"স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: জাতির গৌরবময় ইতিহাস বীরত্ব ও শৌর্য বীর্যের ইতিহাস জনগণের মধ্যে জাগ্রত করে দেশপ্রেম। পাশাপাশি জাতীয় ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে একজন নাগরিক ইতিহাসের গৌরবােজ্জ্বল অধ্যায় হতে উদ্দীপনা গ্রহণ এবং ইতিহাসের ভুলভ্রান্তির মধ্য হতে সঠিক পথের দিক নির্দেশ গ্রহণ করে থাকে। অথচ । স্বাধীনতার ৪৩ বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠক্রমে গুরুত্ব পায়নি। বিলম্বে হলেও একমাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস পত্রটি বাধ্যতামূলক করেছে। মােট ১০টি অধ্যায়ে বাংলাদেশ, বাঙালি জনগােষ্ঠির পরিচয়, ভূ-প্রকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও প্রভাব, প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা থেকে শুরু করে অখণ্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াস, উপমহাদেশ বিভক্তি (১৯৪৭) আলােচনা করা হয়েছে। আলােচনায় ভাষা আন্দোলন ও বাঙালির আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠা, পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের বৈষম্য, আইয়ুব খানের শাসন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ও স্বাধিকার আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, '৭০ এর নির্বাচন বিস্তারিতভাবে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ শিরােনামে পাকবাহিনীর গণহত্যা, নির্যাতন, বাঙালির প্রতিরােধ যুদ্ধ, বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম, মুক্তিযুদ্ধে প্রচার মাধ্যম ও গণমানুষের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। স্বাধীনতা বিরােধী দল ও সংগঠনগুলাের ভূমিকা, ভারতসহ বিভিন্ন বৃহৎশক্তির ভূমিকা, যৌথ বাহিনী গঠন ও বিজয় এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের মূল্যায়ন রয়েছে। সবশেষে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকালের বিস্তারিত মূল্যায়ন। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি, হালনাগাদ তথ্য উপাত্ত ব্যবহার এবং পাঠক্রমের শতভাগ অনুসরণ করে বইটি লেখা। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। উপযােগী বইটি সাধারণ পাঠককে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্যের সন্ধান দিবে।
স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় ১ম শ্রেণিতে ২য় স্থান লাভ করেন। বিসিএস (প্রশাসন) সার্ভিসে নির্বাচিত হয়ে তাতে যোগদান না করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে ১৯৮৭ সালে প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৯০ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। বর্তমানে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক, কলা অনুষদের ডিন এবং ভাষা শহীদ বরকত জাদুঘর ও সংগ্রহশালার পরিচালক। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ, স্থানীয় ইতিহাস এবং বাংলাদেশের সঙ্গে বহির্বিশ্বের সম্পর্ক তাঁর গবেষণা ও লেখালেখির বিষয়। তাঁর লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থ সংখ্যা ৩১। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : মুক্তিযুদ্ধ গ্রন্থপঞ্জি, ভাবনায় মুক্তিযুদ্ধ চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসচর্চা, মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস (৩ খণ্ড), সভ্যতার ইতিহাস ১৯০৫-১৯৭১, আফ্রিকার ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর মানবাধিকার দর্শন, ভাষা আন্দোলনের আঞ্চলিক ইতিহাস, বীরাঙ্গনা বীরমাতাদের জবানীতে একাত্তরের ভয়াল স্মৃতি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও মুসলিম বিশ্ব। যৌথভাবে লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থ মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা ১৯৭১, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আইনজীবী, আগরতলা মামলার অনুচ্চারিত ইতিহাস ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক, আফ্রিকার ইতিহাস, বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্ব। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে লেখকের ৫০টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য রোটারী ইন্টারন্যাশনাল সম্মাননা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য অধ্যাপক ড. আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৪’ লাভ করেন।