"সোজা বানান সরস লেখা” বইয়ের ভূমিকা: ছােটদের জনপ্রিয় পত্রিকা কিশাের জ্ঞান-বিজ্ঞানের পাতায় ‘সােজা বানান সরস লেখা’ নামে একটি বিভাগ চালাতে গিয়েই (শ্রীমতী মায়া মজুমদারের সঙ্গে) এই ছােট্ট বইটি লেখার কথা মাথায় আসে। প্রবন্ধ-রচনা প্রতিযােগিতায় ছােটরা নানারকম ছােটবড় প্রবন্ধ লিখে পাঠায়। সেগুলাে পড়ে ছােটদের চিন্তাশক্তির উন্মেষ দেখে যেমন অবাক হয়েছি, তেমনি অবাক হয়েছি যখন তারা ‘ভুল’ বানান লিখতে ‘ভুল’ লিখেছে। এইসব ‘হাস্যস্কর’ ‘ভুল’ বানান শুধরে একটু সাজিয়ে লিখলেই প্রতিটি রচনাই প্রশংসা পাবার যােগ্য। প্রতিটি বিদ্যালয়েই অবশ্যপাঠ্য হিসেবে ব্যাকরণ ও রচনা বই পড়ানাে সত্ত্বেও এ ধরনের ভুল কেন হয় এ নিয়ে অনেক ভেবেছি। কোনাে সহজ সমাধান সূত্র অবশ্য খুঁজে পাইনি, তবে বেশি ভুল ছােটরা কোথায় করে এবং কেন করে তার কারণ জানার চেষ্টা করেছি। এবং কী ভাবে সেই সব ভুল এড়ানাে যায় তারই চেষ্টা করেছি এই বইতে। বানান নিয়ে বিতর্ক, লিপির সরলীকরণের প্রস্তাব নিয়ে আলােচনা চলছে অনেকদিন ধরেই। এবং ভাষাচর্চার সঙ্গে তা চলবেও। কিন্তু বানান প্রসঙ্গে সমতা বিধানের একটা নীতিও নির্ধারিত হওয়া দরকার। বানান সম্পর্কে বিভিন্ন সুপারিশগুলাের পরিপ্রেক্ষিতে ‘সােজা বানান সরস লেখা’ বইটি ছােটদের জন্য প্রকাশিত হল। ছােটদের তাে বটেই, বাংলা ভাষার প্রথম পাঠে আগ্রহী যে কোনাে শিক্ষার্থীর পক্ষেই বইটি উপযােগী হবে বলে বিশ্বাস করি। সংস্কার ও সমতা বিধানের যে সব রীতিনীতির কথা এখানে বলা হয়েছে সে সম্পর্কে যুক্তিগ্রাহ্য সকলেরই প্রস্তাব আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করব। এবং প্রস্তাব বা অভিমত স্বাভাবিক কারণে আমি আশাও করব। কারণ পাড়ভাঙা গতিশীল নদীর মতােই ভাষাও প্রচলিত প্রথা, সংস্কার ও অভ্যাস ভেঙে নতুন পথের সন্ধান করে দেয়।
জন্ম : ১৯৩৬ সাল। ভবানীপুর, দক্ষিন কলকাতা। শিক্ষা : সেন্ট লরেন্স স্কুল, কলকাতা, সেন্ট জনস সি.এম.এস.স্কুল, কৃষ্ণনগর। কৃষ্ণনগর গভঃ কলেজ ও প্রেসিডেন্সি কলেজ। কর্মজীবন : উত্তরপাড়া প্যারীমোহন কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে। এরপর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যাভবনে কাটে ছ’বছর। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বত্রিশ বছর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপনা করেছেন। একবছর বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রার ছিলেন এবং এশিয়াটিক সোসাইটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অধ্যাপক হিসেবে গবেষণা-পরিচালনা করেন। বেশ কয়েকবার রবীন্দ্র সাহিত্য সম্বন্ধে বক্তৃতার জন্যে আমেরিকায় নিমন্ত্রিত হ’য়ে গেছেন। জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং ফেলো ও নিখিল ভারতবঙ্গসাহিত্য সম্মেলনের (দক্ষিণ কলকাতা শাখা) সভাপতি ছিলেন। পুরস্কার : ধুর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৯), তারাশঙ্কর স্মৃতি পদক (১৯৯০), নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার (২০০২)। টেগোর রিসার্চ ইন্সটিটিউট থেকে রবীন্দ্র-তত্ত্বাচার্য উপাধি লাভ (২০০৫)। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : বাংলা কাব্যে পাশ্চাত্য প্ৰভাব, সাহিত্য সমালোচনার রূপ-রীতি, করতলে নীলকান্তমণি, রবীন্দ্রনাথ : সৃষ্টির উজ্জ্বল স্রোতে, গল্প পাঠকের ডায়ারি ইত্যাদি।