নূরুল আনােয়ার কেবল গল্প-উপন্যাসে নয়, ভ্রমণকাহিনি লেখায়ও সিদ্ধহস্ত। এই বইটিতে তিনি বাংলাদেশের আটটি পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। একসঙ্গে এতগুলাে ভ্রমণকাহিনি একই মলাটের মধ্যে বন্দি করা সত্যি দুরূহ কর্ম। নূরুল আনােয়ার সেই অসাধ্য কাজটি সাধন করেছেন। অনেকে হয়তাে নাক সিটকাবেন, বাংলাদেশ ছােট একটি দেশ। সকালে এপ্রান্তে থেকে রওয়ানা দিলে বিকেলে ওপ্রান্তে যাওয়া যায়। এখানে ঘুরে দেখার এমন কি আছে? তার ওপর আবার ভ্রমণকাহিনি! তাদের উদ্দেশ্যে বলি, বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনাময় দেশ, বিশেষ করে পর্যটন শিল্পে। যাদের বাংলাদেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলাে ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে একমত হবেন নূরুল আনােয়ারের ঘুরে দেখা জায়গাগুলাে মােটেই ফেলনা নয়। যারা ওসব জায়গায় যাননি বা যাদের দেখার সুযােগ তৈরি হয়নি তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার নিমিত্তে এই বই প্রকাশ একটি ছােট প্রয়াস। এই বইয়ের লেখাগুলাে নিছক ভ্রমণ কাহিনি নয়। এর মধ্যে রয়েছে সরস গল্প। কাহিনি বয়ানের পাশাপাশি তিনি ওসব এলাকার মহিমাকীর্তন করেছেন সাবলীল ভাষায়। লেখকের রসবােধ অসাধারণ। প্রকৃতিকে দেখার রয়েছে তাঁর স্বকীয়তা। নূরুল আনােয়ারের এই বইটি প্রকাশ করে আমরা। দেশের জন্য কিঞ্চিৎ হলেও উপকার করতে পারছি, এটা ভাবতে ভাল লাগছে। ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য বইটি একটি রেসিপি হিসেবে কাজ করবে কোন সন্দেহ নেই।
জন্ম, জন্মস্থান স্রষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত। ১৯৫০ সালের শীতের শুরুতে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন সংলগ্ন এক রেলওয়ের বাংলোতে জন্ম, অথচ তার বড় বোনের জন্ম ১৯৪৭ এর আগস্টে আসামের রাজধানী গৌহাটি শহরে। পিতা সিরাজুল মুস্তাফা এবং মাতা তৈয়বা বেগম (উভয়ে জান্নাতবাসী) চট্টগ্রাম জেলার মান্দারী টোলা গ্রামের অধিবাসী । পিতা আসাম বেঙ্গল, নর্থইস্টার্ন এবং পাকিস্তান ইস্টার্ন রেলওয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। ফলত পিতার কর্মস্থানকে ঘিরে শিক্ষা জীবন শুরু হয় । সর্বশেষ এলএলএম ডিগ্রি লাভ করেন । তার ৫ বোনও এম.এ । ২ জন। সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন এর মধ্যে একজন পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করন । তার পিতার মামা চট্টগ্রাম জেলার প্রথম ২জন ডিসটিংশন (মুসলিম) গ্ৰেজুয়েটদের মধ্যে একজন । তার পিতাও ১৯৩৪ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৩৬ সালে আইএ পাস করেন। উভয় পরীক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। দেশাত্মবোধ ও বিপবী তাড়না হতে মহান যুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। অধিক্ষেত্র ছিল ৩নং সেক্টর। যুদ্ধশেষে ১৯৭৩ সনে অল্প সময়ের ব্যবধানে ৩টি প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি পান । ৮ ডিসেম্বর ১৯৭৩ ডি.এস.পি পদে যোগ দেন । কর্মজীবনে দীর্ঘ প্ৰায় ৪ বছর গোপালগঞ্জের শেষ মহকুমা পুলিশ অফিসার ছিলেন। চাকরিকালে তিনি ৭টি জেলায় পুলিশ সুপার। (রেলওয়ে চট্টগ্রামসহ) ঢাকা মহানগর পুলিশের ২বার উপ-পুলিশ কমিশনার, পুলিশ হেডকোয়াটার্স-এ এআইজি এবং এপি ব্যাটালিয়নে ২ বার অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯-২০০০ সালে বসনিয়া এবং হার্জেগোভিনায় জাতিসংঘ শান্তিমিশনে বাংলাদেশ পালন করেন । ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৩ সালে পদোন্নতি সভার ৩দিন পূর্বে, ৫০ বছর বয়সে, ২৫ বছর চাকরি পূর্তি হওয়ার কারণে প্রথম বিসিএস (মুক্তিযোদ্ধা) ব্যাচের ৬৮ জন কর্মকর্তার সাথে অবৈধ ও এক্তিয়ার বহির্ভূতভাবে চাকরিচুত্যুত হন। লড়াকু ও দুঃসাহসী এই লেখক মামলা করে প্রথম জয়লাভ করেন। চাকরিচুত্যুতদের মধ্যে ২০০৭ সালে পুনঃনিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে তখনকার পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরাগভাজন হন। তাদের অসহযোগিতা ও প্রবল প্রতিরোধের মুখেও সরাসরি ডি.আই.জি পদে পদোন্নতি পেয়ে দ্বিতীয় বারের মতো অবসরে যান । পরবর্তীতে আদালতের আদেশের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সরকার ২০০৩ সাল হতে ডিআইজি, ২০০৫ হতে অতিরিক্ত আইজি এবং ২০০৬ সাল হতে আইজিপি পদে পদোন্নতি দিয়ে অবসর দেন । ইতিপূর্বে ‘একুশের গুলিবর্ষণ, মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর কারিশমা ও কিছু অনালোচিত তথ্য” ও “বঙ্গবন্ধু, জিয়া ও মঞ্জর হত্যাকাণ্ড জতুগৃহ একটিই’ নামক তার দুইটি বই প্রকাশিত হয়েছে। পুলিশের কতকথা নামে একটি বই প্রকাশের প্রস্তুতি পর্বে আছে। সেই বইটিতে পুলিশের মঙ্গলময় দিকের সাথে বাহিনীর ভিতরকার অনাচার, দুনীতি, ভর্তি, প্রশিক্ষণ, বদলি, পদোন্নতি, মিশনে গমন যৌন নির্যাতন ইত্যাদি নিয়ে নিন্ পদের কান্না ও হাহাকারের করুণ বিবরণ পাওয়া যাবে। বাংলা ভাষার অতীত নিয়েও লেখা সম্পন্ন হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে তার স্ত্রী এক কন্যা এক পুত্ৰ তিন নাতি-নাতনী রয়েছে।