ভূমিকা চলচ্চিত্র সম্পাদনা : রীতি ও নীতি ধীমান দাশগুপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাণের তিনটি মূল পর্বের মধ্যে অর্থাৎ চিত্রনাট্য রচনা, চিত্রগ্রহণ ও সম্পাদনাকর্মের মধ্যে সম্পাদনা হল তৃতীয় বা শেষ পর্ব। সম্পাদনার কাজটা সব শিল্পেই আছে, সিনেমায় তার কাজ প্রাথমিক সৃষ্টির পর, যা নিশ্চয়ই সুবিধাজনক। কিন্তু তার ফলে পরিচালকের আবার এই অসুবিধা দেখা দেয় যে তাঁকে চিত্রনাট্য রচনার সময় থেকেই এবং বিশেষত ক্যামেরার মাধ্যমে শুটিংয়ের সময়ে ছবির ভাবী সম্পাদনাশৈলীর কথা পুরোপুরি ও সর্বদা মাথায় রাখতে হয়। সম্পাদনা যদিও বিন্যাস, ছবির চূড়ান্ত বিন্যাস, বর্ণ থেকে শব্দ থেকে বাক্য থেকে অনুচ্ছেদ থেকে পরিচ্ছেদ পর্যন্ত এক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত ধারাক্রম, কিন্তু প্রতিটি সাংগঠনিক উপাদানেরও তো আবার নিজস্ব সমবায় ও বিন্যাস রয়েছে। যেমন চিত্রগ্রহণের সময় ভুল আলোকসম্পাত যেন এমন এক বাক্য রচনা যাতে বিশেষণগুলোর স্থান বিপর্যয় ঘটে গেছে। তেমনি চিত্রনাট্য রচনার সময়ে অসঙ্গতি দুর্বলতা ইত্যাদি যেন বানানে শব্দে পদপ্রকরণেই ভুল যার ফলে উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে, অর্থ বা ব্যঞ্জনা স্পষ্ট হচ্ছে না, শিথিল হয়ে পড়ছে অভিঘাত। কুরোশাওয়া একবার বলেছিলেন, চলচ্চিত্র নির্মাণের তিনটি মূল পর্বের মধ্যে সম্পাদনাই সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যদি ‘সর্বাপেক্ষা' বলে কোনো কথা থেকে থাকে, কিন্তু চিত্রনাট্যটা যদি ভালো না হয় তবে কোনো রকম সম্পাদনাই কোনো কাজে আসবে না। অর্থাৎ সম্পাদনাকর্মকে গ্রহণ করতে হবে সমগ্র চিত্র-নির্মাণকর্মের পরিপ্রেক্ষিতেই, এক অঙ্গাঙ্গী অংশ হিশেবে।