পাখিদের শহর ত্যাগ লামিয়া ঢাকায় থাকে। সে বাবা-মার একমাত্র সন্তান। তার বাবা-মা দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে। সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের বাসার কাছে একটি পাম গাছ ছাড়া আর কোনো গাছ নেই। আশেপাশে শুধু দালান আর দালান। এই পাম গাছে একটি ময়না পাখি থাকে। ময়না পাখিটি কথা বলতে পারে। পাখিটির সাথে লামিয়ার খুব বন্ধুত্ব। তারা প্রায়ই ছাদে বসে গল্প করে । ময়না একদিন লামিয়াকে জানালো শহরের পাখিরা তাদের ছাদে একটি জরুরি সভা করতে চায় । লামিয়া বিনাবাক্যে অনুমতি দিল। পাখিটা লামিয়াকেও থাকার জন্য অনুরোধ করল। লামিয়া রাজি হলো । যথাসময়ে সভা আরম্ভ হলো। শহরের অনেক পাখি আসল। সভায় পাখিদের সমস্যা নিয়ে আলাপ হলো এবং সমস্যাগুলি একটি একটি করে লেখা হলো : ১। শহরে বাগান-গাছপালা না থাকায় পাখিরা গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ২। ফলের গাছ না থাকায় খাদ্যের অভাব হচ্ছে, দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। ৩। শহরের পুকুর-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায়, পাখিদের তৃষ্ণা মেটানোর পানির অভাব দেখা দিয়েছে। ৪। অতিরিক্ত গাড়ি চলাচলের ফলে বাতাস দূষিত হওয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ৫। সারাদিন মাইক এবং বাসের ও গাড়ির হর্ণ বাজানোর ফলে শহরে শব্দ দূরণ হচ্ছে, আমাদের শ্রবণশক্তি কমে যাচ্ছে। পাখিরা সবাই একমত হলো। শহর এখন আর তাদের বসবাসযোগ্য নয়। কাজেই নিজেদের ভালোর কথা চিন্তা করে, অতি সত্ত্বর শহর ত্যাগ করে অন্য কোথাও আশ্রয় নেওয়া উচিত। তারা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিল পরের দিন বিকালে তারা শহর ছেড়ে চলে যাবে। পাখিদের সিদ্ধান্তের কথা শুনে লামিয়ার খুব মন খারাপ হলো। তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ময়না পাখিটিও আগামীকাল বিকেলে তাকে ছেড়ে চলে যাবে। এছাড়া তারা বাঁচবে না। ভেবে ভেবে সারারাত লামিয়ার ঘুম হলো না। সে বিছানায় এপাশ ওপাশ করে রাত কাটিয়ে দিল। সকালে সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল বড় হয়ে সে এ অবস্থার প্রতিকারের জন্য সংগ্রাম করবে। মূলকথা : প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় আমাদের সকলের সচেতন হওয়া উচিত।