আবুল মনসুর আহমদ বাংলাদেশের সাহিত্যের অনন্য শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ-গল্পকার। শুধু বাংলাদেশের নয়, বাংলা সাহিত্যেরও একজন শ্রেষ্ঠ ব্যঙ্গ-গল্পকার তিনি। ব্যঙ্গাত্মক গল্পের কদর পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের সাহিত্যেই রয়েছে। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, “ব্যঙ্গাত্মক গল্প প্রধানত সামাজিক, রাজনীতিক ও যৌন-সমস্যাকে আশ্রয় করে ক্ষুরধার বক্র হাসিতে আত্মপ্রকাশ করে। ভ্যারের 'কাঁদিদ' (Candide) এই পর্যায়ে পৃথিবীর সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ গল্পের অন্যতম। মার্ক টোয়াইনেরও অনেকগুলি ভালো গল্প রয়েছে; চেকভের 'বহুরূপী' (Chamelon) গল্পে জেনারেলের ভাইয়ের কুকুরকে নিয়ে পুলিশের কর্তব্যবোধের উপর তীব্র চাবুক চালানো হয়েছে । ও হেন্ট্রিও এই প্রসঙ্গে স্মর্তব্য, তাঁর 'পুলিশ এবং ধর্মগীতি' (The Cop and the Anthem) অথবা 'অদৃষ্টের পথ' (Roads of Destiny) ব্যঙ্গ গল্পের ভালো নিদর্শন।” (সাহিত্যে ছোটগল্প তৃ-মু, কলকাতা, ১৪১২; পৃ. ২১৩) নারায়ণ বাবু পাশ্চাত্য সমাজের ক্ষেত্রে 'যৌন-সমস্যাকে আশ্রয় করে' বলেছেন, সে ক্ষেত্রে এ দেশীয় সমাজে 'ধর্মীয় সমস্যাকে আশ্রয় করে বলাই বাস্তবানুগ। বাংলা মাহিত্যে এক সময় সুরেন্দ্রনাথ সড়য়ভার কিছু রাজ্যভার গল্প লিখেছিলেন।
গবেষক ড. আমিন [প্রফেসর ড. মােহাম্মদ নুরুল আমিন, সভাপতি (২০১৩-২০১৬) বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) মূলত কবি ও প্রাবন্ধিক। প্রথম প্রকাশিত লেখা বাঙালির ঐতিহ্য শীর্ষক প্রবন্ধ চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল-বার্ষিকী ‘কিশাের’ (১৯৭১৭২)-এ ছাপা হয়; প্রথম প্রকাশিত কবিতা কৃষক আমি’ ছাপা হয় ১৯৭৩-এ স্থানীয় একটি দৈনিকে। সেই থেকে অব্যাহত গতিতে লেখালেখি, শিক্ষকতা ও গবেষণাকর্ম চালিয়ে আসছেন। সাঁইত্রিশ বছরের অধিক শিক্ষকতা জীবনে কবিতা প্রবন্ধ গবেষণা ও সম্পাদনা মিলিয়ে এ পর্যন্ত তার বইয়ের সংখ্যা চব্বিশ। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি ও এশিয়াটিক সােসাইটিসহ দেশের অন্যান্য উল্লেখযােগ্য প্রকাশনা সংস্থা থেকে তাঁর বইসমূহ প্রকাশিত হয়। বাংলা ভাষার একজন নিবেদিত প্রাণ কবি প্রাবন্ধিক ও একনিষ্ঠ গবেষক হিসেবে তিনি লেখার ক্ষেত্রে সংখ্যার চেয়ে গুণগত মানের প্রতিই অধিক যত্নশীল । লেখায় যেমন ইতিহাসনিষ্ঠ ও শুদ্ধতাবাদী, তেমনি জীবন-যাপনেও শেকড়-সন্ধানী ও যৌক্তিক মানবতাবাদী। জন্ম ৮ নভেম্বর, যদিও স্কুল সার্টিফিকেট অনুযায়ী ১৩ আগস্ট ১৯৫৬। চট্টগ্রামের তৎকালীন সাতকানিয়া থানার চুনতি গ্রামে। বর্তমানে গ্রামের বাড়ি লােহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের সুফিনগর। সুফিনগর’ নামটি ১৯৭৩ সালে তাঁরই দেওয়া; সেই প্রত্যন্ত গ্রামে তরুণ বয়সে গড়ে তুলেছিলেন ক্লাব, দাতব্য চিকিৎসালয়, পাঠাগার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- যার মধ্যে বর্তমানে সুফিনগরস্থ ‘চুনতি শাহ সুফি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উল্লেখযােগ্য। মা হাফেজা খাতুন ১৯৯২-তে এবং বাবা আলহাজ্ব আবুল ফয়েজ ২০০৮-এ প্রয়াত হন। তাঁদের নামে সুফিনগরে একটি এতিমখানা ও শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলেন। ১৯৭৯ সালে ‘অমর একুশে স্মরণে বাংলাদেশ পরিষদ সাহিত্য পুরস্কার, ২০০০ সালে ‘শহীদ নূতনচন্দ্র সিংহ স্মৃতি সম্মাননা’, ২০১০ সালে ‘সাতকানিয়া-লােহাগাড়া সাংবাদিক ফোরাম সম্মাননা’, ২০১৫ সালে ‘আবুল মনসুর আহমদ গবেষণা পুরস্কার’, ২০১৭ সালে ‘ফিদেল কেস্ত্রো এ্যাওয়ার্ড’ এবং ২০১৮ মার্চে ‘প্রিন্সিপ্যাল শাফায়াত আহমাদ সিদ্দিকী গুণীজন সম্মাননা লাভ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ও তাঁর স্ত্রী শিরিনের এক মেয়ে দুই ছেলে।