ঔপন্যাসিক চিনুয়া আচেবে: পাঠ ও বীক্ষণ বইখানার উদ্দেশ্য হলো ‘স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের একজন শিক্ষার্থীকে আচেবে বুঝতে সহায়তা করা। প্রথমত আচেবের জীবনের কোন্ সময়টি কোন্ সাহিত্যকর্মটির প্রসব ঘটালো এবং সে প্রসবে কোন রাজনৈতিক-সামাজিক ঘটনাবলির সম্পৃক্ততা রয়ে গেল তা বোঝার জন্য থাকলো বইয়ের প্রথম প্রবন্ধ ‘চিনুয়া আচেবে: একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ ও পরিচিতি’। পরিচিতি-উত্তর পর পর তিনটি প্রবন্ধ আচেবের নিজের লেখা: ক) রাণী ভিক্টোরিয়ার নামে; খ) আফ্রিকান লেখক ও ইংরেজি ভাষা; ও গ) কনরাডের হার্ট অব ডার্কনেস-এ চিত্রিত জাতিবিদ্বেষ। প্রথম প্রবন্ধটিতে আচেবে বলেছেন তিনি কী সাংস্কৃতিক পুষ্টি ও উত্তরাধিকার নিয়ে লেখার জগতে প্রবেশ করেছেন তার বৃত্তান্ত। দ্বিতীয় প্রবন্ধটিতে আচেবে বলেছেন তিনি আফ্রিকান সাহিত্য বলতে কী বোঝেন, আফ্রিকান সংস্কৃতি বলতে কী বোঝেন এবং আফ্রিকান সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক তাঁর এই ভাবনার অভিব্যক্তিতে ইংরেজি ভাষা তাঁকে কিভাবে সাহায্য করছে- এই সকল প্রসঙ্গ। তৃতীয় প্রবন্ধটিতে তিনি দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়ে বলেছেন আফ্রিকান মানস বলতে তাঁর ধারণা কী এবং পশ্চিমা মানসে এই আফ্রিকাকে নিয়ে কি ভয়াবহ বিকার এমনকি পশ্চিমা আলোকিত সমাজে পর্যন্ত রয়েছে তার কনরাডিয় ইতিবৃত্ত। আফ্রিকা, আফ্রিকান মানস, আফ্রিকান সাহিত্য, আফ্রিকান শিল্প ইত্যাকার প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আচেবের নিজের ভাবনাগুলো উপস্থাপনের পরে উপস্থাপিত হয়েছে আচেবের সৃজনকর্মের বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহাসিক উদ্দীপকসমূহ সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞদের বয়ান। এই বয়ানে রয়েছে দুটি প্রবন্ধ: নর্থ ক্যারোলিনা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির আফ্রিকান সাহিত্যের অধ্যাপক ওদে ওগিদি’র লিখিত ‘আচেবের লেখার প্রসঙ্গসূত্র’ এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তপন বসু’র লিখিত ‘থিংস ফল এ্যাপার্ট পাঠের জন্য’। ইতিহাস ও সাহিত্যের তাত্ত্বিক রসায়নকে সাথে নিয়ে ওদে ওগিদি তাঁর প্রবন্ধে দেখিয়েছেন আচেবে কলোনিয়ালিজমের সকল আশীর্বাদের পুষ্টি গ্রহণ করেও কীভাবে কলোনিয়ালিজমের বিপরীতে আফ্রিকান এসেন্সের সাহিত্যিক প্রকাশ ঘটাতে পারলেন। আচেবের সাহিত্যভাবনা বিষয়ে পরিচয়মূলক লেখাটিতে তপন বসুও বিশেষ করে থিংস ফল এ্যাপার্ট-এর প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে দেখিয়েছেন আচেবে কীভাবে নাইজেরিয় জাতিরাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক-সামাজিক ইস্যুগুলোকে কথাসাহিত্যে ভাষা দিয়েছেন।
