উপন্যাস অনেক রকম হয়। মীর্জা আমীরের ‘পাপী বউ’ একটি পরিবারিক প্রেম বিরহের উপন্যাস। উপন্যাসের নায়ক আওরঙ্গ। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বিশাল প্রাচুর্য্যরে মালিক আওরঙ্গ। তার সুন্দর চেহারা। উদার মন। নিষ্পাপ ভালোবাসায় ঘর বাঁধে অপরূপা অপ্সরী চারুলতার সাথে। চারুলতা পাহাড়ি মেয়ে। চলনে দোলনে বড় চঞ্চল। আওরঙ্গ গভীর বিশ^াস আর ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে স্ত্রী চারুলতার নামে নির্মাণ করে ‘চারুমহল’। চারুলতাকে বিয়ে করার ঘটনাটিও আকস্মিক। আওরঙ্গের বিয়ে ঠিক হয়েছিল সুকন্যার সাথে। সুকন্যা আওরঙ্গদের পারিবারিক আত্মীয়। এছাড়া সুকন্যার সাথে ছোটবেলা থেকেই আওরঙ্গের বন্ধুত্বও। কিন্তু বিয়ের কয়েক দিন আগে আওরঙ্গ চারুলতা নামের এ পাহাড়ি মেয়েকে স্বপ্নে দেখতে পায়। স্বপ্নে দেখেই আওরঙ্গ প্রেমে পড়ে যায় চারুলতার। স্বপ্ন বাস্তব করতে মরিয়া হয়ে ওঠে আওরঙ্গ। আওরঙ্গের মাকে জানায় প্রথমে ওর স্বপ্নের কথা কিন্তু মা তেমন পাত্তা দেয়নি এ বিষয়টি। কিন্তু আওরঙ্গ এ বিষয়ে পণ করে বসে। বিয়ে সে চারুলতাকেই করবে। কিন্তু কোথায় পাবে চারুলতাকে? স্বপ্নের রাণী সে কোথায় খুঁজে পাবে। মাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে পাহাড়তলির শালবনের দিকে। পথে যেতে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে একটি হরিণ। গাড়ির আঘাতে হরিণটি আহত হয়ে মারা যায়। এক কান দুই কান ঘুরে এ সংবাদ পৌঁছে যায় চারুলতার কানে। ছুটে আসে সেই গাড়ির কাছে চারুলতা। আওরঙ্গ আর ওর মাযের সাথে পরিচিয় হয় চারুলতার। ‘হাওয়া রানী আদর করে চারুলতাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল, আমরা তোমার খোঁজেই এই শালবনে এসেছি মা। ওই দেখো, আমার রাজপুত্র ছেলে আওরঙ্গ। চারুলতা হাওয়া রানীর কথায় কোনো আগামাথা বুঝতে পারল না। তার খোঁজে এই শালবনে এসেছে তারা? কিন্তু কেন? তাকে কী দরকার? চারুলতা বোকা সেজে চেয়ে রইল। হাওয়া রানী আওরঙ্গের কাছে চারুলতাকে টেনে এনে বলল, ভালো করে দেখো তো চিনতে পারো কি না? তোমরা দুজন স্বপ্নে কথোপকথন করেছিলে! চারুলতা অবাক হয়ে বলল, কই, আমি তো কোনো স্বপ্নে ওনাকে দেখিনি! হাওয়া রানী অস্থির হয়ে বলল, দেখেছ মা দেখেছ, তা না হলে তোমার নাম যে চারুলতা, খোকা তা জানল কী করে?’ এরকম পরাবাস্তব প্রেমের উপন্যাসের প্রতি পাঠকের এক ধরনের আকর্ষণ থাকে। উপন্যাসিককেও হতে হয় অনেক দক্ষ। বাস্তবতা ও কল্পনাকে একসূত্রে এনে চরিত্র ও সংলাপ সৃষ্টি করা খুব একটা সহজ ব্যাপার না। এ উপন্যাসের স্থান কাল পাত্র কোনটাই বাস্তবে নেই কিন্তু এটা যে অবাস্তব তাও বোঝা যায় না। চৌদ্দটি ভাগে বিভক্ত ৭২ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটি এক বসায় পড়া শেষ করা যাবে। এর কাহিনী বর্ণনা ও ভাষারীতি সহজ ও স্বাবলীল। উপন্যাসটি শেষ করা হয়েছে বিচ্ছেদ দিয়ে। যেই চারুলতার প্রতি এতো প্রেম এতো ভালোবাসা তাকে নিজ হাতে হত্যা করে আওরঙ্গ! আর শেষে নিজেকেও শেষ করে দেয়। উপন্যাস পড়তে পড়তে মনে হবে এটাই পরিণতি হবার কথা ছিলো। মীর্জা আমীরের ‘পাপী বউ’ বহুল পঠিত হোক এই কামনা রইল। মীর্জা আমীর জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ থানার সূর্যনগর গ্রামে ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে তার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ‘আঁধিয়ার স্পর্শ’। দেশ বিদেশের নানা পত্র পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখছেন। তার এ সাহিত্যযাত্রা বাংলা সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করুক।
মীর্জা আমীর মীর্জা আমীর জামালপুর জেলার বকশীঞ্জ উপজেলার সূর্যনগর গ্রামে ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মীর্জা আ. জলিল সাহিত্যের সমরস বণ্টনে পুত্রকে গড়ে তুলেছেন সোৎসাহে। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অতন্দ্র পৃথিবী’ ও ‘হীরের মাটি সোনার ফুল’ দিয়ে সাহিত্যজীবন শুরু। উপন্যাস ‘আঁধিয়ার স্পর্শ’র কল্পনায় ডানা মেলেই তিনি গদ্যের উঠোনে পা রাখেন। শিকড়সন্ধানী কবি ও লেখক মীর্জা আমীর মানুষ ও প্রকৃতিপ্রেমে বিশ্বাসী। শৈল্পিক প্রেমে গঠন করেন শব্দের শরীর। বাবুই পাখির নিপুণতায় গড়ে তোলেন গল্পের বাগান। তার সংকলিত উপন্যাস ‘অচেনা প্রহর’ একটি সামাজিক ব্যাধি নির্মূল উপন্যাস। জগতের সকল আবলিতা জটিলতাকে সহজ সমাধানে তুলে আনেন লেখার পাতায়। কবি ও লেখক মীর্জা আমীরের লেখার জগতে অদম্য স্পৃহাই তাকে নিয়ে যাবে সাফল্যের দিগন্তে। প্রধান শিক্ষক বকশীঞ্জ ক্যাডেট একাডেমি― বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হেলাল উদ্দিন খান, সাবেক অধ্যক্ষ, খাতেমুন মঈন মহিলা ডিগ্রি কলেজ, লেখকের অন্যান্য গ্রন্থ, অতন্দ্র পৃথিবী―কাব্যগ্রন্থ, হীরের মাটি সোনার ফুল―কাব্যগ্রন্থ, আঁধিয়ার স্পর্শ―উপন্যাস, নীল কষ্টের ঢেউ―উপন্যাস, সূর্যকন্যা―উপন্যাস, নারী দংশন―উপন্যাস, পাপী বউ―উপন্যাস, চন্দ্রপুরুষ―উপন্যাস, ময়ূরী বউ―উপন্যাস, যদি ভালোবাসা পাই―উপন্যাস, চন্দ্রপ্রভা―উপন্যাস, বৃদ্ধাশ্রম―উপন্যাস, প্রণয়পক্ষ―উপন্যাস, বৃদ্ধাশ্রম : এক মানুষের এক দুনিয়া (উপন্যাস)