"সম্ভবত : গণনাতত্ত্ব ও সম্ভাব্যতার গণিত" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: সম্ভাব্যতা ব্যাপারটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে; বিলটা হয়তাে সংসদে পাস হবে; রােগ সারবে কিনা তা ‘নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না'; সামনের ম্যাচে সমানে সমানে লড়াই হবে - হারজিতের পাল্লা একেবারে ‘ফিফটি-ফিফটি’ ... ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন প্রশ্ন হলাে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারে যে সম্ভাবনার বিষয়টি চলে আসে, তার থেকে গণিতের সম্ভাবনা কোন দিক দিয়ে আলাদা? সম্ভাবনার মাপকাঠিটাই বা কেমন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সাহায্য করবে এই বইটি। সম্ভাব্যতার গণিত বুঝতে হলে অবধারিতভাবে গণিতের আরেকটি শাখায় দক্ষতা অর্জন করতে হয়: গণনাতত্ত্ব (combinatorics)। তাই এই বইতে রয়েছে গণনাতত্ত্বের প্রাথমিক আলােচনাও। গণনাতত্ত্ব ও সম্ভাব্যতার গণিতের প্রয়ােগের ক্ষেত্র যেমন আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞান থেকে শুরু করে আণবিক জীববিজ্ঞান ও কোয়ান্টাম মেকানিক্স পর্যন্ত বিস্তৃত, তেমনি এই ধরণের গাণিতিক সমস্যাগুলাে সমাধান করতে পারাটা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে লড়াই করার জন্যেও অপরিহার্য। কেননা এসব প্রতিযােগিতায় প্রতিবছরই কিছু না কিছু সমস্যা গণনাতত্ত্ব ও সম্ভাব্যতা হতে দেওয়া হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গণিতের এই শাখা দুটির গুরুত্ব অনুধাবন করে বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বাের্ড সম্প্রতি এগুলােকে মাধ্যমিক স্তরের গণিত পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যার পাঠ ইতিপূর্বে উচ্চমাধ্যমিক স্তর হতে শুরু হতাে। সব মিলিয়ে বলা যায়, গণনাতত্ত্ব ও সম্ভাব্যতার গণিতে পারদর্শীতা অর্জন করাটা এখন আর শুধু শখের বিষয় নয়। তাই সম্ভবত এই বইটি বিভিন্ন স্তরের গণিত পিপাসুদের জ্ঞানতৃষ্ণা মেটাতে সক্ষম হবে।
১৯৮৭ সালের ১ জানুয়ারি রাজশাহীতে জন্ম বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ ও লেখক সৌমিত্র চক্রবর্তীর। কাঞ্চননগর মডেল হাই স্কুল থেকে প্রাইমারি এবং ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বই পড়ার নেশা ছোটবেলা থেকেই, আর এ বিষয়ে সবসময়ই উৎসাহ দিয়ে গেছেন তার বাবা-মা। তবে ক্যাডেট কলেজে পড়াকালে কলেজের লাইব্রেরিতে থাকা অনেক বিরল বইয়ের খোঁজ পেয়েছিলেন। সেসব বইয়ের মাঝে তাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করতো গণিতের বই। ফলে গণিতের প্রতি আগ্রহটা তার সহজাত, কিন্তু এর পাশাপাশি তিনি জীববিজ্ঞানকেও আপন করে নিয়েছিলেন। অপরদিকে ঝিনাইদহ সরকারি স্বাস্থ্য সহকারী প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ বাবা এবং ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার মায়ের অনুপ্রেরণাও তাকে প্রভাবিত করেছে। তাই চিকিৎসক হওয়ার আশায় তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু গণিত এবং জীববিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা থেকে তিনি পাশাপাশি লেখালেখিও করছেন। সৌমিত্র চক্রবর্তীর বই লেখার ধাঁচ অনেকটা গবেষণাধর্মী, এছাড়াও বাংলায় সহজভাবে তিনি গণিত এবং বিজ্ঞানের গুরুগম্ভীর বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে থাকেন যাতে করে সাধারণ পাঠকের কাছে বিষয়গুলো সহজ হয়ে দাঁড়ায়। সৌমিত্র চক্রবর্তী এর বই সমূহ এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘প্রাণের মাঝে গণিত বাজে’, ‘জীবনের গল্প’, ‘জীবনের গাণিতিক রহস্যঃ পপুলেশন জেনেটিক্স ও গেইম থিওরি’, ‘গণিতের সাথে বসবাস’, ‘খণ্ড ক্যানভাস’ ইত্যাদি। বই লেখার পাশাপাশি তিনি আরো কিছু কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন। তিনি একাধারে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সিলর, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী এবং ময়মনসিংহ প্যারালাল ম্যাথ স্কুলের উদ্যোক্তা। তাঁর সময় কাটে অবসরে বই পড়ে ও প্রোগ্রামিং চর্চা করে। ২০২১ সালে "করোনা বৃত্তান্ত" বইয়ের জন্য বাংলা একাডেমি কর্তৃক "হালীমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান লেখক পুরস্কার" -এ ভূষিত হয়েছেন।