বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নতুন কোন বিষয় নয়। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সার্বজনীন ভোটাধিকার, স্বায়ত্তশাসন, স্বাধিকার, স্বাধীনতার সংগ্রামকে ধর্মের এই রাজনৈতিক ব্যবহার মোকাবেলা করেই এগুতে হয়েছে। বাংলাদেশ উত্তরকালে ধর্মের এই রাজনৈতিক ব্যবহার সাংবিধানিকভাবেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল । কিন্তু সামরিক শাসনে সেই ধর্মের রাজনীতি পুনর্বাসিত হয়েছে কেবল নয়, সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং বিধানে ধর্মকে রাষ্ট্রনীতির অংশ করা হয়েছে । অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন এবং বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থানের কারণে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ধর্ম এখন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে উপস্থিত। বাংলাদেশের জনগণ অবশ্য ধর্মের এই রাজনৈতিক ব্যবহার দ্বারা কোন কোন সময় আচ্ছন্ন হলেও যখনই রাষ্ট্রীয় সত্তা, গণতান্ত্রিক অধিকার, মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার স্বাধীনতার বিষয় সামনে এসেছে তখন তাকে প্রত্যাখ্যান করতে এতটুকু দ্বিধা করেনি। সম্প্রতি সময়ে রাজনীতিতে ধর্মের এই ব্যবহার বাংলাদেশে রাষ্ট্র ও সমাজে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী ধ্যান-ধারণার বড় ধরনের প্রসার ঘটিয়েছে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর অংশীদারিত্বকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্র, প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এমনকি অর্থনীতির ক্ষেত্রেও তারা তাদের প্রভাব বৃদ্ধি করেছে, কোথাও কোথাও নিয়ন্ত্রণও প্রতিষ্ঠা করেছে।
আত্মগােপনে যাওয়ার কারণে এ দণ্ডাদেশ ভােগ করতে হয়নি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করে মুক্ত স্বাধীন দেশে মুক্তজীবনে ফিরে আসেন তিনি। সেই বাংলাদেশেও এরশাদের সামরিক শাসনের বিরােধিতা করায় তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বন্দি থাকতে হয়। ছাত্রজীবনের পর মওলানা ভাসানীর হাত ধরে কৃষক আন্দোলন ও জাতীয় রাজনীতিতে তার প্রবেশ। ছাত্রজীবনেই গােপন কমিউনিস্ট পার্টির কাছে কমিউনিজমে দীক্ষা। কমিউনিস্ট আন্দোলনের মস্কোপিকিং বিভক্তিতে পিকিংপন্থীর কাতারে পড়ে যান। কিন্তু অচিরেই এ দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে স্বাধীনভাবে সংগঠিত করতে প্রথমে কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ববাংলা সমন্বয় কমিটি, বাংলাদেশ পরবর্তীতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (লেনিনবাদী), পরে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সংগঠিত করেন। পার্টির গােপন অবস্থায় প্রথমে ভাসানী ন্যাপের প্রচার সম্পাদক, পরে ইউপিপি’র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করেন। পার্টি সম্পূর্ণ প্রকাশ্যে এলে তিনি প্রথমে ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, পরে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচিত হন। কৃষক আন্দোলনের সফল সংগঠক রাশেদ খান মেনন মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে পাকশী, মহীপুর ও সন্তোষের ঐতিহাসিক কৃষক সম্মেলন ও সমাবেশের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন কৃষক সমিতির দপ্তর সম্পাদক ও পরে কৃষক মুক্তি সমিতির সভাপতি ছিলেন। রাজনীতির কারণে দু’বার তার জীবননাশের চেষ্টা হয়। দেশের মানুষের ভালােবাসায় জীবনে ফিরে এসে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। ১৯৭৯ ও ১৯৯১-এর নির্বাচনে তিনি দু'বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং সংসদের পাবলিক এ্যাকাউন্টস কমিটি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেন। তার ছাত্রআন্দোলনের সহকর্মী লুচ্ছুননেসা খান বিউটি তার স্ত্রী কন্যা সুবর্ণা আফরিন খান, পুত্র আশিক রাশেদ খান।