তৎপরবর্তী তিনটি প্রবন্ধ হলো বিশেষভাবে থিংস ফল এ্যাপার্ট-এর বহুমাত্রিক বিশ্লেষণী সমালোচনা। আমেরিকার প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সাইমন গিকান্দির লেখা ‘চিনুয়া আচেবে এবং আফ্রিকান সাহিত্যের আবিষ্কার’ শীর্ষক প্রথম প্রবন্ধটি থিংস ফল এ্যাপার্ট-এর বহুমাত্রিক বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে দেখায় আচেবে কীভাবে আফ্রিকার স্বরটি উপন্যাসের মাধ্যমে চিনতে ও চেনাতে পারলেন। দ্বিতীয় প্রবন্ধটির শিরোনাম ‘থিংস ফল এ্যাপার্ট-এ কেন্দ্র কিভাবে সবকিছু ধরে রাখলো’ এবং এর লেখক কানাডাস্থ ইউনিভার্সিটি অব টরোন্টো’র সেন্টার ফর কম্প্যারেটিভ লিটারেচারের পরিচালক প্রফেসর নেইল টেন কোরটেনার পশ্চিমা জ্ঞানবিদ্যার ভারী ভারী শিরোনামের তত্ত্বের বিপরীতে আফ্রিকান শিরোনামহীন জ্ঞানজগতের বিষয়াদি থিংস ফল এ্যাপার্ট-এর বয়ান থেকে তুলে এনে এমন বিস্ময়করভাবে উপস্থাপন করেছেন যে পাঠকের থ’ বনে যাওয়ার বাইরে উপলব্ধি থাকে না। তৃতীয় প্রবন্ধটি বিশ্বসাহিত্য সম্বন্ধে বাংলাদেশের অন্যতম মহীরুহ সমালোচক প্রফেসর ড. ফকরুল আলম বিরচিত। প্রবন্ধটির নাম ‘চিনুয়া আচেবের থিংস ফল এ্যাপার্ট: একটি ইকোক্রিটিকাল পাঠ’। সাম্প্রতিক সাহিত্যতত্ত্ব ইকোক্রিটিসিজমের আলোকে কোনো প্রায়োগিক প্রবন্ধ বাংলাদেশে এটিই প্রথম। বইয়ের পরবর্তী চারটি প্রবন্ধ আচেবের অপর চারটি উপন্যাসের প্রতিটির ওপর এক একটি পরিচিতিমূলক লেখা। তন্মধ্যে নো লঙ্গার এ্যাট ইজ-এর ওপর লিখিত নিউইয়র্কের বিংহামটন ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফিলিপ রজার্সের প্রবন্ধ ‘নো লঙ্গার এ্যাট ইজ: চিনুয়া আচেবের হার্ট অব হোয়াইটনেস’ শুধু পরিচিতির প্রয়োজনসীমায় আবদ্ধ নয়, বরং অনেকখানি বীক্ষণাত্মক। এ্যারো অব গড বা দেবতার ধনুর্বাণ বিষয়ে খালিকুজ্জামান ইলিয়াসের প্রবন্ধটি মূলত এ্যারো অব গড-এর বাংলা অনুবাদ দেবতার ধনুর্বাণ গ্রন্থের ভূমিকা থেকে চয়িত। ফলত স্বাভাবিকভাবেই এটি উক্ত গ্রন্থের ওপর একটি পরিচিতিমূলক প্রবন্ধ। আ ম্যান অব দ্য পিপল এবং এ্যান্টহিলস অব দ্য সাভানা- এর ওপর লিখিত প্রবন্ধদ্বয়ও একইভাবে পরিচিতিমূলক। প্রবন্ধদুটিতে সংশ্লিষ্ট উপন্যাসদ্বয়ের কাহিনিসংক্ষেপ বর্ণনা করে উক্ত কাহিনি সমালোচকীয় ধারায় উপলব্ধিযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে কিছু প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ রয়েছে।
বইটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরকে আচেবে বুঝতে সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়।
জন্ম মুক্তিযুদ্ধের দু বছর আগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বি.এ. (অনার্স) ও এম.এ.। Juan Rulfo and Latin American Magic Realism শীর্ষক গবেষণার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি.। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান। প্রকাশিত গ্রন্থ: 'দাতব্য কবিতালয়' (কাব্য) ও 'চরিতাভিধান: রাজাপুরের গুণী ও বিশিষ্টজন'।