তেতাল্লিশটি নিবন্ধে লেখক একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন-সম্ভাবনার পরিধি ও বিভিন প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে আলােচনা করেছেন
"অর্থ-অনর্থের ব্যাংকিং ও অর্থনীতি" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: এই গ্রন্থটিতে সরল অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ওপর নানা কোণ থেকে আলােকপাত করা হয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের হাল-হকিকত বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে । তেতাল্লিশটি নিবন্ধে লেখক-ব্যাংকার ফারুক মঈনউদ্দীন একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন-সম্ভাবনার পরিধি ও বিভিন প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে আলােচনা করেছেন। এই আলােচনা সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যানে সমৃদ্ধ। একই সঙ্গে লেখকের অভিজ্ঞতাপুষ্ট মন্তব্যে দিকনির্দেশী । গ্রন্থের সাবলীল ভাষা সাধারণ পাঠকের জন্য বিশেষভাবে উপযােগী। দুর্ভাগ্য যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে লেখালিখি সচরাচর সাংবাদিকী বয়ানের ওপরে যেতে পারে না । সামগ্রিক বিশ্লেষণের অভাব প্রকট। ফারুক মঈনউদ্দীন এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে একটি সম্পূর্ণ গ্রন্থ উপহার দিয়েছেন যা একজন কৌতুহলী পাঠককে সহজে সন্তুষ্ট করবে । অর্থনীতির ছাত্ররাও এ-গ্রন্থ পাঠে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির ঐতিহাসিক বিবর্তন ও সেইসঙ্গে তুলনামূলক আলােচনা গ্রন্থটির অন্যতম সম্পদ। অন্যদিকে অজস্র প্রাসঙ্গিক ‘এনেকডােটাস রেফারেন্স’ ব্যাংকিং, প্রবৃদ্ধি ও দেশের উন্নয়নধারার অর্থনৈতিক বিশ্লেষণকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনে সাহায্য করেছে। যে-কানাে দেশী-বিদেশী বাংলাভাষী পাঠক এ-বই পড়ে সমকালীন। বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে একটি নির্ভরযােগ্য ও পূর্ণাঙ্গ ধারণলাভে সক্ষম হবেন। বাংলাদেশের প্রায়ােগিক অর্থনীতির ওপর এরকম বই দুর্লভ।
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করলেও ফারুক মঈনউদ্দীন মূলত গল্পকার। তাঁর ছোটগল্পগুলো ভাষার অনবদ্য কাব্যিকতার জন্য প্রথম থেকেই পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। মানুষের অন্তর্লীণ অনুভ‚তি ও বহিরাচরণ তাঁর নিবিড় পর্যবেক্ষণে প্রমূর্ত হয়ে ওঠে। তাঁর প্রথম লেখা গল্প প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার সাহিত্য সাময়িকীতে, আর প্রথম গল্পগ্রন্থ ১৯৯০ সালে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর অন্যতম গল্পগ্রন্থ আত্মহননের প্ররোচনা। নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি অনুবাদ, সাহিত্য সমালোচনা, ভ্রমণ এবং অর্থনীতি বিষয়ক লেখালেখিতে নিজেকে ব্যাপৃত করেছেন। মার্কিন লেখক ক্লিনটন বি সিলির কবি জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যিক জীবনী অ্যা পোয়েট অ্যাপার্ট গ্রন্থটির অনুবাদের জন্য তিনি ‘আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার ২০১১’ এবং ভ্রমণগ্রন্থ সুদূরের অদূর দুয়ার-এর জন্য ‘সিটি-আনন্দআলো পুরস্কার ২০১৯’ লাভ করেন। তাঁর এযাবত প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে গল্পগ্রন্থ তিনটি, অনুবাদ চারটি, ভ্রমণ সাতটি, অর্থনীতি-ব্যাংকিং বিষয়ক গ্রন্থ পাঁচটি এবং প্রবন্ধগ্রন্থ একটি।