"সুখ" বইটির সম্পর্কে কিছু কথাঃ এই বই বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশ্য, অথবা যারা কোনাে বাস্তব সমস্যাকে শুধু আলােচনার বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখে খুশি তাঁদের উদ্দেশে লেখা নয়। গভীর দার্শনিক তত্ত্ব বা পাণ্ডিত্যের পরিচয় এই বইয়ের পরবর্তী পৃষ্ঠাগুলােতে পাওয়া যাবে না। যাকে আমি সাধারণ বুদ্ধি বলে বিশ্বাস করি, তারই প্রেরণা থেকে কয়েকটি মন্তব্যকে একত্র সাজিয়ে দেওয়াই আমার লক্ষ্য এই বই-এ। আমি শুধু এইটুকু দাবি করছি যে, যেসব রেসিপি বা অভিজ্ঞানসমুহ আমি পাঠকদের উদ্দেশে নিবেদন করলাম, তা আমার নিজের অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণের দ্বারা সমর্থিত। এবং আমি নিজে যেখানেই এসব ব্যবস্থা অনুসরণ করেছি, সেখানেই আমি সুফল পেয়েছি। অতএব আমি আশা করি, অগণিত নর-নারীর মধ্যে যারা দুঃখে শুধু পীড়িতই হয়েছেন, দুঃখকে উপভােগ করতে পারেন নি, এই বই পড়ে তারা অনুভব করবেন যে, তাঁদের সমস্যাগুলাে নির্ণেয় হচ্ছে এবং এই বই পড়ে তাঁরা অনুভব করবেন যে, তাঁদের সমস্যাগুলাে নির্ণেয় হচ্ছে এবং যেসব সাজেশন বা ঈস্পিত অভিভাবন দেওয়া হয়েছে তা থেকে তাঁরা প্রতিকারও পেয়ে যেতে পারেন। আমি এই বিশ্বাসে নির্ভর করে এ বই লিখেছি যে, বহু অসুখী লােক সুপরিচালিত প্রয়াসের সাহায্যে সুখী হতে পারবেন। -বার্ট্রান্ড রাসেল
(১৮ মে ১৮৭২ – ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০) ছিলেন একজন ব্রিটিশ দার্শনিক, যুক্তিবিদ, গণিতবিদ, ইতিহাসবেত্তা, সমাজকর্মী, অহিংসাবাদী, এবং সমাজ সমালোচক.যদিও তিনি ইংল্যান্ডেই জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন, তার জন্ম হয়েছিল ওয়েলস এ, এবং সেখানেই তিনি ৯৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। রাসেল ১৯০০ সালের শুরুতে ব্রিটিশদের আদর্শবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব প্রদান করেন। তাকে বিশ্লেষণী দর্শনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিবেচনা করা হয়, এর অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতারা ছিলেন তার শিষ্য ভিটগেনস্টেইন এবং পূর্বসূরি ফ্রেগে এবং তাকে ২০ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম যুক্তিবিদদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রাসেল এবং হোয়াইটহেড একত্রে প্রিন্কিপিয়া ম্যাথমেটিকা নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যাতে তারা গণিতকে যুক্তির ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন। তার দার্শনিক নিবন্ধ "অন ডিনোটিং" দর্শনশাস্ত্রে মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। দুটো গ্রন্থই যুক্তি, গণিত, সেট তত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব এবং দর্শনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত যুদ্ধবিরোধী ব্যক্তিত্ব এবং জাতিসমূহের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যে বিশ্বাস করতেন। তিনি ছিলেন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী। রাসেল তার অহিংস মতবাদ প্রচারের জন্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জেলবন্দী হন, তিনি হিটলারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান, সোভিয়েত টোটালিটারিয়ানিজম এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার অংশগ্রহণের সমালোচনা করেন এবং পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে ছিলেন সর্বদা সোচ্চার। রাসেল ১৯৫০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন, যা ছিল "তার বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ রচনার স্বীকৃতিস্বরূপ যেখানে তিনি মানবতার আদর্শ ও চিন্তার মুক্তিকে ওপরে তুলে ধরেছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধবিরোধীর ভূমিকা নেন, ফলস্বরূপ তাঁকে ছ'মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। সেই সঙ্গে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের অধ্যাপক পদ থেকে বরখাস্ত হন। ১৯৫০ সালে পারমানবিক নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে আন্দোলন সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই কারণে ১৯৬১ সালে তাঁকে আবার কারাদনণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ১৯৭০ সালে বারট্রান্ড রাসেল মৃত্যুবরণ করেন।