"জাগরী (রবীন্দ্র পুরস্কার প্রাপ্ত ১৯৫০)" বইটির শেষের ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ রাজনৈতিক সংগ্রাম ও রাষ্ট্রচর্চার পর্যায়ভুক্ত। উপন্যাসসমূহের মধ্যে সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘জাগরী কারাগারে বন্দি একজন স্বাধীনতা-সংগ্রামের যােদ্ধার। মৃত্যুমুহূর্তপ্রতীক্ষায় দুর্বিষহ, স্মৃতিভারাকুল ও কল্পনাজালবয়নে রুদ্ধশ্বাস, অন্তিম জীবনের। দুঃস্বপ্ন-বিভীষিকার এক অদ্ভুত ব্যঞ্জনাপূর্ণ ও আবেগতপ্ত চিত্র অঙ্কিত হইয়াছে। আসন্ন মৃত্যুসম্ভাবনা তাহার সমস্ত অনুভূতিকে এমন একাগ্র ও একলক্ষ্যাভিমুখী করিয়াছে যে, ইহারই টানে তাহার পূর্বজীবনের ইতস্তত-বিক্ষিপ্ত স্মৃতিসূত্রগুলি অনিবার্যভাবে এই সর্বগ্রাসী ভাবকেন্দ্রে সংহত হইয়াছে। মরণের অঙ্গুলিস্পর্শে জীবনের সমস্ত অভিজ্ঞতা, উহার বিচ্ছিন্ন খণ্ডাংশগুলি, উহার ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে আবর্তিত আশা-কল্পনাসমূহ। নানা তারসমন্বিত বীণার ন্যায় এক দুঃসহ-করুণ, উদ্দাম-ক্ষুব্ধ সুরে বাজিয়া উঠিয়াছে। বৈপ্লবিক প্রচেষ্টার বহুমুখী কর্মোদ্যম, তরুণ-মনের বিচিত্র। স্বপ্নবিলাস, অসম্ভব আদর্শকে রূপ দিবার জন্য নানা অসম্পূর্ণ প্রয়াস, উত্তেজনার তরঙ্গে তরঙ্গে ছুটিয়া- চলা শক্তির অভিযান ও উহাকেও বহুদূরে ফেলিয়া। আগাইয়া-যাওয়া কল্পনার অভিসার জীবনের এই বিরাট প্রাবহ বিলােপের সংকীর্ণ গিরিসংকটে। প্রবেশােখ হইয়া এক দুর্দম, ফেনিল সংগীতােচ্ছাসে ছন্দিত হইয়াছে। বিপ্লবের বস্তুরূপটি মানবাত্মার অপ্রশমিত আর্তিত নিবিড় স্পর্শে একটি সূক্ষ্মতর ভাবসত্তা অর্জন করিয়াছে।