লেখকের পর্যবেক্ষণশক্তি গভীর। প্রতিনিয়ত তাকে বহুল পাঠের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। রাষ্ট্র, সমাজ, প্রকৃতি, গণমানুষ, সংস্কৃতি তার লেখার উপজীব্য থাকে। শেকড় সন্ধানী শিল্পই আমাদের আলোকিত জীবনের সন্ধান দেয়-নতুন সভ্যতার বীজ বপণ করে। কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন যার সাহিত্য বিপুল বিস্তৃত-জীবন অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। তাঁর কথন শৈলী আমাদের আগামী সভ্যতাকে হাতের মুঠোয় এনে দেয়। বাংলা সাহিত্যে যিনি স্বতন্ত্র ধারার অধিকারী-যা নতুন প্রত্যয়ে জীবন-জগতের প্রতিনিধিত্ব করে-তিনি সাহিত্য জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। সেলিনা হোসেনের সৃষ্ট গ্রন্থগুলো বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। তাঁর লেখায় যেমন আছে বাংলার লোক-পুরানের উজ্জ্বল চরিত্রসমূহ তেমনি প্রতিফলিত হয়েছে সমকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্ব›দ্ব সংকটের সমগ্রতাবোধ। তাঁর সৃষ্টিতেই সন্ধান পেয়েছি ক্ষুধাতুর মানুষের হাহাকার, পূর্ণচন্দ্রের সৌন্দর্য, মুক্তিযুদ্ধে বারুদের গন্ধ, স্বাধীনতার স্বাদ। সেলিনা হোসেনের সৃষ্টির সম্ভার বিশাল। তাঁর উপন্যাসগুলোর ঐতিহ্য গভীর জীবন অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। বাংলা সাহিত্য থেকে সমকালীন সমাজের প্রতিটি উলেখযোগ্য অধ্যায় তাঁর উপন্যাসে উপস্থিত হয়েছে। সাহিত্যের নব যাত্রায় তিনি একাই পাঠককে বিমুগ্ধ করেছেন। ‘সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ঐতিহ্য ও শিল্পরূপ’ আমার নিজস্ব ভাবনায় উন্মোচিত সাহিত্য সম্পদ-যার সাথে আমার দীর্ঘ পরিশ্রম জড়িত।
কথা সাহিত্যিক ড. নাসরীন জেবিন। জন্ম নারায়ণগঞ্জে। পিতা-প্রয়াত হাবিবুর রহমান। মাতা-সাকিনা রহমান। দু’জনই শিক্ষকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে ডিগ্রিধারী বাবা ছিলেন লেখক। তাঁর আদর্শেই কণ্যার বেড়ে ওঠা এবং সাহিত্যের জগতে প্রবেশ। নাসরীন জেবিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। পি.এইচ.ডি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পেশা-শিক্ষকতা, ঢাকা মহানগর মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। পাঠককুলকে অনুপ্রানিত করেছে। তার সাহিত্যের নানামুখী বিস্তার আমাদের চিত্তাকাশে অসীমতার দ্যোতনা এনে দেয়। এদেশের মানুষ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে ঘিরেই তার লেখার জগৎ উন্মোচিত হয়েছে। তার সৃষ্টির সম্ভারে যুক্ত হয়েছে উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা- যা বহু গবেষণা জার্নালে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সমকালের সমসাময়িক সমাজের দ্বন্ধ, সংঘাত, সংকটের সমগ্রতাবোধ, দ্রোহ উন্মোচিত হয়েছে তার সৃষ্টিতে। শুধু কথা সাহিত্যেই তিনি সমৃদ্ধ থাকেননি-নানা ব্যঞ্জনায় গদ্যের অবয়বে প্রবন্ধেও তা প্রকাশ করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থ ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট গল্পে নিম্নবর্গ’, ‘বাংলা ছোটগল্প’, ‘নারী তুমি জয়িতা’, ‘ফিরে এসো সুতপা’, ‘নারীর পৃথিবী নারীর স্বপ্ন’, ‘দিঘিজল ছুঁয়ে যায় সর্বনাশা চিল’, ‘নারী তুমি অর্ধেক আকাশ’, ‘রবীন্দ্র বিচিত্রা’, ‘রূপন্তীর শেষ রাত’, ‘প্রতিবাদী নারী ও সমাজ’, ‘এক উঠোন আকাশ’, ‘অব্যক্ত’, ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন ও উপন্যাস’, ‘বাংলাদেশের উপন্যাস’, ‘ঘাস ফড়িং’, ‘আমি তুমি ও সে’, ‘সাধের পালকে পূর্ণিমার চাঁদ’, ‘প্রজাপতি সুখ’, ‘মোহিনীর জন্য’, ‘টান’, ‘সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ঐতিহ্য ও শিল্পরূপ।’ সাহিত্যে অবদানের জন্য নানা পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। বিশাল বাংলা প্রকাশনি সাহিত্য পুরষ্কার-২০১৬, ২০১৭। সমরেশ বসু সাহিত্য পুরষ্কার-২০২০, রাহাত খান স্মৃতি পদক, বিশ্ব সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সাহিত্য পুরষ্কার, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস সাহিত্য পুরষ্কার।