বেদনা মরে যায়নি, অসাড়ও হয়ে যায়নি সুতপার। জীবনের দুঃখবোধ মৃত্যুচিন্তা, নিরন্তর কান্না হয়ে আছে সে শুধু নিজের মধ্যেই। অগ্নিগর্ভ বাসনা প্রতিনিয়ত আমন্ত্রণ করেছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠদের একজন হবার। তাই সুতপা তার চারপাশে তুলে দিয়েছে আত্মমগ্নতার অটল দেয়াল। পরিবার সংলগ্নতার বাস্তব জীবনপ্রীতি সর্বদাই তাকে তাড়িত করেছে। সুতপার জীবন আজ বিপন্ন, বিধ্বস্তা, নিঃসঙ্গ। গভীর জীবনবাধ থেকে উৎসারিত রাগ-অভিমান, অনীহা-বিরক্তি তাকে আজ ক্ষত-বিক্ষত করছে প্রতিনিয়ত। সহজ সত্যটি গ্রহণ করার ক্ষমতাটি সে হারিয়ে ফেলল আজ। নিজের জীবনের প্রতিটি আমন্ত্রণপর্ব নিয়ত প্রচ্ছন্ন রেখেছে হৃদয়েই। কখনো তা বহির্জগতের কালের প্রবাহে সে ভাসাতে চায়নি। তবে কেন আজ তার জীবন থেকে পালাতে ইচ্ছে করে? পরাজিত হয়ে যাচ্ছে কী সে আজ নিজের কাছে? যে পরাজয় মানবে না বলে জগতের সব অপমান, পারিবারিক পীড়ন, প্রণয়দহন সবই দু'পায়ে মাড়িয়ে গেছে, তবে আজ কেন তার জীবন থেকে পালাতে ইচ্ছে করবে? কেন এত ক্লান্ত লাগে চারপাশে? এই চাঁদ, সেই ছাদ, মেঘমালা, দক্ষিণের বাতাসের সহস্র স্পন্দন, যা তাকে স্বপ্নের জালে ভাসিয়ে নিয়ে যেত প্রতিনিয়ত সেগুলো আজ আর তাকে আনন্দিত করে না, পারে না কাব্যে, গানে ও প্রণয়ে তা বিন্যস্ত করে শত সুতপার
কথা সাহিত্যিক ড. নাসরীন জেবিন। জন্ম নারায়ণগঞ্জে। পিতা-প্রয়াত হাবিবুর রহমান। মাতা-সাকিনা রহমান। দু’জনই শিক্ষকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে ডিগ্রিধারী বাবা ছিলেন লেখক। তাঁর আদর্শেই কণ্যার বেড়ে ওঠা এবং সাহিত্যের জগতে প্রবেশ। নাসরীন জেবিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। পি.এইচ.ডি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পেশা-শিক্ষকতা, ঢাকা মহানগর মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। পাঠককুলকে অনুপ্রানিত করেছে। তার সাহিত্যের নানামুখী বিস্তার আমাদের চিত্তাকাশে অসীমতার দ্যোতনা এনে দেয়। এদেশের মানুষ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে ঘিরেই তার লেখার জগৎ উন্মোচিত হয়েছে। তার সৃষ্টির সম্ভারে যুক্ত হয়েছে উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা- যা বহু গবেষণা জার্নালে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সমকালের সমসাময়িক সমাজের দ্বন্ধ, সংঘাত, সংকটের সমগ্রতাবোধ, দ্রোহ উন্মোচিত হয়েছে তার সৃষ্টিতে। শুধু কথা সাহিত্যেই তিনি সমৃদ্ধ থাকেননি-নানা ব্যঞ্জনায় গদ্যের অবয়বে প্রবন্ধেও তা প্রকাশ করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থ ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট গল্পে নিম্নবর্গ’, ‘বাংলা ছোটগল্প’, ‘নারী তুমি জয়িতা’, ‘ফিরে এসো সুতপা’, ‘নারীর পৃথিবী নারীর স্বপ্ন’, ‘দিঘিজল ছুঁয়ে যায় সর্বনাশা চিল’, ‘নারী তুমি অর্ধেক আকাশ’, ‘রবীন্দ্র বিচিত্রা’, ‘রূপন্তীর শেষ রাত’, ‘প্রতিবাদী নারী ও সমাজ’, ‘এক উঠোন আকাশ’, ‘অব্যক্ত’, ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন ও উপন্যাস’, ‘বাংলাদেশের উপন্যাস’, ‘ঘাস ফড়িং’, ‘আমি তুমি ও সে’, ‘সাধের পালকে পূর্ণিমার চাঁদ’, ‘প্রজাপতি সুখ’, ‘মোহিনীর জন্য’, ‘টান’, ‘সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ঐতিহ্য ও শিল্পরূপ।’ সাহিত্যে অবদানের জন্য নানা পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। বিশাল বাংলা প্রকাশনি সাহিত্য পুরষ্কার-২০১৬, ২০১৭। সমরেশ বসু সাহিত্য পুরষ্কার-২০২০, রাহাত খান স্মৃতি পদক, বিশ্ব সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সাহিত্য পুরষ্কার, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস সাহিত্য পুরষ্কার।