একজন লেখক লিখতে লিখতে প্রজ্ঞার একটি উচ্চতায় পৌঁছালে তখন তাঁর রচনাবলির শ্রেষ্ঠত্ব বিচারের বা বিভাজনের সময় আগে। বুলবুল চৌধুরীও সেই প্রজ্ঞাবান লেখক, বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে যিনি নিজের আসন দখল করে নিয়েছেন স্থীয় প্রতিভায়। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে একেবারে নতুন আদবার সাহিত্যকর্ম নিয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে সক্ষম হন তিনি। নগর ও গ্রামজীবনের পটভূমিতে রচিত তাঁর গল্প-উপন্যাসের চরিত্ররা ধরা দেয় রক্ত-মাংসের জীবন্ত মানুষ হয়ে। জীবনভর তিনি যা লিখেছেন, সেসব রচনার নির্যাস রয়েছে তাঁর এই ‘শ্রেষ্ট রচনা’ সংকলনে। এ-গ্রন্থে সংকলিত বুলবুল চৌধুরীর উপন্যাস ও গল্প ক’টি পাঠে তা পাঠকের উপলদ্ধি হবে। বাংলা সাহিত্যের গতিধারার একটা দুরন্ত স্রোত প্রবহবান তাঁর এসব রচনায়। মানবজীবনের টানাপড়েন, সুখ-দুঃখ, সমস্যা-সম্ভাবনা, আনন্দ-বেদনা, প্রেম ও দ্রোহকে লিপিবদ্ধ করেছেন দক্ষ হাতে। এসব রচনার কাহিনী হৃদয়জাগানিয়া, ভাষা শিল্পোত্তীর্ণ সাবলীল এবং আঙ্গিকে রয়েছে নিজস্বতা। গ্রন্থভুক্ত ‘তিয়াসের লেখন’ উপন্যাসটি সেই সাক্ষ্য বহন করে। লোকজভঙ্গির অন্তরালে গেঁথেছেন জীবনের জটিল শিল্পরস আস্বাদনে আগ্রহী পাঠককে দেবে পরিপূর্ণ তৃপ্তি। স্বকৃত নোমান সূচিপত্র *ভুল-বেভুলের খেলা *মাছের রাত *এক্কা গাড়ী ও লক্ষ্মীছায়ার *কালাকান্দুর ভোর *নান্দিবিনাশ *জোনাকি ও সন্নিকট কেন্দ্র *সংসার *সমূহ অনুভব *সাধু হে আনন্দ পেতে দাও *হেরি নর্টী বিনোদিনী ছবি *তিয়াসের লেখন *টুকা কাহিনী *মাছ *খরা *নিরবধিকাল
কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী ১৯৪৮ সালের ১৬ আগস্ট গাজীপুরের দক্ষিণবাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সত্তর দশকে তার ‘টুকা কাহিনী’ নামক গল্পটি প্রকাশ পাওয়ার পর সবার দৃষ্টি পড়েছিল এই নতুন লেখকের দিকে। শুরুতেই প্রতিশ্র“ত নয়, পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত গল্পকার হিসেবে আবির্ভূত হন। নগরের নানা রেখা-উপরেখা ছুঁয়ে গেলেও গ্রামীণ অভিজ্ঞতায় তার প্রধান অবলম্বন খোলা চোখে প্রবহমান জীবন দেখা। সেই জীবনের ভেতর দিয়ে বুলবুল চৌধরী ঢুকে পড়েছেন মানুষের অন্দর মহলে। প্রাণস্পর্শী দরদ দিয়ে তাদের তিনি বিন্যস্ত করেছেন সাহিত্যে। কথাসাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘কহকামিনী’ নামে উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার। ২০১১ সালে কথাসাহিত্যের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। ২০১৩ সালে ‘এই ঘরে লক্ষ্মী থাকে’ নামক উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংক ও সমকাল সাহিত্য পুরস্কার। তাঁর প্রকাশিত ছোট গল্পগ্রন্থগুলো হলো ‘টুকা কাহিনী’, ‘পরমানুষ’, ‘মাছের রাত’ ও ‘চৈতার বউ গো’। উপন্যাস ‘অপরূপ বিল ঝিল নদী’, ‘কহকামিনী’, ‘তিয়াসের লেখন’, ‘অচিনে আঁচড়ি’, ‘মরম বাখানি’, ‘এই ঘরে লক্ষ্মী থাকে’, ‘ইতু বৌদির ঘর’ এবং ‘দখিনা বাও’। আত্মজৈবনিক দুটি হল ‘আঁকিবুঁকি’ ও ‘অতলের কথকথা’। তাছাড়া ‘গাঁওগেরামের গল্পগাথা’, ‘নেজাম ডাকাতের পালা’, ‘ভালো ভূত আর প্রাচীনগীতিকার গল্প’ নামক কিশোর গ্রন্থের রচয়িতাও তিনি। ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।