রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যসম্ভার বাংলাভাষার হীরকখনি। সাহিত্যের প্রায় সকল শাখাতেই অবাধে বিচরণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সৃষ্টিশীল রচনায় সংযুক্ত ছিলেন। তাঁর রচিত সাহিত্য নিয়ে পাঠক-গবেষকদের উৎসাহ আজও অব্যাহত। বাংলা ভূখণ্ডে কোথাও না কোথাও কোনো না কোনোভাবে সদা রবীন্দ্র-নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। বিদেশের মাটিতে বাংলা ভাষাভাষি এবং বিদেশি বাংলা চর্চাকারীরাও নিয়মিত রবীন্দ্রনাটক মঞ্চায়ন করছেন। তাঁর সাহিত্য পড়ছেন। গবেষণা করছেন। রবীন্দ্র-রচিত মৌলিক নাটকের বাইরে সময়-কাল ভেদে নাট্যচর্চাকারীগণ তাঁর গল্প- উপন্যাস-কবিতা-প্রবন্ধ-চিঠিপত্র নিয়ে নাট্যরূপ দিয়েছেন অসংখ্য। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে সৈয়দ শামসুল হক, মমতাজউদদীন আহমদ, আবদুলাহ আল-মামুন, নাজমা জেসমিন চৌধুরী, আবুল মোমেন থেকে শুরু করে বর্তমানের নাট্যচর্চাবিদেরা নিয়মিতই রবীন্দ্রসৃষ্টির ভাণ্ডার থেকে নির্বাচিত রচনা নিয়ে নাট্যরূপ দিয়েছেন, দিচ্ছেন। সম্পাদিত গ্রন্থমালাটি মূলত সেই সব প্রয়াসের চয়নিকা। বাংলাদেশ থিয়েটার আর্কাইভস'র জন্য বিভিন্ন নাট্যতথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে রবীন্দ্রসৃষ্ট রচনার নাট্যরূপকৃত এই পাণ্ডুলিপিগুলো আমার সংগ্রহে আসে। আমি আরও আগ্রহী হই এবং পরিকল্পিত ভাবে প্রায় সাত বছরের ক্রমে ছিয়ানব্বইটি নাট্যরূপ এবং রবীন্দ্রবিষয়বস্তু অবলম্বনে রচিত পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করেছিলাম। বর্তমানে ছ'খণ্ডে তা প্রকাশিত হল।
নাট্যশিল্পের অনিত্যতা সত্ত্বেও নাট্যমঞ্চায়ন রেখে যায় নানা স্মৃতিচিহ্ন; স্মারক-প্রকাশনা, মুদ্রিত সামগ্রী, আলােকচিত্র, লিখিত ভাষ্য ইত্যাদি কত কিছু।। নাটকের এবং নাট্যসংস্কৃতির পরিচয় পেতে এইসব তথ্য-উপাত্তের গুরুত্ব অপরিসীম, অথচ নাটক ঘিরে উৎপাদিত ও প্রকাশিত বিবিধ তথ্যসমূহ সংরক্ষণে। আমরা চরমভাবে উদাসীন ব্যক্তিগত, সাংগঠনিক ও জাতীয়ভাবে প্রতিফলিত এমনি ঔদাসিন্য ও অবহেলার শিকার হয়েছে নাট্যতথ্যবাহী উপকরণাদি।। এই অভাব মােচনে ভালােবাসা ও দায়বদ্ধতা থেকে এ নাটকের তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উপস্থাপনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন বাবুল বিশ্বাস । ১৯৮৬ সাল থেকে নিরলসভাবে নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত। এই কাজের ফসল ‘বাংলাদেশ থিয়েটার আর্কাইভস'। তাঁর ভাণ্ডারের বিভিন্ন সম্পদ নিয়ে ইতিমধ্যে করেছেন ৪১টি প্রদর্শনী। বর্তমান সংকলন-গ্রন্থ সেই শ্রমসাধ্য কাজেরই আরেক প্রকাশ। তিনি থিয়েটার' পত্রিকার সংযুক্ত সম্পাদক, ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব থিয়েটার। (ইউনেস্কো)-এর দ্বিবার্ষিক প্রকাশনা ‘ওয়াল্ড অব থিয়েটার'-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। বর্তমানে তিনি ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট-এর পাবলিকেশন্স কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। ইতােমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গ্রন্থ ‘আর্ট অব বাংলাদেশ থ্র হানড্রেড থিয়েটার পােস্টার্স। নাটক লিখেছেন হনন, পােড়ামাটি, ঠিকানা। কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন জাকারিয়া স্মৃতিপদক, ফৌজিয়া ইয়াসমিন শিবলী পদক ও মহাকাল সম্মাননা।