"নির্বাচিত সেরা সাত" বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা: ষাটের দশকের উজ্জ্বলতম প্রতিভাসম্মিত কবি নির্মলেন্দু গুণ। স্বভাবকবিত্বের অমিত প্রসাদগুণে তাঁর কবিদৃষ্টি প্রাণিত। প্রেম-কাম ও রাজনীতি তাঁর কবিতার দুই বয়নশিল্প। কামকে নান্দনিক রূপমূর্তি দেয়ার এক ঐতিহ্যিক সত্তা তাঁর কবিমানসে প্রোথিত, সেই সত্তার উৎসারণে কবিতাগুলি মর্মরিত ও শিল্পশাসিত। সেখানে কোনো ভার নেই, নিষ্কলুষ আবেগে কামবাসনা বর্ণিল ও সংরক্তময়, তবে এটাই একমাত্র কাব্যবৈশিষ্ট্য নয়। তাঁর আরেক শক্তিশালী কাব্যসূত্র হচ্ছে রাজনীতি। বাংলাদেশের রাজনীতির তিনি পদাতিক কবি। বিশেষ করে বিপ্লবচেতনাঋদ্ধ সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি, দেশ ও মানুষের মুক্তিবাসনার সংগ্রামকে মুখ্যভাবে রূপান্বিত করায় কবিতায় সঞ্চারিত হয়েছে প্রত্যক্ষতা, কিয়দংশে উগ্রতা এবং সাহস ও পৌরুষ। ওই সংগ্রাম নিছক নাগরিক জীবনছন্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তা সমগ্র জনম-লীকে জড়িয়ে নিয়ে রুক্ষ, দীপ্র ও শক্তিময় হয়ে উঠেছে। এই দুই চেতনা নির্মলেন্দু গুণকে করেছে কখনো আরক্ত, মোহময়, তৃষ্ণার্ত, কখনো বা সর্বাঙ্গীণ মঙ্গলকামনার গভীর জলে স্নানের অনুভূতিতে পরিশুদ্ধ। এতে তাঁর কবিতাগুলি কখনো হয়েছে ছোট ছোট লিরিকে চলচঞ্চল ও গীতময়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়েছে Details-এর চিত্রায়ণে, কথাবয়নের দৈর্ঘ্যে, অবিরল উৎসারণে দীর্ঘকবিতা। প্রতীকী আভাসে কবিতাকে যত না গোপনতা দেন, তারও বেশি দেন উন্মোচনের দৃশ্যমানতা। তাঁর কবিতা তাই জীবন ও কামবাসনার কথকতা ও নান্দনিক উন্মোচন। নির্মলেন্দু গুণ বাংলাদেশের প্রত্ন-আখ্যানে, সংগ্রামশীল দেশজনতার অভিযাত্রায়, যন্ত্রণাবিদ্ধ আত্মতার মুখশ্রীতে লিপ্ত করেন নিজের রোমান্টিক সত্তাকে-প্রেমারতি ও জীবনসংগ্রামের মূল মুখ দেখার গভীর ঈপ্সায়। এই ঈপ্সাবর্ণিলতাই তাঁর কবিস্বভাবের সাহস্পর্শে ও মিথস্ক্রিয়ায় হয়ে উঠেছে এমন এক স্বকীয় ঈর্ষণীয় কাব্যভঙ্গিমা যা একমাত্র প্রতিভাদীপিত সৎ ও মৌলিক কবির ক্ষেত্রেই লক্ষ করা যায়। তাঁর মধ্যে রয়েছে স্বাতীস্বচ্ছ প্রদীপ্তি ও প্রতিশ্রুতি।
জন্ম: জুন ২১, ১৯৪৫, আষাঢ় ৭, ১৩৫২ বঙ্গাব্দ, যিনি নির্মলেন্দু গুণ নামে ব্যাপক পরিচিত,তিনি একজন বাংলাদেশী কবি এবং চিত্রশিল্পী। কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য এবং ভ্রমণকাহিনীও লিখেছেন। তাঁর কবিতায় মূলত নারীপ্রেম, শ্রেণি-সংগ্রাম এবং স্বৈরাচার বিরোধীতা, এ-বিষয়সমূহ প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রেমাংশুর রক্ত চাই প্রকাশিত হবার পর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ-গ্রন্থের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা হুলিয়া কবিতাটি ব্যাপক জরপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করে তানভীর মোকাম্মেল একটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও তাঁর স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো কবিতাটি বাংলাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য। তিনি ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমী , ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন।