ফ্ল্যাপে লিখা কথা ভূষণপুর একটি কল্পিত গ্রামের নাম, অনেক দিক দিয়েই বাংলাদেশের অন্যান্য গ্রামের মতই। সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির ভিত্তিতে দশ ভাগের আগে ভূষণপুরে ছির সত্যিকার অর্থে ‘ছায়া সুনিবিড়, শান্তির নীড়’ যেখানে সুখ-দুঃখে মেশঅনো জীবনযাপন করেছে সেখানকার নর-নারী বংশপরম্পরায়। দেশ ভাগের সময় সাম্প্রদায়িকতার বিষ এবং তার বহুপর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক সেনাদের নৃশংসতা ভূষণপুরের হিন্দু-মুসলমান অধিবাসীদের জীবন করেছে বিপন্ন এবং বসতি বিপর্যস্ত। এই সাব উন্মাতাল ঘটনা ভূষণপুরে শান্ত জীবনের পরিবেশে নিয়ে আসে বিশাল পরিবর্তন যার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে সেখানকার সকল শ্রেণীর মানুষ। হিন্দুদের মধ্যে অনেকেই চলে যায় ভারতে, একবার দেশ ভাগের পর, দ্বিতীয়বার একাত্তরের ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে রক্ষা পেতে। শিক্ষিত, সচ্ছল মুসলমান পরিবারের আদর্শবান ছেলেরা চলে যায় শহরে গ্রামোন্নয়নের আশা ত্যাগ করে। ভূষণপুরকে স্বনির্ভর করার স্বপ্ন যারা দেখেছিল তাদেরকে হতাশা নিয়েই থাকতে হয় অথবা চলে যেতে হয় পূর্বপুরুষেল ভিটে-মাটি ছেড়ে। প্রতিক্রিয়াশীল চক্র ক্ষমতা গ্রহণ করে গ্রামের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুরু করে যার ফলশ্রুতিতে আসে অস্থিরতা, সহিংসতা এবং অমান্তি। এরই মধ্যে ভূষণপুরের সাবেক জমিদার নন্দন শুরু করে এক সামাজিক-আধ্যাত্মিক আন্দোলন যেখানে সকল ধর্মের সমন্বয়ের মাধ্যমে খোঁজা হয় সহযোগিতা আর সমর্মিতার ভিত্তিতে জীবনযাপনের উপায়। ‘সবার বাসরে ভালো, নইলে মনের কালো ঘুচবে নারে’ এই গান গেয়ে সংগঠনের সদস্যরা আহ্বান জানায় সংস্কার মুক্ত শান্তিকামী গ্রামবাসীদের এই বাণী শুধু ভূষণপুর গ্রামের না তার মতো আরো অনেক গ্রামের মুক্তির এবং প্রগতির প্রেরণা হয়ে দেখা দিতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়েই শেষ হয়েছে অতীত এবং বর্তমানকে ধারণ করে লেখা এই উপন্যাস।
Hasnat Abdul Hye জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায় । পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশোর, ফরিদপুর শহরে। কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা । ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে ছোটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছোটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালোচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল ।বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্ৰবাস জীবনে। প্ৰকাশিত ছোটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্ৰমণ-কাহিনী ছয় । সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। তাঁর লেখা উপন্যাস সুলতান ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।