ভূমিকা ইংরেজি 'Geography'-এর প্রতিশব্দ কে, কখন ‘ভূগোল' করেছিলেন তা আমার জানা নেই। সংজ্ঞার্থের সাথে কোনো সম্পর্ক না থাকলেও বহুল ব্যবহারে শব্দটি টিকে গেছে। এখন মনে হয় সময় এসেছে প্রকৃত প্রতিশব্দটি বেছে নেয়ার বাংলা একাডেমির ইংরেজি-বাংলা অভিধানের প্রথম সংস্করণে জিওগ্রাফির বাংলা করা হয়েছে ভূগোলবিদ্যা বা ভূবিজ্ঞান, ভূগোল নয়। জিওগ্রাফির সংজ্ঞার্থের সাথে ভূবিজ্ঞানের সম্পর্ক অনেকটা নিবিড়। বহু শতাব্দি প্রাচীন ঢাকার ইংরেজি বানান আমরা পরিবর্তন করে নিতে পারলে জিওগ্রাফির প্রতিশব্দ হিসেবে ‘ভূবিজ্ঞান' শব্দটির প্রয়োগ; ক্ষতি কী? অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ভূগোলের সাথে পরিবেশ বিষয়টির সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। ভূগোলের পরিবর্তে ভূবিজ্ঞান প্রতিশব্দ ব্যবহার করলে বিষয়টির গ্রহণযোগ্যতা আরো বৃদ্ধি পেতো নিঃসন্দেহে। সাহসের সাথে ব্যবহার শুরু করলেই “ভূগোল' বদলে ‘ভূবিজ্ঞান' হতে সময় লাগবে না। বাংলা প্রতিশব্দ তৈরির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন লেখক ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন। ফলে একটি ইংরেজি শব্দের অনেকগুলো বাংলা প্রতিশব্দ ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রতিশব্দ তৈরির ক্ষেত্রে কোনো বিধিবিধান নেই। যে প্রতিশব্দ বহুল ব্যবহারে টিকে যায়, তাই আদর্শ। তবে প্রতিশব্দ তৈরির ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে যে বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন তা হলো, প্রতিশব্দটি যেন বিদেশি ভাষার শব্দ অপেক্ষা দুর্বোধ্য হয়ে না যায়। সে ক্ষেত্রে বিদেশি শব্দটিকেই বাংলায় লিখে প্রতিশব্দ হিসেবে চালিয়ে দেয়া অধিকতর মঙ্গল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ‘কম্পিউটার' শব্দটিকে প্রথম দিকে কেউ কেউ বাংলা প্রতিশব্দ ‘পরিগণক' করেছিলেন। কিন্তু পরিগণক অপেক্ষা কম্পিউটার অনেক বেশি সহজবোধ্য, তাই শব্দটি টিকেনি। আমরা ইংরেজি ‘কম্প্যুটার’কে বাংলা প্রতিশব্দ ‘কম্পিউটার' করে নিয়েছি। তেমনি কোনো কোনো লেখক প্লেটের প্রতিশব্দ ‘ফলক’ বা ‘পাত’ করেছেন। ফলক বা পাত অপেক্ষা প্লেট শব্দটি অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ও সহজবোধ্য। বাংলা উচ্চারণে ইংরেজি শব্দ চালু হয়ে গেলেও ক্ষতি নেই। এতে ভাষার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধই হয়। ওপার বাংলায় ভূগোল বিষয়টি স্বতন্ত্রভাবে বিকাশ লাভ করছে। ফলে ওপার বাংলার বইগুলোতে ব্যবহৃত কোনো কোনো প্রতিশব্দের সাথে বাংলাদেশে প্রচলিত প্রতিশব্দের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। যেমন, ওপার বাংলার বইগুলোতে ইংরেজি ‘ইয়ন’ শব্দের প্রতিশব্দ করা হয়েছে 'অতিকল্প'। বাংলাদেশে ইয়ন নামেই চলছে। আমি এ ক্ষেত্রে ইয়নকে ‘মহাকাল’ এবং এরাকে ‘মহাযুগ” হিসেবে উপস্থাপন করেছি। আর যেসব শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ তৈরি সম্ভব হয়নি তা ইংরেজি উচ্চারণ বাংলায় বানান করে রেখে দিয়েছি। বইটিতে প্রায় ৫,০০০ ভুক্তি রয়েছে। ভুক্তিগুলো বাংলা বর্ণক্রমে সাজানো হয়েছে। ব্যবহারকারীর সুবিধার্থে বইয়ের শেষে ইংরেজি বর্ণক্রমে ভুক্তিগুলো দেয়া হয়েছে। ভুক্তিগুলোর বর্ণনা সুস্পষ্ট করতে চিত্র ও মানচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে । শব্দকোষে ক্রস রেফারেন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারবিধি। এ বইটিতে ক্রস রেফারেন্স বুঝাতে ২... চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। শব্দকোষ তখনই সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য হয় যদি সংশোধিত ও সংযোজিত তথ্য দিয়ে নিয়মিত এর নতুন সংস্করণ প্রকাশ করা যায়। ব্যয়বহুল হলেও নিয়মিত এর নতুন সংস্করণ প্রকাশে প্রকাশক দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ব্যবহারকারীগণ যদি অনুগ্রহ করে শব্দ সংযোজন, সংশোধনে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন, কৃতার্থ হবো । একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শব্দকোষ লেখার কাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারদর্শী ব্যক্তিদের সম্মিলন আবশ্যক। এতে প্রচুর অর্থ ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা প্রয়োজন। আমার পক্ষে এটি সম্ভব হয়নি। যতোদূর সম্ভব ঘনিষ্টজনদের সহায়তা নিয়ে কাজটি শেষ করেছি। আশা করি ভবিষ্যতে বৃহৎ পরিসরে কেউ হয়তো এ বিষয়ে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শব্দকোষ আমাদের উপহার দিবেন। ব্যবহারকারীর কোনো উপকারে লাগলে আমাদের সকলের শ্রম সার্থক হবে।