"স্বর্গের শেষপ্রান্তে" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: চারিদিকে সবুজের সমারােহ আর জলভারনত আকাশ সুউচ্চ শিরীষের শীর্ষ ছুঁয়ে যায়। বছরের অধিকাংশ সময় পাহাড়ের পায়ের কাছে প্রসারিত বনভুমি ও চা-বাগানে বর্ষা রাজত্ব করে। মাঠ-পথ জলে ভরা। ঝােরাগুলি তীব্র স্রোতে উন্মত্ত। নালা-নর্দমা নদীর মতাে বেগবান। গােরু, বাছুর, এমনকী হাড়িয়াভাের নেশাগ্রস্ত মানুষ পর্যন্ত ভাসিয়ে নিয়ে যায়। অথচ বর্ষার জন্য কাজে বিরাম দেবার উপায় নেই। মানকচুর পাতায় মাথা ঢেকে কাজে বেরিয়েছে সবল আদিবাসী পুরুষ বুখলা। বাঙালি বাবুবাড়ির দুই বােন রিনিঝিনি ভারী খুশি তাকে দেখে। বাঙালি, নেপালি, আদিবাসী মদেশিয়া, রাভা, কোচ, মেচ, গারাে বিবিধ জাতি-উপজাতি। অধ্যুষিত যে জীবন চা-বাগানে— তার আপাত সারল্য এখানকার প্রকৃতির মতােই মনােরম। আশ্চর্য দেশের তারাভরা আকাশের নীচে পন্টু ও ঝিনি দুই বালক-বালিকা নিঃশব্দে ভালবাসা বিনিময় করে। বড় বেদনার সঙ্গে তারা দেখে বড়দের জগৎ। প্রেম-অপ্রেম, হিংসা, মিথ্যা, বঞ্চনা, সন্দেহ, আত্মসর্বস্বতার চিত্রলিপি। তারই মধ্যে নিটোল জলবিন্দুর মতাে তারা গড়ে তােলে নিজস্ব স্বর্গ। পিতামহী কবি সরােজিনীর কাছে আদিবাসী রমণী অস্পৃশ্য কিন্তু আদিবাসী কিশাের কালুয়ার এঁটো পেয়ারা ভাগাভাগি করে খায় কিশােরী ঝিনি। ডিমওয়ালার ছেলে ধবলুর প্রেমে পড়ে রিনি ক্রমশ দিগন্তে মিলিয়ে যায়। কল্পকথার ডােম্বী তাল এবং সনাতন ভুত রূপকের মতাে ছড়িয়ে থাকে সমগ্র উপন্যাসে। প্রকৃতি এবং ছােটদের জগৎ। এ উপন্যাস, ছােটদের হৃদয়তুলিকায় আঁকা বড়দের জটিল পৃথিবী।
Tilottama Majumder জন্ম: ১১ জানুয়ারি ১৯৬৬, উত্তরবঙ্গ। কালচিনি চা-বাগানে ইউনিয়ন একাডেমি স্কুলে পড়াশোনা। ১৯৮৫-তে স্নাতক স্তরে পড়তে আসেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে। ১৯৯৩ থেকে লিখছেন। পরিবারের সকলেই সাহিত্যচর্চা করেন। আনন্দ পাবলিশার্সে সম্পাদনাকর্মের সঙ্গে যুক্ত। প্রথম উপন্যাস: মানুষশাবকের কথা। ‘বসুধারা’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আছে রাজপাট, একতারা, চাঁদের গায়ে চাঁদ ইত্যাদি। ভালবাসেন গান ও ভ্রমণ।