মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ৭ই নভেম্বর অভ্যুত্থানে কর্নেল তাহে‘ ফ্ল্যাপে লিখা কথা তাহের হত্যকান্ডের ওপর হাইকোর্টের রায় বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের সামনে এমন সব সত্যকে উন্মোচিত করেছে, যা গত তিন যুগের অধিক সময় ধরে অন্ধকারে ঢাকা ছিল। সেইসব সত্য জেনে তারা বিস্মিত হচ্ছে। সাহসেও উদ্দীপ্ত হচ্ছে। অসাম্য, বঞ্চনা ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে দুনিয়া্ব্যাপী যে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে, তার দোলায় বাংলাদেশও আন্দোলিত হবে। মহান মুক্তিযদ্ধে তাহেরের বীরত্বপূর্ন অবদান, তাহেরের বিপ্লবী শিক্ষা, সাহস ও আত্নদান থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুতন প্রজন্ম সে আন্দোলনে সামিল হবে। বদলে দেবে বাংলাদেশকে । বাস্তবায়ন করবে সোনার বাংলা গড়বার তাহেরের স্বপ্ন। ভূমিকা বাঙালি জাতির ইতিহাসে দুটি যুগান্তকারী ঘটনা আছে। একটি মুক্তিযুদ্ধ , অপরটি ৭ নভেম্বর সিপাহী অভ্যুত্থান। সিপাহী অভ্যুত্থান কোনো তাৎক্ষণিক বিদ্রোহ ছিল না। যেমন ছিল না মুক্তিযুদ্ধও। ধারাবাহিক সংগ্রামের পথ ধরে বাঙালি জাতীয়তাবাদের পুরোধা আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। অর্জিত হয় বাঙালি জাতির স্বাধীন আভাসভূমি বাংলাদেশ। ৭ নভেম্বর অভ্যুত্থানের নায়ক কর্ণেল আবু তাহেরের ফাঁসির মধ্য দিয়ে বিশ্বাসঘাতক ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি কাছে ওই বিপ্লবী প্রচেষ্টার আপাত পরাজয় ঘটলেও নতুন প্রজন্মের কাছে তাহেরের আদর্শ আজও প্রাসঙ্গিক। এই অভ্যূত্থানের কর্ণেল আবু তাহেরের সঙ্গে আমার ওতপ্রোত অংশগ্রহনের কারণে অভ্যূত্থানের পটভূমি , তার প্রস্তুতির ইতিহাস এবং পরিণতি সম্পর্কে লেখার তাগিদ আমাকে দিয়েছে অনেকে। তারই অংশ হিসেবে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর আগ্রহে তাঁর সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘সময়’ পত্রিকায় নভেম্বর ১৯৯৪ থেকে মে ১৯৯৫ পর্যন্ত সময়ে ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার হিসেবে এই লেখাটি প্রকাশিত হয়। লেখায় ৭ নভেম্বর অভ্যূত্থানের পটভূমি হিসেবে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের কথা তারও পটভূমি। আলতাফ পারভেজ দিনের পর দিন অনুলিখন, আমার সম্পাদনা নিয়ে যাওয়া, প্রুফ দেখা, ইত্যাদিতে কঠোর পরিশ্রম করেন। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও আলতাফ পারভেজ কে গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। ২০১০ সালের ২৯ শে আগস্ট তারিখে চট্রগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সমাজ সমীক্ষা সংঘের উদ্যোগে কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তম স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়। তাহেরের স্বপ্ন শিরোনামে ঐ বক্তৃতা আমি উপস্থাপন করি। পরে ধারাবাহিকভাবে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারির বইমেলায় পুস্তক আকারে তাহেরের স্বপ্ন প্রকাশ করে মাওলা ব্রাদার্স। তাহেরের স্বপ্ন শিরোনামের স্মারক বক্তৃতায় আমি আমার ধারাবাহিক সাক্ষাৎকারে বলা বেশ কিছু বিষয় যুক্ত করি। বই আকারে প্রকাশের সময় মূল লেখায় সম্পাদনা করেছি। প্রতি অধ্যায়ের শিরোনামেও কিছু পরিবর্তন এসেছে। একটি নতুন অধ্যায় তাহেরের বিচার অবৈধ । তাঁকে ঠান্ডা মাথায় হত্য করেছেন জিয়া- হাইকোর্টের রায় যুক্ত করেছি। তাহের হত্যার বিচার চেয়ে আমাদের পঁয়ত্রিশ বছরের সংগ্রামের আইনি বিজয়ের বিবরণ দেয়া আছে সেখানে। পরিশিষ্টে যুক্ত হয়েছে আহত অবস্থায় হাতপাতাল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে কর্নেল আবু তাহেরের লেখা চিঠি ১০, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে উদ্দেশ্য করে লেখা তাঁর পদত্যাগপত্র১২ এবং আমার পুত্র সানজীবের লেখা আমাদের রিট মামলায় আইনি যুক্তিগুলি। ১২ আগের পুস্তকের মতো এবারেও খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে বইটি প্রকাশের ব্যবস্থা করে আগামীর স্বত্বাধিকারী জনাব ওসমান গনি আমাকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন।
Title
মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ৭ই নভেম্বর অভ্যুত্থানে কর্নেল তাহের
ড. মাে. আনােয়ার হােসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে ৩৩ বছর শিক্ষকতা করছেন। মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার আবাল্য-লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবনে ১৯৬৭, ১৯৬৯ এবং ১৯৭১-এ মােট তিন বার লেখাপড়া ছেড়ে সরাসরি বিপ্লবী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে যােগ দিয়েছিলেন। তাঁর ভ্রাতা কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তম-এর নেতৃত্বে সাত ভাই দুই বােনের সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও বীরত্বগাথা কিংবদন্তিতুল্য। কর্নেল তাহের ছাড়াও তার আরও তিন ভাই মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বসূচক পদক লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহী অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে কারাভ্যভূরে গােপন আদালতে জেনারেল জিয়া তার জীবনদাতা তাহেরকে বিচারের নামে প্রহসন করে ফাসি দিয়ে হত্যা করেন। সে মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ড় আনােয়ার প্রায় পাঁচ বছর কারাগারে অন্তরীণ থাকেন। নব্বই-এর গণ-অভ্যুত্থানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সামসুন্নাহার হলে ছাত্রী লাঞ্ছনার ঘটনায় তিনি বিপন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়ান ও পুলিশ কর্তৃক আহত হয়ে সাড়ে তিন মাস শয্যাশায়ী থাকেন। ড. আনােয়ার হােসেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একজন জীববিজ্ঞানী। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া ও ভারতের খ্যাতিসম্পন্ন জীববিজ্ঞানীদের সাথে তিনি নানা গবেষণায় অংশ নিয়েছেন। তার গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার আমেরিকায় প্যাটেন্ট হয়েছে। তিনি ১৯৮৫ সালে জীববিজ্ঞানে শ্রেষ্ঠ প্রকাশনার জন্য ইউজিসি পুরস্কার এবং ১৯৯৩ সালে জীববিজ্ঞান গবেষণায় অবদানের জন্য বিচারপতি ইব্রাহীম স্মারক স্বর্ণপদক লাভ করেন। ২০ আগস্ট ২০০৭-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনা সদস্য কর্তৃক ছাত্র লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের পর ২৩ আগস্ট যৌথবাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করে। বার দিনের রিমান্ডসহ মােট পাঁচ মাস কারাবাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-ছাত্রদের এক অভূতপূর্ব শান্তিপূর্ণ ও একই সাথে প্রচণ্ড আন্দোলনের মুখে ২২ জানুয়ারি ২০০৮ সকালে দণ্ড ও বিকেলে তা মওকুফের নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে মুক্তি লাভ করে তিনি পুনরায় শিক্ষকতা জীবনে ফিরে এসেছেন। ড. আনােয়ার হােসেন বর্তমানে জীববিজ্ঞান অনুষদের নির্বাচিত ডিন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক।