সময়টা স্বাধীনতা যুদ্ধের কয়েক বছরের পূর্বের। বলতে গেলে পাকিস্তান আমলের শেষ দিকের কথা। ঢাকার অদূরে বিক্রমপুর মহকুমার পালগাঁও গ্রামে নন্দিনি বাবা-মা সহ বসবাস করে। উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র নন্দিনির উপর নানান জুলুম অত্যাচার, নির্যাতনের কথা এখানে ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস হয়েছে। ষোড়শী কন্যার খোলস থেকে সতেরো বছরের কুমারী কন্যার খাতায় সবেমাত্র নন্দিনি নাম লিখিয়েছে। সতেরো বছরের মহিমা বোঝার পূর্বেই তালুকদারের চিকন জালের ফাঁদে পা দিয়ে নারীজীবনের বড় সম্পদ নন্দিনির সতীত্বের উপর কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। তালুকদার কর্তৃক নন্দিনি শুধু তার সতীত্বই হারায়নি, অবৈধ সন্তানও গর্ভে ধারণ করে। আমাদের ঘুণে ধরা সমাজে বৈধ সন্তানেরই কদর মিলে না, সেখানে একটি অবৈধ সন্তানের কদর কতটুকু মিলবে তা সহজেই বোঝা যায়। নন্দিনি গর্ভবতী হওয়া থেকে শুরু করে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পর্যন্ত অবৈধ সন্তানকে নিয়ে অমানবিক জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করেছে। তালুকদারের বুদ্ধিতে নন্দিনির বাবা-মা নষ্ট মেয়ের অপবাদ থেকে বাঁচার জন্য ভোলানাথের মত বাপের বয়সী পাত্রের সহিত বিয়ে দিয়ে দেয়। এতেও নন্দিনির শেষ রক্ষা হয়নি। শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হবার পর নন্দিনি রানীর পাল্লায় পড়ে নিজের সোনার অঙ্গকে টাকার দাড়িপাল্লায় বিক্রি করতে থাকে। এত কিছুর পরও সমরেশের মত এক দরিদ্র যুবক নন্দিনিকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। নন্দিনিও ঘাটে নৌকা বাঁধার মত সমরেশের উপর ভালবাসার চর্চা চালিয়ে যায়। কিন্তু যখন নন্দিনি তার সোনার অঙ্গ চড়া দামে সবার মাঝে বিলিয়ে দিতে লাগল ঠিক তখন সমরেশ মনের হাজারো নজর নন্দিনির উপর থেকে উঠিয়ে নিতে শুরু করলো। একদিন দিনের বেলায় নন্দিনির বিশেষ কাজ করার সময় সবার নজরে পড়ায় সমরেশ নন্দিনিকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়। নন্দিনির বিদায় বেলায় সমরেশ বুকের ভিতরের ভালবাসাকে চাপা রেখে বলেÑমনে ও শরীরে জমানো খাদ জেলখানায় গিয়ে চিতার আগুনে জ্বলে পুড়ে খাঁটি সোনা হয়ে আসতে পারলে আমি তোরে গ্রহণ করব। আমি সেই দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করব।
Saadat Al Mahmud- ভিন্নধারার কথাসাহিত্যিক। তিনি এক নভেম্বর ১৯৭৬ সালে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুরের ডুবাইল গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মু. আব্দুর রাজ্জাক প্রথমে স্কুল শিক্ষক পরবর্তীতে জেলা শিক্ষা অফিসার হয়ে অবসরে যান। মাতা গৃহিণী। ছয় ভাই-বোন এর মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক। তার লেখা গল্প-উপন্যাস-শিশুতোষ পড়লে তাকে একজন লেখার জাদুকর বললে বেশি বলা হবে না। কথাসাহিত্যিকের পাশাপাশি তিনি নাট্যকার, প্রবন্ধকার ও সাংবাদিক। তিনি দৈনিক মুক্তকন্ঠ, নয়া দিগন্ত, ইনকিলাব, সমকাল, ঢাকা ট্রিবিউন, সকালের খবর, বর্তমান, প্রতিদিনের সংবাদ, বাংলাদেশের খবর ও দেশ রূপান্তর পত্রিকায় বিভিন্ন সম্মানজনক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বহুল প্রচারিত দৈনিক খোলা কাগজ ও পরিবর্তন ডটকমে মহাব্যবস্থাপক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ‘চিতার আগুনে’ উপন্যাসটি সাদত আল মাহমুদের প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ। তার একাধিক প্রকাশিত জনপ্রিয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে ইতিহাস ভিত্তিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস যথাক্রমে এক আনা মন ও রাজাকারকন্যা, প্রসব বেদনা, রমনীদ্বয় অন্যতম। তার প্রতিটি উপন্যাসের নামকরণ অদ্বিতীয় ও আকর্ষণীয়। তিনি শিশুদের জন্য লিখেছেন ভৌতিক গল্প ‘ভূত ধরার অভিযান’ ও শিশুতোষ ‘গগেনদার গল্পের ঝুড়ি’ বইটি।