হাছন রাজা সমগ্র তিনশ’ তেতাল্লিশটি নতুন আবিষ্কৃত গানসহ এই মরমী সাধকের জীবন ও কর্মের নতুন তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী আকরগ্রন্থ
মরমী কবি দেওয়ান হাছন রাজা বাংলা লোককবিতার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। গভীর চিন্তাসমৃদ্ধ তাঁর বিশাল সাহিত্যকর্ম গবেষক এবং হাছন অনুরাগী পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করার জন্য ‘হাছন রাজা সমগ্র’ শীর্ষক আকরগ্রন্থটি রচনা করা হয়েছে। বইটি মোট ছয় পর্বে বিভক্ত।
হাছন রাজার বংশ পরিচয়, জন্ম, শিক্ষা, জমিদারি, শখ, সৃষ্টি ও শেষজীবনসহ তাঁর জীবনের পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা রয়েছে বইটির প্রথম পর্বে। আগের দু’শর বেশি গানসহ ইতোপূর্বে অপ্রকাশিত বর্তমানে আবিষ্কৃত তিনশ’ চল্লিশটির অধিক বাংলা ও হিন্দিগান প্রাচীন পান্ডুলিপি থেকে উদ্ধার করে দ্বিতীয় পর্বে সন্নিবেশিত হয়েছে। তৃতীয় পর্বে হাছন রাজার গানের মর্ম ও দর্শন সম্পর্কিত আলোচনা উপস্থাপন করা হয়েছে। হাছন রাজার ব্যতিক্রমধর্মী রচনা ‘সৌখিন বাহার’ প্রায় হুবহু এই গ্রন্থের চতুর্থ পর্বে তুলে ধরা হয়েছে। যা এই অসামান্য ব্যক্তিত্বের সৃষ্টিশীলতার আরেকটি রূপ পাঠকদের সম্মুখে উন্মোচন করবে। গবেষক ও পাঠকদের সুবিধার্থে হাছন রাজা সম্পর্কে ইতোমধ্যে প্রকাশিত বিভিন্ন রচনাবলীর তালিকা (বই, প্রবন্ধ, কবিতা, রচনা ইত্যাদি) এবং বইসমূহের প্রচ্ছদ, প্রিন্টার্স লাইন ও সূচিপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে পঞ্চম পর্বে।
হাছন রাজার জন্মস্থান ও পৈত্রিক বাড়ির স্মৃতিচিহ্ন সম্বলিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ফটোগ্রাফ ও হাছন রাজার কিছু দুষ্প্রাপ্য ছবি এবং ব্যবহৃত জিনিসপত্রের ছবিসহ মূল্যবান এ্যালবাম এই বইয়ের শেষে সংযোজিত হয়েছে। যা অনুসন্ধিৎসু পাঠকের কাছে হাছন রাজাকে আরো জীবন্ত করে তুলবে। সব মিলিয়ে তিনশ’ তেতাল্লিশটি নতুন আবিষ্কৃত গানসহ এই মরমী সাধকের জীবন ও কর্মের নতুন তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণধর্মী আকরগ্রন্থ এটি।
দেওয়ান হাছন রাজা চৌধুরী
সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর তীরে ছায়াঘেরা লক্ষণশ্রী গ্রামে ৭ পৌষ ১২৬১ বাংলা (১৮৫৪ খ্রি:) পিতামাতার কোল আলো করে জন্ম নেন ‘দেওয়ান হাছন রাজা’। তাঁর মায়ের ইচ্ছে অনুযায়ী ‘হাছন রাজা’ নাম রাখা হয়। হাছন রাজা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেননি। তবে আরবি ভাষায় লিখিত কোরআন শরীফ পাঠ করার শিক্ষা পেয়েছিলেন। বাংলা ভাষার উপরও তিনি যৎসামান্য শিক্ষালাভ করেছিলেন। জমিদারির বিভিন্ন দলিলপত্রে তাঁর নিজ হস্তে স্বাক্ষরই এর প্রমাণ বহন করে। স্বাভাবিক প্রতিভার কারণে তিনি হিন্দি, উর্দু ভাষাও কিছুটা আয়ত্ত করেছিলেন, যার নিদর্শন পাওয়া যায় কিছু কিছু রচনায়। হাছন রাজার অন্যতম শখ ছিল গান রচনা এবং তাতে সুর দেয়া। হাছন রাজা তাঁর জীবিতকালে ‘হাছন উদাস’ নামে একটি গানের বই ছাপিয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রভাতকুমার শর্মার প্রবন্ধের মাধ্যমে সিলেটে এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মূল্যবান আলোচনার পর সুধীসমাজে হাছন রাজার গান সম্পর্কে আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
আবুল আহসান চৌধুরী জন্ম ১৩ জানুয়ারি ১৯৫৩ কুষ্টিয়ার মজমপুরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ (অনার্স), এমএ ও পিএইচডি ৩২ বছর ধরে অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত। বর্তমানে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। মূলত প্রাবন্ধিক ও গবেষক সমাজমনস্ক ও ঐতিহ্যসন্ধানী। অনুসন্ধিৎসু এই গবেষক সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা দুষ্প্রাপ্য ও অজ্ঞাত উপকরণ সংগ্রহ, উদ্ধার ও তা ব্যবহার করে থাকেন। তার লালন সাঁই, কাঙ্গাল হরিনাথ ও মীর মশাররফ হােসেন বিষয়ক গবেষণাকাজ দেশ-বিদেশে সমাদৃত। গবেষণায় বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৯ সালে । প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৭০।