"তাফসীর ইবনে কাছীর-৫ম খণ্ড" বইটির ভুমিকা থেকে নেয়াঃ একদিন আল্লাহ তায়ালা আকাশের বাসিন্দাদের সামনে যমীনে খলিফা পাঠাবার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন। তারা অনেকেই সেদিন এ নতুন প্রজাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে এমনটি না করার জন্যে আল্লাহর কাছে আরযি পেশ করলাে, কিন্তু আজ হাজার কোটি বছর পর যখন তারা তাদের চোখের সামনেই সেই যমীনের খলিফাকে আকাশের চৌহদ্দিতে আনাগােনা করতে দেখলাে, তখন তারা হতচকিত হয়ে গেলাে, কিন্তু এ কি! এবার তাে দেখি তার মানযিল আকাশের সীমানা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়, মানযিল তার আরাে ওপরে সেদরাতুল মােনতাহা- স্বয়ং আরশের দোরগােড়ায়। আল্লাহ তায়ালার বাণী, অবশ্যই আমি জানি, যা তােমরা জানাে না’- এর অন্তর্নিহিত রহস্য তারা আজ ঠিকমতােই বুঝে নিলাে। এ রাতে লক্ষ কোটি ফেরেশতা যখন আকাশের সুবিশাল চত্বরে কুল মাখলুকাতের খালেক ও তার অনুপম এক মাখলুকের মহামিলন ক্ষণটির অবলােকন প্রক্রিয়া শেষ করলাে- তখন এ যমীনে বাংলাভাষায় কথা বলে এমন ৩০ কোটি মানুষের জন্যে আমরা স্রষ্টা ও সৃষ্টির সেতুবন্ধন কোরআনুল কারীমের একটি শ্রেষ্ঠ তাফসীরের বাংলা অনুবাদ ছাপার সূচনা করলাম মাত্র। হে আমাদের রব, হে আমাদের মালিক! তুমি আমাদের হিসেবের নিক্তিতে নেকীর বিপুল ঘাটতিটাকে এই তাফসীরের বরকত দিয়ে পূর্ণ করে দিয়াে। মীযানের নিখুঁত পরিমাপে তােমার সাথে সম্পাদিত চুক্তির এটুকু হেরফের তুমি মেহেরবানী করে মিলিয়ে দেখাে না।
আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. এর জন্ম ১৩০১ খ্রিস্টাব্দে বসরার (বর্তমান সিরিয়া) মামলুক সালতানাতে। তার পুরো নাম ইসমাঈল ইবন উমর ইবন কাসীর ইবন দূ ইবন কাসীর ইবন দিরা আল-কুরায়শী হলেও তিনি ইবনে কাছীর নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি কুরায়েশ বংশের বনী হাসালা গোত্রের সন্তান। তার জন্মস্থান এবং জন্ম তারিখ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তার শিক্ষাজীবন এবং শৈশব নিয়েও খুব বেশি তথ্য জানা যায় না। তবে মামলুক সালতানাতেই তিনি বড় হয়েছেন, এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদগণ নিশ্চিত। কৈশোরে তিনি ফিরিঙ্গীদের যুদ্ধ, ক্রুসেড, তাতারদের আক্রমণ, শাসকদের অন্তর্কোন্দল, বিদ্রোহ করে ক্ষুদ্র রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস, দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানির মতো যাবতীয় দুর্যোগ আর দুর্দশা দেখে দেখে বড় হয়েছেন। কর্মজীবনে ইবনে কাছীর রহ. উন্মুসসা’ ওয়াত তানাকুরিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। কুরআন, হাদিস, তাফসির, ইতিহাস, গণিত সহ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তিনি বিচরণ করেন। শায়খ তকী উদ্দী (রহঃ), উস্তাদ হাজরী (রহঃ), ইবনুল কালানসী (রহঃ) প্রমুখ প্রবাদত্যুল্য শিক্ষকের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। পরবর্তীতে নিজের জ্ঞানের আলোয় তিনি আলোকিত করেছিলেন মধ্যযুগীয় মুসলিম জ্ঞানপিপাসুদের। ১৩৭৩ খ্রিস্টাব্দে দামেস্কে তার মৃত্যু হয়। আল্লামা ইব্নে কাছীর রহ. এর বই সমূহ ইসলামি দর্শন, ফিকহ শাস্ত্র, তাফসির ও ইতিহাস নির্ভর। তার রচিত ‘তাফসিরে ইবনে কাছীর’-এর জন্য তিনি বিশ্বজোড়া সমাদৃত। পবিত্র কুরআনের কাছীরগুলোর মাঝে তার এই গ্রন্থটিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য এবং প্রামাণ্য। ১১ খণ্ডে প্রকাশিত ‘তাফসিরে ইবনে কাছীর’, ‘কাসাসুল আম্বিয়া’, ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’, ‘কিতাবুল আহকাম’ সহ বেশ কিছু জ্ঞানগর্ভ বই রয়েছে আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. এর বই সমগ্রতে।