একটা ছােট্ট উড়ােফোন থেকে মীরা আবিষ্কার করে, তার তন্বী কিশােরী কন্যাটিকে একেবারেই চিনতে পারছে না সে। কন্যা রাত্রির মনােভূমি এখন তার কাছে দুর্গম গিরি। কান্তার মরু দুস্তর পারাবার। রশ্মি রাত্রি রৌদ্রবয়ঃসন্ধিক্ষণের এপাশে ওপাশে থাকা মীরার সকল সন্তানই তার কাছে এখন সম্পূর্ণ দুয়ে। এ কখন হলাে? কিভাবে হলাে?? ভাবতে ভাবতে মীরা চোখ কচলে। তাকিয়ে দেখে আজন্মদেখা বাংলাদেশকেও চিনতে পারছে না সে। কত ধানে কত চাল, হিসাব মিলছে না কোথাও। আর্থিক সামাজিক সম্পর্কগুলাে বুঝি কেবল অভিনয়। দেহমনের দগ্ধভূমিতে সতীদাহমাত্র। বিকার, বিক্ষোভ, বিকৃতি। শূন্যতা। ক্রমাগত অভিনয়ের জালে জীবন ‘বিজনবৎ শুষ্ক, কভু পাণ্ডুর, হঠাৎ শুভ্র, পরক্ষণেই আরবার রক্তিম।' মেদ, মজ্জা, হৃদয়, মগজ সব খুলে। নিলে যে মেদুর অস্তিত্ব, মীরার পরিপার্শ্ব সে বেদনার কাছে নাবালক! ভুল মানুষের অরণ্যে শৈশব-কৈশােরতারুণ্য-প্রাকযৌবন ব্যবহৃত হচ্ছে জুয়ার দান হিসেবে। শিশুর কিশােরের অস্থি-মজ্জা-মাংস বেবাক বুঝে নিচ্ছে। নির্মম একবিংশ। বাবা কেন ইয়াবা? ঈশ্বর কেন জুয়াড়ি? জীবন কেন ধর্ষণ? মুক্তমন কেন রক্তাক্ত? কোন জবাব নেই। বিচারহীন জগত। উত্তর না পেয়ে অথঃপর নিজের উপরই প্রতিশােধ নিচ্ছে কিশাের। অন্তহীন খিস্তিখেউড়ে প্রতিনিয়ত অভিশাপ দিচ্ছে নিজেকে। যেন আত্মার ধারাবাহিক আত্মহত্যা। মেনে নিতে পারে না মীরা। এ আত্মক্ষয়ী কিশাের হবে। একটা ‘লস্ট অ্যান্ড স্টোন্ড জেনারেশন'-মা হয়ে এটা মেনে নেবে সে? নিজের আত্মজ-আত্মজা আর জীবনের সালতামামি করতে বসে মীরা। ফ্র্যাটারনিটি, স্যারােরিটি, ফিলিয়ালিটি, ম্যাটারনিটি, প্যাটারনিটি, সেক্সটার্নিটি-যত খুনসুঁটি আর ফষ্টিনষ্টি আছে, সব সনাক্ত করার পর মীরা টের পায়, তার রক্তে যুগযুগান্তরের বন্যা। পদ্মার অবিরাম কলধ্বনিকে কিশােরমানসের আহ্বান মনে হয় তার। ঘুরে দাঁড়ায় মীরা। এ কিশােরসমাজ- এতাে তারই শােণিত, তার মর্মমূল, তার আত্মা, তার গর্ভ। ক্ষতবিক্ষত মীরার হৃদয় ফেটে বেরিয়ে আসে আর্তনিনাদ। অতঃপর ঘটনার ঘনঘটা। ক্ষমতার ইতিহাস, ভূগােল আর পুরুষনীতির গভীর ব্যাকুল ষড়যন্ত্র । বৃত্তের ভিতরে আচম্বিতে। জলস্রোতের ঘাত লেগে জীবনের মহীসঞ্চরণ। বিপুল বিক্রমে, অজর প্রেমে, প্রীতিপুণ্যে, ধীনৈপুণ্যে, প্রবল সংক্ষোভে, আইনী অস্ত্রে, মর্ম-মমত্বে সংঘাত চলে বেশুমার। পিছনে মৃত্যুর কবিতা। সামনে মীরা ও তার কিশাের সহযােদ্ধাদের আদিগন্ত লড়াই।