ফখরুল আবেদীন মিলন। ফখরুদ্দীনের আছে বিরানি। আবেদিনের আছে শিল্পকলা। মিলনের আছে মধু। ফখরুল আবেদীন মিলনের আছে চমৎকার হাসি, শালপ্রাংশু দেহকান্তি, পরোপকারের মনোবৃত্তি, যখন যেদিকে দুচোখ যায় বেরিয়ে পড়বার নেশা ও সক্ষমতা, মিলনছড়িতে তিনটা পাহাড় ও ১০০ বিঘা জমি, একজন সুন্দরী উচ্চশিক্ষিত কর্মজীবী বউ, একজন প্রতিভাময়ী সুলেখিকা কন্যা, অসংখ্য নারী ভক্ত, ফেসবুকে ৫ হাজার বন্ধু, কয়েক লক্ষ ফলোয়ার, কয়েক লক্ষ লাইকার, ২১ টি সিমকার্ড সমেত ৩৩টি মোবাইল সেট এবং একখানা সোনার কলম। সেই সোনার কলম দিয়ে তিনি স্টাটাস লেখেন। এইটা কথার কথা। তিনি আসলে স্মার্ট মানুষ, স্মার্টফোনে স্টাটাস লেখেন। স্মার্টফোনের বোতাম টিপে টিপে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এবং সবচেয়ে বেশি শব্দের স্টাটাস লেখার জন্য তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখা হয়েছে। লিখে রেখেছেন ফারহানা আলম স্বর্ণা। গিনেজ রেকর্ড বইয়ে তার নাম উঠেছে, জন্মদিন নিয়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রবন্ধ লেখার জন্য। আইফোন ও স্যামসাং কোম্পানি তার স্টাটাসগুলো দিয়ে বিজ্ঞাপন করতে চেয়েছিল, মিলনের স্টাটাসগুলো ‘আইফোনে লেখা হয়’, এই ছিল বিজ্ঞাপনের ভাষা, তারা কয়েক লক্ষ ডলার পর্যন্ত অফার করেছিল, ফখরুল আবেদিন মিলন তাদের বলেছেন, আমি জন্মদিনে স্টাটাস লিখি আমার ফেসবুকের ৫ হাজার বন্ধুদের সবাইকে ভালোবেসে, আমি কি সেই স্টাটাসের বিনিময়ে ডলার কামাতে পারি, আপনারা আমাকে এত ছোট ভাবতে পারলেন! ফখরুল আবেদিন মিলনের স্টাটাসগুলোতে কী নেই। এক নম্বর আছে সেন্স অফ হিউমার। পড়লে হাসতেই হবে। আর হাসির পরে কান্না, বলে গেছেন চিত্রনায়ক মান্না এবং টুইংকল খান্না। ফখরুল আবেদিন মিলনের স্টাটাসটা শেষ হবে বিষাদ দিয়ে, আপনি শেষে আবেগে কেঁদে ফেলতে বাধ্য হবেন। তবে তার স্টাটাসের একটা বড় সীমাবদ্ধতা আছে-- সেসব প্রেডিক্টেবল। শেষে গরু নদীতে পড়বেই, এবং গরু রচনা নৌকাভ্রমণে পর্যবসিত হবে। তিনি যেভাবেই শুরু করুন না কেন, ‘সানি লিয়ন’, ‘লিয়নেল মেসি’, ‘একবার আমি ভুল করে সাপ দিয়ে লাঠিকে পিটিয়েছিলাম, তাতে সাপও মরেছে লাঠিও ভাঙেনি,’ যেভাবেই শুরু হোক, শেষটা হবে -- আজ সেই মানুষটির জন্মদিন-- এখন এখানেই মুন্সিয়ানা। প্রতিদিন জন্মদিন আসবে, কারও না কারও, সবার সম্পর্কে হাসির কথা, কান্নার কথা, আবেগের কথা, ভালোবাসার কথা, ভালোলাগার কথা বলতে হবে, কিন্তু কেউ যেন টের না পায়, জন্মদিনের উইশ হচ্ছে। ফখরুল আবেদিন মিলন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ভ্রমণবিদ, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জন্মদিনের শুভেচ্ছা বিশেষজ্ঞ, এবং শহরের শ্রেষ্ঠ ভ্রমণবিষয় লেখক। তিনি ঠিক করেছেন তিনি দেশের দরিদ্র প্রকাশনা শিল্পকে রুগ্নদশা থেকে বাঁচাবেন। সুন্দরী মেয়েরা বইমেলায় আসে না, এটা তিনি সইতে পারছেন না। তিনি স্টাটাসগুলো দিয়ে বই বের করবেন (প্রকাশকের নাছোড় চাপে পড়ে), ফলে ফেসবুকের পাঁচ হাজার বন্ধু বইমেলায় ছুটে আসবে, সুন্দরীদের মিলনমেলা বসবে। হায় মিলন, ফেসবুকের প্রফাইল পিকচার দেখে তিনি প্রতারিত হচ্ছেন না তো! প্রফাইল পিকচারে মেয়েরা ভারতীয় নায়িকা, ব্রাজিলের গায়িকা, লেবাননের লেখিকার ছবি ব্যবহার করে। এবং এদের অনেকে আদৌ মেয়েই নয়। অন এ সিরিয়াস নোট, ফখরুল আবেদিন মিলন সাংঘাতিক লেখেন। আমি তার বইয়ের মুখবন্ধ লেখার যোগ্যতা রাখি না। তবুও এই সম্মান লাভ করায় আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। মিলন জন্মদিনের স্টাটাস লিখে একদিন নোবেল পুরস্কার পাবেন, আশা করতে দোষ কী। বাংলা একাডেমি ভ্রমণবিষয়ক লেখার জন্য পুরস্কার প্রবর্তন করেছে, জন্মদিন বিষয়ক লেখার জন্য করবে না, কে বলতে পারে।