"শুচিতা" ফ্ল্যাপের লেখা: মেয়েরা কি পছন্দমতাে বিয়ে করে না? নিশ্চয়ই বিয়ে করে । আজকাল পছন্দ করে বিয়ে করাই নিয়ম । বাবা-মায়ের ঠিক করা বিয়ে হওয়ার দিন শেষ হতে চলেছে । তাহলে শুচিতার বাবা মা কেন মেয়ের পছন্দ করা পাত্রকে মেনে নিতে পারছে না? স্বধর্মের নয় বলেই কি? আধুনিক যুগের হলেও আমাদের সংস্কার বদলায়নি । ধর্মের বিশ্বাস সব ধর্মের মানুষকেই কিছু না কিছু বাধ্যবাধকতায় ধরে রাখে । ইচ্ছে করলেই সেই দায়িত্ব এড়ানাে যায় না। কিন্তু কেন যায় না? কে বাধা দিচ্ছে? শুচির গলায় জেদ। বাইরে থেকে কেউ বাধা দিচ্ছে না । কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমরা বাঁধনে জড়িয়ে আছি। ধর্মের বিশ্বাসটা মানুষ নিজে লালন করে । বংশানুক্রমে । তাই-ই তাদের পরিচয় । সেই বিশ্বাসেই বিশ্বাসীদের মুক্তি । এই বাঁধন জোর করে ছেঁড়া যায় না। হ্যা, কেউ কেউ বাঁধন ছেঁড়ে। খুব স্বার্থপর হলে তাই করে । কিন্তু মানুষ তাে একা নয় কেউ । একজন মানুষ একা, কিন্তু তার রয়েছে অনেক সম্পর্কের বন্ধন । ধর্ম সেই বন্ধনগুলো স্পষ্ট করে দেয় । একটা দায়বদ্ধতার সৃষ্টি করে । সেই দায়বদ্ধতা অস্বীকার করার অর্থ আগের সব সম্পর্ক ছিন্ন করা। এটা খুব স্বার্থপরের কাজ। কিন্তু জীবনে একটা সময় আসে, হয়তাে সবার না, কারাে কারাে, যখন স্বার্থের কথা না ভেবে উপায় থাকে না। শুচিতা কি শেষ পর্যন্ত স্বার্থপর হতে পেরেছিল? ধর্মের টানাপােড়নে শেষ পর্যন্ত মানুষের সম্পর্কগুলাে কীভাবে স্পষ্ট হয়ে ওঠে এই - উপন্যাসে তারই প্রতিফলন হয়েছে।
Hasnat Abdul Hye জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায় । পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশোর, ফরিদপুর শহরে। কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা । ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে ছোটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছোটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালোচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল ।বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্ৰবাস জীবনে। প্ৰকাশিত ছোটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্ৰমণ-কাহিনী ছয় । সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। তাঁর লেখা উপন্যাস সুলতান ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।