ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা ইয়াকভ পেরেলমানের এলজেব্রা ক্যান বি ফান বইটি থেকে অনুপ্রাণিত এই বইটিকে রেফারেন্স বইও প্রথমপাঠ বলা যাবে না। এটি ঠিক রেফারেন্স বইও নয়। এই বইটি তাঁদের জন্য লেখা, যাঁরা বীজগণিত বিষয়ে স্কুল পর্যায়ের জ্ঞান রাখেন, কিন্তু বীজগণিতের আসল মজাটা কখনো হৃদয়ঙ্গম করতে পারেননি। এই বইটি তাঁদের জন্য যাঁরা বারবার ভেবেছেন, বীজগণিত করে কী লাভ, কিন্তু কোনো সদুত্তর পাননি। বীজগণিত কীভাবে আমাদেরকে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে তা এই বইটি পড়লে পাঠক আশা করি বুঝতে পারবেন। বীজগণিত শেখানো নয়, যুক্তিচর্চার এক হাতিয়ার হিসেবে বীজগণিতকে অনুভব করতে পাঠককে সমর্থ করে তোলাই এই বইটির উদ্দেশ্য। উল্লেখ্য, পুনরাবৃত্তি এড়িয়ে বইটির কলেবর ছোট রাখার স্বর্থে বিভিন্ন স্থানে লেখকের পূর্ববর্তী বই প্রাণের মাঝে গণিত বাজে : জ্যামিতির জন্য ভালোবাসা’র রেফারেন্স টানা হয়েছে, যা ব্যবহার করলে এই বইটির বক্তব্য স্পষ্টতর হবে। বীজগণিতের নানা দিক, মজার মজার সমস্যার আকারে উপস্থাপন করে বর্ণনা করা হয়েছে যাতে পাঠক একই সাথে সমস্যা সামাধানের বিভিন্ন কৌশল সম্বন্ধেও জানতে পারেন। সেই সাথে, স্কুল পর্যায়ে শেখা বীজগণিতের নানা ফাঁক পূরণ করতে এই বইটি ভূমিকা রাখবে। আসুন, যুক্তির পথ ধরে মুক্তির দিকে এগিয়ে যাই।
১৯৮৭ সালের ১ জানুয়ারি রাজশাহীতে জন্ম বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ ও লেখক সৌমিত্র চক্রবর্তীর। কাঞ্চননগর মডেল হাই স্কুল থেকে প্রাইমারি এবং ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বই পড়ার নেশা ছোটবেলা থেকেই, আর এ বিষয়ে সবসময়ই উৎসাহ দিয়ে গেছেন তার বাবা-মা। তবে ক্যাডেট কলেজে পড়াকালে কলেজের লাইব্রেরিতে থাকা অনেক বিরল বইয়ের খোঁজ পেয়েছিলেন। সেসব বইয়ের মাঝে তাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করতো গণিতের বই। ফলে গণিতের প্রতি আগ্রহটা তার সহজাত, কিন্তু এর পাশাপাশি তিনি জীববিজ্ঞানকেও আপন করে নিয়েছিলেন। অপরদিকে ঝিনাইদহ সরকারি স্বাস্থ্য সহকারী প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ বাবা এবং ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার মায়ের অনুপ্রেরণাও তাকে প্রভাবিত করেছে। তাই চিকিৎসক হওয়ার আশায় তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু গণিত এবং জীববিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা থেকে তিনি পাশাপাশি লেখালেখিও করছেন। সৌমিত্র চক্রবর্তীর বই লেখার ধাঁচ অনেকটা গবেষণাধর্মী, এছাড়াও বাংলায় সহজভাবে তিনি গণিত এবং বিজ্ঞানের গুরুগম্ভীর বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে থাকেন যাতে করে সাধারণ পাঠকের কাছে বিষয়গুলো সহজ হয়ে দাঁড়ায়। সৌমিত্র চক্রবর্তী এর বই সমূহ এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘প্রাণের মাঝে গণিত বাজে’, ‘জীবনের গল্প’, ‘জীবনের গাণিতিক রহস্যঃ পপুলেশন জেনেটিক্স ও গেইম থিওরি’, ‘গণিতের সাথে বসবাস’, ‘খণ্ড ক্যানভাস’ ইত্যাদি। বই লেখার পাশাপাশি তিনি আরো কিছু কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন। তিনি একাধারে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক কাউন্সিলর, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী এবং ময়মনসিংহ প্যারালাল ম্যাথ স্কুলের উদ্যোক্তা। তাঁর সময় কাটে অবসরে বই পড়ে ও প্রোগ্রামিং চর্চা করে। ২০২১ সালে "করোনা বৃত্তান্ত" বইয়ের জন্য বাংলা একাডেমি কর্তৃক "হালীমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান লেখক পুরস্কার" -এ ভূষিত হয়েছেন।