বিশ্ব আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় আমেরিকা নেমে পড়েছিল রোনাল্ড রিগানের যুগেই। যা রাখ-ঢাক সরিয়ে প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে আজ ওয়াকার বুশের আমলে। ইরাক আগ্রাসনের মিথ্যা কারণ ঢাকতে গিয়ে নিত্য নতুন যে সমস্ত অজুহাত দাঁড়া করানো হচ্ছে, তা প্রমাণ করে বিশ্ব দখলে তাদের বেপরোয়া মনোভাব। এখন পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফিলিস্তিনিদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। তাই প্রয়োজন একে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা। প্রথম মহাযুদ্ধের শেষে মধ্যপ্রাচ্য লোভনীয় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে তেল ও ভৌগলিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে থাকার জন্য। মধ্যযুগব্যাপি ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ কাল সময় পর্যন্ত ইউরোপ ইহুদি নিধনের ঘটনাবলী একটি করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। ইউরোপের স্থানে অধিষ্ঠিত হল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষে আমেরিকা। ইরাক আগ্রাসনের পর প্রকাশ হয়েছে রোডম্যাপ। সব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ফিলিস্তিনি মুক্তি সংগ্রামকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার মহা চক্রান্ত। এই রোডম্যাপ নামক তীরটির মাথায় বসানো হয়েছে এ্যারিয়াল শ্যারনকে। বুশের হরিহর আত্মা বন্ধু। বুশের যুদ্ধাস্ত্রের সহযোগিতায় বৃহত্তর ইসরাইল গড়ার আর্কিটেক্ট। শান্তি মীমাংসার হাওয়া বইলেই শুরু হয় টেরোরিস্ট আখ্যায়িতদের টার্গেট কিলিং। আজ কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিশ্ব জনমত অনেক সজাগ ও সরব। তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। ইরাক আগ্রাসন পরবর্তী বিশ্বব্যাপী আগ্রাসন বিরোধী ও শান্তি সপক্ষে কোটি মানুষের ঢলকে বলা হয়েছে দ্বিতীয় সুপার পাওয়ার। স্বাধীনতর অর্থ তো শুধু শাসনের ক্ষেত্রে বিদেশী আধিপত্য অপসারণ করে নিজ দেশের লোককে শাসনের গদীতে বসানো নয়। স্বাধীতার অর্থ অর্থনৈতিক মুক্তিও। নতুন চেহারায় আসা সাম্রাজ্যবাদের অর্থনৈতিক চেহারা আজ তার নিজের দেশবাসীও চিনে ফেলছে। যার প্রমাণ মেলে ১৯৯৯ সালে সিয়াটলেআরই প্রমাণ আজ মিলছে সারা বিশ্বে। তাই প্রশ্নটা সাম্রাজ্যবাদ পরাজিত হবে কি না সেখানে নয়। প্রশ্নটা হচ্ছে বিশ্ব জনতার ঐক্যবদ্ধতা কোন পথে অর্জিত হবে। মুসলিম বিশ্ব বলে পরিচিত অংশের জনতা কি এ সংগ্রামে সামিল হবে না? তারই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এ গ্রন্থের মাধ্যমে।
Title
সন্ত্রাসী নয় ওরা মুক্তিযোদ্ধা : মধ্যপ্রাচ্য ইসরাইল আমেরিকা ও রোডম্যাপ
১৯৪৭-এ যখন ভারতীয় উপমহাদেশ বিভাজনের কবলে পড়ে, আবু মােহাম্মদ মজহারুল ইসলাম তখন আঠার বছরের টগবগে তরুণ। এই তরুণরাই সেদিন রুখে দাড়িয়েছিল সাম্প্রদায়িক ও নয়া-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র পাকিস্তানের শােষণের ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে। আবু ইসলাম ১৯৪৭-য়েই বগুড়া থেকে ঢাকা এসেছিলেন। গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলনে যােগ দিতে; সদ্য ম্যাট্রিক পাস যুবক সক্রিয় হলেন বগুড়ার গণতান্ত্রিক যুবলীগের নেতৃত্বে। ১৯৪৮ থেকে সারা পূর্ব বাংলায় গড়ে উঠা ভাষা আন্দোলনের ঢেউ লেগেছিল বগুড়াতেও। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ তখন বগুড়ায় স্যার আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ । আবু ইসলাম বগুড়ায় ভাষাআন্দোলনের মিছিলে সামনের সারিতেই ছিলেন। তারপর ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে পূর্ব বাংলার । গণতান্ত্রিক বামপন্থীদের সংগ্রামে তিনি হয়ে ওঠেন। বগুড়ার রাজপথের সাহসী সৈনিক। ১৯৪৮ থেকেই পূর্ব বাংলার গণতন্ত্রকামী মানুষের অধিকার দমনে পাকিস্তানি শাসকদের দমননীতি ক্রমশ প্রচণ্ড হয়ে ওঠে । ৫০-এর দশকের প্রথম পাদেই গ্রেফতার হন আবু ইসলাম কিছুদিন আত্মগােপন থাকার পর । অতঃপর কারাগার থেকেই পরীক্ষা দিয়ে প্রথম বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পাস (১৯৫৬)। মুক্তি পাবার পর আজিজুল হক কলেজ থেকে বি.এ. (১৯৫৮) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি. (১৯৬০)। ১৯৬১ সাল থেকে বগুড়ার আদালতে আইন ব্যবসায় নিয়ােজিত। তাঁর জীবনের শেষ যুগ কেটেছে কানাডার টরটোতে সপরিবারে প্রবাসে । শুরু করেছিলেন নতুন করে অধ্যয়ন ও লেখালেখি । কিন্তু ঘাতক ক্যান্সার তার লেখালেখির পরিকল্পনা সমাপ্ত করতে দেয়নি। তবুও। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে আশা করতেন, পৃথিবী একদিন শােষণমুক্ত হবে; মানুষ হবে দীর্ঘজীবী।