শনশাস্ত্রের পড়াশোনার পর অধ্যাপনা করেন সেখানকার কয়েকটি কলেজে। ১৯৭৩ সাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের অধ্যাপক, এখন অবসরপ্রাপ্ত। অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘকাল অনেক গল্পের স্ৰষ্টা তিনি। গল্প অনেক লিখেছেন, কিন্তু, রহস্যময় কোনো কারণে, উপন্যাস-লেখায় বিশেষ আগ্ৰহ দেখান নি প্ৰতিভাবান এই কথাসাহিত্যিক । এ-বইটি প্ৰকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে পাঠকসমাজের উৎসুক প্রতীক্ষার যেন অবসান হলো, আমাদের হাতে এসে পৌঁছল হাসান আজিজুল হকের হৃদয়স্পশী এই উপন্যাস : ’আগুনপাখি’ ।