ফ্ল্যাপে লিখা কথা সাহিত্যের জন্য ১৯৮৮ সালে নোবেল পুরস্কোরে ভূষিত মিশরীয় লেখক নাগিব মাহফুজের জন্ম ১৯১১ সালে, কায়রোর বর্ণাঢ্য পাড়া আল জামালিয়ায়। নাগিব মাহফুজ ছাত্রাবস্থা থেকেই দর্শনের অনুরাগী ছিলেন। ১৯৩৪ সালে তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (তখন নাম ছিল ফুয়াদ বিশ্ববিদ্যাল) স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ছিলেন একজন গৃহ পাঠক। ইংরেজি এবং ফারসি উভয় ভাষার বহু গ্রন্থ তিনি গভীর আনন্দের সঙ্গে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি তিনটি ক্ষুদ্রাকার ঐতিহাসিক উপন্যান লিখে ফেলেন।
তাঁর সাহিত্যিক জীবনের প্রথম দশ বৎসর নাগিব মাহফুজ যে কয়েক ডজন ছোট গল্প রচনা করেন তার অধিকাংশই শহুরে জীবনের নানা অন্ধকার দিক নিয়ে গড়ে উঠেছে। তাঁর নিজের ভাষ্য অনুযায়ী তাঁর গল্প অনেক চরিত্রই সরাসরি জীবন থেকে নেয়া।
কায়রোর সাধারণ মানুষদের জীবন নিয়ে লেখা তাঁর গল্প কাহিনীগুলো দেশ, কাল পেরিয়ে সকল দেশের, সকল মানুষের, সকল কালের কাহিনি হয়ে ওঠে অনায়াসে। নিজস্ব এক কাল্পনিক বিশ্ব সৃষ্টিতে অসামান্য দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি, যেখানে চরিত্র, প্লট, ঘটনা এবং আখ্যানও একান্ত এবং আবশ্যকীয়ভাবে মিশরীয়। নিজের শিকড়ের খুব ভেতরে গিয়ে নিজের চিরচেনা মানুষগুলো ভেতরটা নিংড়ে, নাগিব মাহফুজ পৌঁছে যান মানবিক মনস্তত্ত্বের একবারে ভেতরের স্তরে উল্লম্বভাবে এবং অনুভূমিকভাবে ছড়িয়ে সমগ্র মানবজাতির নাগাল পেতে। ব্যক্তিমানুষের ওপর অগাধ বিশ্বাস ছিল তাঁর, বিশ্বাস করতেন মানুষকে কেন্দ্র করেই জগৎ আবর্তিত হয় এবং ব্যক্তিমানুষের নিয়তি ও জীবনের চাবিকাঠিটা তার হাতেই। ধর্ম, জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের সংশ্লেষণে এক আদর্শ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। একটা ভিড়-ভাট্রার জগৎকে স্মৃতিতে জাগিয়ে তোলার তাঁর যে অনন্য দক্ষতা সেটা আমাদের মধ্যে এক দীর্ঘব্যাপ্ত উষ্ণতা ছড়িয়ে মানুষের ভালোত্বের মৌলিক গুনাবলিতে আমাদের বিশ্বাস পুনঃস্থাপিত করে। সামাজিক অন্যায় অত্যাচারের প্রশ্নে সোচ্চার নাগিব মাহফুজের উপন্যাসের অনুপম অনুবাদ করেছেন একালের অরেণ্য গবেষক ও অনুবাদক জুলফিকার নিউটন। বলিষ্ট, সমৃদ্ধ ও সৃজন সম্ভাবনাময় গদ্যে-অনূদিত ‘‘হোমরের ইলিয়াড ও ওডিসির” বাংলা অনুবাদ সাহিত্যের স্থায়ী সম্পদ রূপে বিবেচিত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
সূচি: * ভূমিকা * শ্রদ্ধেয় শিক্ষক * সংগীত সঞ্চারী * সচিত্র সন্ধানী
১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল দেবিদ্বার উপজেলার বারেরা গ্রামের বনেদী কাজি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্কুল, কলেজ এবং বিশ^বিদ্যালয়ে কৃতিমান ছাত্র ছিলেন এবং প্রথম শ্রেণীর সাথে অনার্সসহ এম.এ. ডিগ্রি এবং পরবর্তীতে বিশ^ভারতী বিশ^বিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শনের ওপর উচ্চতর গবেষণা সম্পন্ন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসুর) সাবেক সাহিত্য সম্পাদক, সিনেট সদস্য, নন্দন পত্রিকার সম্পাদক এবং পরবর্তীতে দেশ বিদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা, আমন্ত্রিত বক্তা, গবেষণা ও বিশেষজ্ঞতার ভূমিকায় সংযুক্ত ছিলেন। গল্প, উপন্যাস, অনুবাদ এবং প্রবন্ধ-গবেষণা, সাহিত্যতত্ত্ব, দর্শন, সংগীত, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমকালীন ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত প্রতিক্ষেত্রেই জুলফিকার নিউটনের সংবিৎ সক্রিয় ও সুপ্রকাশ। তাঁর গল্প-উপন্যাস যেমন প্রীতিপদ, অনুবাদ সাহিত্য যেমন সুখপ্রদ, প্রবন্ধ ও গবেষণা তেমনই কোন না কোন দিক থেকে চমকপ্রদ। সব সময়ই তাঁর আলোচনায় থাকে চিন্তাকে উসকে দেবার মত অজস্র উপাদান, নতুনতর দৃষ্টি কোন বিচারে উদ্বুদ্ধ করার মত ক্ষুরধার বিশ্লেষণ। জাতীয় ও আন্তজার্তিক ভিত্তিতে সাহিত্যে মৌলিক গবেষণা অনুবাদ ও জীবনবাদী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের জন্য আনন্দমেলা, বাংলাদেশ সাহিত্য পরিষদ, রংধনু স্বর্ণপদক, রূপসী-বাংলা স্বর্ণপদক, বিদ্যাসাগর পুরস্কার, গান্ধী গবেষণা পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু একাডেমী, রবীন্দ্র পুরস্কার, নজরুল একাডেমী, সুভাষচন্দ্র পদক এবং কবীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেছেন।