ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস চর্চায় মূল আকরিক হিসেবে যেসব মহাগ্রন্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, তার মধ্যে বরাবর শীর্ষে থেকেছে মহাভারত । মহাভারতের সুবিস্তৃত কাহিনির আকর্ষণ শুধু পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যেই সীমায়িত থাকেনি। আপামর জনসাধারণের মধ্যেও এই মহাকাব্যটির দুর্বার আবেদন থেকেছে সুপ্রাচীন সময় থেকে। ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে মহাভারতের ধর্ম, দর্শন, নীতিবোধ। তবু এই গ্রন্থটিকে শুধুমাত্র ধর্মগ্রন্থ হিসেবে গ্রাহ্য করা যায়নি। মহাভারতের সুললিত কাব্যিক আবেদন এবং বিচিত্র জটিল বিন্যাস সমগ্র বিশ্বের বিদগ্ধ পাঠককে বরাবর আকর্ষণ করেছে। গ্রন্থকার অমলেশ ভট্টাচার্য তাঁর অসাধারণ গদ্য ভাষায় মহাভারতের ঘটনাবলি ও বিভিন্ন চরিত্রের বিশ্লেষণ করেছেন। একই সঙ্গে মহাভারতের সময়কালে ভারতীয় সভ্যতার রাজনীতি, সমাজনীতি যুদ্ধ ও সংকটের উৎসমূলও খুঁজে দেখাতে চেয়েছেন, গ্রন্থটি সম্পর্কে বিশিষ্ট এক বুদ্ধিজীবী জানিয়েছেন, 'মহাভারতের পাঠকের কাছে চতুর্বর্গ, বিশেষত ধর্ম বিচার একটি দুর্বোধ্য বিষয়। ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষের উৎকর্ষাপকর্ষ এখানে সুন্দরভাবে ব্যাখাত বর্ণধর্ম, আশ্রম ধর্ম, দেশধর্ম, কুলধর্ম, আপদ্ধর্ম, প্রভৃতির পারস্পরিক সংঘর্ষে প্রকৃত মানবধর্মের স্বরূপটি বুঝিয়া ওঠাও সাধারণের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। গ্রন্থকার বিশেষ নৈপুণ্যের সঙ্গে উহার বিশ্লেষণ, স্বরূপ উদ্ঘাটন এবং পর্যায় নিদের্শ করিয়াছেন'। অমলেশ ভট্টাচার্যের ‘মহাভারতের কথা' গ্রন্থটি বাংলাভাষার সর্বস্তরের পাঠকের কাছে একটি প্রধান গৌরব হিসেবেই স্বীকৃত ও সমাদৃত হবে।