ফ্ল্যাপে লিখা কথা জাতির জনকের জীবন ও রাজনীতির প্রতিচ্ছবি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ গ্রন্থে বিম্বিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শৈশব, কৈশোর, তরুণ ও ছাত্রজীবন রাজনীতির সঙ্গে কীভঅবে যুক্ত হয়েছিলেন তার বর্ণনা যেমন এই গ্রন্থে আছে তেমনি মুজিব-নেতৃত্বের বিকাশের ইতিবৃত্ত হতে রয়েছে। তাঁর নেতৃত্বের পটভূমিতে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্তির পারিপার্শ্বিক প্রভাব এই গ্রন্থে লক্ষণীয়ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। ভাষা-আন্দোলনে (১৯৫২) শেখ মুজিবের সম্পৃক্ততা, কারাগারে অন্তরীণ হওয়া তাঁর রাজনৈতিক জীবনের মোড় পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তমনের শেখ মুজিবের গভীর দেশপ্রেম ছিল প্রশ্নাতীত। বাঙালি জাতি ও স্বদেশের চিন্তায় বিভোর শেখ মুজিব তৎকালীন পাকিস্তানের রাজনীতিতে আলোড়ন তোলেন এবং বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন এবং বাঙালি জাতির রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির সনদ ৬-দফা দাবি উত্থাপন করে পাকিস্তানের পাঞ্জাবি সামরিক শাসকদের হৃদয়মন কাঁপিয়ে দেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালি জাতিকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করতে সমর্থ হন এবং ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত জন্য, জাতির জন্য ঐতিহাসিক অবদান রাখেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহান বাঙালি নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবনেতিহাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই গ্রন্থে বিধৃত হয়েছে। এটি একটি বহনযোগ্য তথ্য ভাণ্ডার সমৃদ্ধ গ্রন্থ। বঙ্গবন্ধুর জেল থেকে লেকা চিঠি, হস্তাক্ষর ইত্যাদি এই গ্রন্থের মূল্যবান সংযোজন। গ্রন্থটি পাঠক-চাহিদা পূরণ করবে, সমালোচক ও গবেষকগণও এ থেকে অশেষ উপকৃত হবেন।
মােনায়েম সারকার ১৯৪৫ সালের ৩০ শে মার্চ কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার ফতেহাবাদ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর রাজনীতিতে হাতে খড়ি স্কুল জীবন থেকে । স্কুল ক্যাপটেন হিসাবে তিনি তখন কার ছাত্র আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত পদার্থবিদ্যায় ১৯৬৭ সালে কৃতিত্বের সাথে এম.এস.সি, ডিগ্রি লাভ করার পরও বাম রাজনীতির টানেই তিনি সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মরি জীবন বেছে নেন। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ও বাকশালের রাজনীতিতে উল্লেখযােগ্য অবদান রাখেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যােগদান করেন । বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিতান ও প্রযুক্ত বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও সংস্কৃতি ও সাহিত্যক্ষেত্রেও তার পদচারণা অবারিত। তিনি উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখে থাকেন। তার লেখায় সমসাময়িক চলমান রাজনীতির বিষয়াদি প্রাধান্য পায় । তাঁর রচিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলি হলাে : বাংলাদেশে বিপ্লবী গণতন্ত্রীদের উত্থান অনিবার্য (১৯৮৭), বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র বিকাশে ঐক্য অপরিহার্য (১৯৯১), ইতিহাসের আলােকে বাঙালি জাতীয়তার বিকাশ ও বঙ্গবন্ধু (১৯৯২), জাতীয় বিকাশের মূলস্রোত বনাম তৃতীয় ধারা (১৯৯২), গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠান বামপন্থীদের করণীয় (১৯৯২), বামপন্থীদের সঙ্কট ও বাংলাদেশের রাজনীতি (১৯৯৩), বাংলাদেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (১৯৯৬), বহতা নদীর মত আওয়ামী লীগ (২০০০), ও এক রাজনৈতিক কর্মীর প্রতিচ্ছবি (২০০৩), যুক্তফ্রন্ট থেকে মহাজোট (২০০৭), জাগাে বাঙালি কানঠে সবায় (২০০৭), রাজনীতির চালচিত্র (২০০৮) তার সম্পাদিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলাে হলাে : রক্তমাখা বুক জুড়ে স্বদেশের ছবি (১৯৮২), ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু (১৯৯৪), মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব (১৯৯৫), জাতীয় চার নেতা স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৬), বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস (যৌথভাবে) (১৯৯৭), স্বাধীনতার রজত জয়ন্তী স্মারকগ্রন্থ (১৯৯৭), শেখ মুজিব একটি লাল গােলাপ (১৯৯৮), বাঙালি বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু (২০০০), বাঙালির কণ্ঠ (২০০১), স্বাধীনতা বিরােধী চক্রের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট ।। চুয়ান্নর অভিজ্ঞতা (৫৪-র নির্বাচনের অপ্রকাশিত দলিল), জেগে ওঠার সময়। এখনই (২০০৭), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি (২০০৮),। মােনায়েম সরকারের নির্বাচিত রাজনৈতিক রচনা (২০০৯) ইত্যাদি। বর্তমানে তিনি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ-এর প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক।