ফ্ল্যাপে লিখা কথা এখন আমি নিজের পরিচয় দিচ্ছি গর্তজীবী নামে। ধানন্ডির যে ফ্ল্যাটবাড়িতে থাকি তাকে বলছি গর্ত। নিজেকে নিয়ে ছড়াও বানিয়েছি- “বাইরে যাব মারতে? থাক আমি গর্তে” আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, বিয়েবাড়ি, জন্মদিন খতনা উৎসব, সব বাতিল। গর্তে বসে লেখালেখি করি, ছবি দেখি, ছবি আঁকি, গান শুনি। এতে আমার একটা লাভ হয়েছে, মনের কিছু বন্ধ জানালা খুলে গেছে।
যে চার দেয়ালে আটকা পড়ে যায়, তাকে প্রকৃতি মুক্তি দেবার চেষ্টা চালায়। তার মনের বন্ধ দরজা-জানালা খুলে এক বিশেষ ধরনের মুক্তির ব্যবস্থা করে। কাঠপেন্সিলের লেখাগুলি সেই বিশেষ মুক্তির ফসল।
ভূমিকা লেখার আবার ভূমিকা কী? লেখাটাই তো ভূমিকা। ‘বলপয়েন্ট’ নামে কিছু লেখা আগে লিখেছিলাম। তার ধারাবাহিকতায় আরো কিছু লেখা হলো। হবারের নাম ‘কাঠপেন্সিল’। ‘ফাউনটেনপেন’ নামে শেষ পর্ব লেকার ইচ্ছা আছে। ‘বলপয়েন্ট’, ‘কাঠপেন্সিল’ সহজিয়া ধারার লেখা। ‘ফাউনটেনপেন’ হবে ‘কঠিনিয়া’।
হুমায়ূন আহমেদ নুহাশ পল্লী ১ নভেম্বর ২০০৯
সূচি * নিষাদনামা * রান্নাবান্না * প্রীতি-উপহার * আড্ডা * যদ্যপি পল্লীতে হিমু উৎসব * বিপদ-আপদ * একটি ভ্রমণ কাহিনী * মা * রসকষ * বোথাম সাহেবের বই * উৎসর্গপত্র * জন্মদিনের উপহার * লেখক বন্ধ * উন্মাদ-কথা * অসুখ * স্লাইড রুল * আমার আছে জল * শ্রোডিনজারের বিড়াল * নেত্রকোনার রসুলপুরে রবীন্দ্রনাথের আগমন
বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তী হুমায়ূন আহমেদ। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম স্থান দখল করে আছেন। একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও নাট্যকার এ মানুষটিকে বলা হয় বাংলা সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি বেশ সমাদৃত। বাদ যায়নি গীতিকার কিংবা চিত্রশিল্পীর পরিচয়ও। সৃজনশীলতার প্রতিটি শাখায় তাঁর সমান বিচরণ ছিল। অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ সফলতা এবং তুমুল জনপ্রিয়তা। স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালি জাতিকে হুমায়ুন আহমেদ উপহার দিয়েছেন তাঁর অসামান্য বই, নাটক এবং চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের বদৌলতে মানুষকে করেছেন হলমুখী, তৈরি করে গেছেন বিশাল পাঠকশ্রেণীও। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’ দেখতে দর্শকের ঢল নামে। এছাড়া শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, ঘেটুপুত্র কমলা প্রভৃতি চলচ্চিত্র সুধীজনের প্রশংসা পেয়েছে। অনন্য কীর্তি হিসেবে আছে তাঁর নাটকগুলো। এইসব দিনরাত্র, বহুব্রীহি, আজ রবিবার, কোথাও কেউ নেই, অয়োময়ো আজও নিন্দিত দর্শকমনে। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের জনক তিনি। রচনা করেছেন নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্পের মতো সব মাস্টারপিস। শিশুতোষ গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমূহ এর পাঠক সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমগ্র পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদক (১৯৯৪), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূধন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮), শিশু একাডেমি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদকসহ নানা সম্মাননা। হুমায়ূন আহমেদ এর বই, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য রচনা দেশের বাইরেও মূল্যায়িত হয়েছে৷ ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে পীরবংশে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। গাজীপুরে তাঁর প্রিয় নুহাশ-পল্লীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।