"কবিতার কী ও কেন" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ সর্বসম্মত কোনও বর্ণনা কিংবা সংজ্ঞা না-পাবার যে অসুবিধা, কবিতার আলােচক মাত্রেই কখনও-না-কখনও তার সম্মুখীন হন। তখন কীভাবে তাকে কাটিয়ে উঠবার চেষ্টা করেন তারা? তাদের কেউ-বা কোনও পূর্বাচার্যের দেওয়া সংজ্ঞাকে পুরােপুরি মেনে নিয়ে অতঃপর তারই আলােয় চিনবার চেষ্টা করেন যে, কোনটা কবিতা আর কোনটা নয়। কেউ-বা সেক্ষেত্রে, কোনও পূর্বাচার্যের সংজ্ঞাকে একেবারে পুরােপুরি হয়তাে মেনে নেন না, কিন্তু তারই সূত্র ধরে চেষ্টা করেন অন্য কোনও সংজ্ঞা নির্ধারণের। আবার কেউবা, অন্য-কারও সংজ্ঞার মুখাপেক্ষী-হয়ে, একান্তভাবে অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে, অন্য পথে এগিয়ে যেতে চান। চেষ্টা করেন, পূর্বলব্ধ যাবতীয় সংজ্ঞার সঙ্গে সম্পর্কহীন, কোনও নূতন সংজ্ঞা খুঁজে নিতে। কিন্তু সেই নৃতন সংজ্ঞা যখন খুঁজে পাওয়া যায়, তখন তা নিয়েও আবার নূতন করে বিরােধ ঘনিয়ে ওঠে। কাকে কবিতা বলে, এই প্রারম্ভিক প্রশ্নেরই কোনও সর্বজনগ্রাহ্য মীমাংসা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। মূলত কবিতার সংজ্ঞা নির্ধারণ ও লক্ষণ নির্ণয়ের এই যে নব-নব প্রয়াস, এবং তার থেকে সঞ্জাত এই যে বিরােধ, এই নিয়েই নানামাত্রিক তত্ত্ব আলােচনা সমালােচনার সন্নিবেশে এই গ্রন্থ। কবিতা কী, কবিতা কেন, কবিতা কোথায়, কবিতা কীভাবে- এই সব চিরন্তন মৌলিক প্রশ্নের সুলুক সন্ধানের প্রয়াস বইটিকে অনন্য করে তুলেছে। কবিতার কী ও কেন নিয়ে অনুপুঙ্খ এই সমৃদ্ধ রচনা কবি, কবিতার পাঠক এবং সাহিত্যের শিক্ষকদের জন্য একটি জরুরী গ্রন্থ হিসেবে নন্দিত হবে নিঃসন্দেহে।
Nirendra Nath Chakraborty (১৯ অক্টোবর ১৯২৪-) একজন ভারতীয় বাঙ্গালি কবি। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে আবির্ভুত আধুনিক বাংলা কবিদের অন্যতম। উলঙ্গ রাজা তাঁর অন্যতম বিখ্যাত কাব্যগ্রন্হ। এই কাব্যগ্রন্হ লেখার জন্য তিনি ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। কবি পশ্চিমবঙ্গে বাংলা আকাদেমির সাথে দীর্ঘকাল যুক্ত। তাঁর শৈশবের পুরোটাই কেটেছে পূর্ববঙ্গে যা বর্তমান বাংলাদেশ, ঠাকুরদা আর ঠাকুমার কাছে। কবির ঠাকুরদা কর্মজীবন কাটিয়েছেন কলকাতায়। কর্মজীবন শেষে ৫০ বছর বয়সে কলকাতার পাট চুকিয়ে বাংলাদেশের ফরিদপুর বাড়ি চান্দ্রা গ্রামে চলে আসেন। তার বাবা কলকাতাতেই ছিলেন। কলকাতার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে কাজ করতেন। দুই বছর বয়সে কবির মা বাবার কর্মস্থল কলকাতায় চলে যান। কবি থেকে যান ঠাকুরদার নাম লোকনাথ চক্রবর্তীর কাছে। গ্রামে কাটিয়েছেন মহা স্বাধীনতা—ইচ্ছেমতো দৌড়ঝাঁপ করে। কখনো গাছে উঠছেন; কখনো আপন মনে ঘুরেছে গ্রামের এই প্রাপ্ত থেকে অন্যপ্রাপ্তে। চার বছর বয়সে কবির কাকিমা বলছিলেন, 'তুই তো দেখছি কবিদের মতোন কথা বলছিস!' সেই সময়েই মুখস্থ করেছিল গ্রামে কবিয়ালরা, কবিগান,রামায়ণ গান। গ্রামের দিনগুলো খুব সুন্দর কেটেছেন তাই তিনি এ গ্রামের বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় যেতে চাইতেন না। তবে ঠাকুরদার মৃত্যুর পর গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় চলে যান। এখন তিনি কলকাতায় থাকেন। ১৯৭৪ সালে সাহিত্য আকাদেমি, তারাশঙ্কর-স্মৃতি ও আনন্দ শিরমণি পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন।