"সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রক্তাক্ত অধ্যায় ১৯৪৬-১৯৬৪ পত্র-পত্রিকার ভাষ্য" ১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে ভারত-বিভাগ উপমহাদেশ জুড়ে বইয়ে দিয়েছিল রক্তস্রোত, তছনছ করে দিয়েছিল অযুত মানুষের জীবন। এই দুর্দৈব কেবল দেশভাগের পূর্বাপর সময়ে সীমিত ছিল না, দাঙ্গা ও সঞ্জত বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, হরণ করেছে জীবন, বিনষ্ট করেছে সমাজের সংস্থিতি। দেশভাগ জন্ম দিয়েছিল আরেক অভাবিত সমস্যার—উদ্বাস্তুর দল নেমেছিল এক দেশ থেকে আরেক দেশে, টলে উঠেছিল লক্ষ মানুষের সংসার, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। দেশভাগ ও দাঙ্গার বিপুলায়তন ট্র্যাজেডি বিচার-বিশ্লেষণে বাংলার সারস্বত সমাজ এখনও রয়েছে অনেকাংশে দুর্বল। ১৯৪৬-৪৮, ১৯৫০ ও ১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার যে-রক্তাক্ত অধ্যায় তা বিশ্লেষণে ইতিহাসের উপকরণ সংগ্রহ ও উপস্থাপনের পরিশ্রমী কাজ করেছেন গবেষক সুকুমার বিশ্বাস। কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি, ঢাকার বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন গ্রন্থাগারে পত্রিকার সংবাদ কপি করে এই পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত কোনাে সহজ কাজ ছিল না। প্রায় ক্ষেত্রে পুরনো পত্রিকার পাতা হয়ে পড়েছে ঝরঝরে, ফটোকপি করবার উপায় নেই, দিনের পর দিন খেটে হাতে তৈরি করতে হয়েছে কপি। তার নিষ্ঠাবান কাজের পরিচয়বহ এই গ্রন্থ বাংলাদেশের ইতিহাস, তার সঙ্কট ও সঙ্কট-মােচনের সাধনার পরিচয় বহন করে। নতুন আলােকে আমাদের দেখতে সাহায্য করে অতীতের রক্তাক্ত পর্বগুলাে। আশা করা যায় এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে রক্তরেখা মুছে মানবিক ও সম্প্রীতির সমাজ নির্মাণ-সাধনা জোরদার করে তুলতে পারবে বাঙালি ও বাংলাদেশ। ইতিহাস অনুসন্ধান ও অনুধাবনে মাইলফলক হয়ে থাকবে এই বই।
ড. সুকুমার বিশ্বাসের জন্ম ১৯৪৫ সালে। ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পােস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। কিন্তু এখানেই গবেষকদের গবেষক’ নামে খ্যাত ড. বিশ্বাসের গবেষণাকার্য শেষ হয় না। পরবর্তীকালে জাপান সরকারের বৃত্তি নিয়ে ইনস্টিটিউট অব ডেভলপিং ইকনমিজ-এ ফেলাে হিসেবে এবং হিরােশিমা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া টোকিয়াে ইউনিভার্সিটি অব ফরেন স্টাডিজ-এ ওরাল হিস্ট্রি অব বাংলাদেশ ওয়ার অব লিবারেশন নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন। বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমীতে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন দীর্ঘ তিরিশ বছর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তন্নিষ্ঠ গবেষণার পাশাপাশি উভয় বাংলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রামাণ্য ইতিহাস রচনাও তার অন্যতম কৃতিত্ব। ড. বিশ্বাসের উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলি হল : বাংলাদেশের নাট্যচর্চা ও নাটকের ধারা ১৯৪৭-১৯৭১, অসহযােগ আন্দোলন '৭১ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, মুক্তিযুদ্ধে রাইফেলস ও অন্যান্য বাহিনী, একাত্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সিপিআইএম ও গণশক্তি, Communal Riots in Bangladesh and West Bengal 1947-1964, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আগরতলা ত্রিপুরা : দলিলপত্র, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১: নারী, প্রত্যক্ষদর্শী ও অংশগ্রহণকারীর বিবরণ।