"একাত্তরে পরাশক্তির যুদ্ধ" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পায় ৪৪ বছর পূর্ণ হচ্ছে। আমাদের মহান স্বাধীনতা তথা মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত, পাকিস্তান ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, সােভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, সুইজারল্যান্ডসহ বহু দেশ এবং জাতিসঙ্ঘ পরােক্ষভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল এবং তাদের মধ্যে কূটনৈতিক চ্যানেলে বহু চিঠিপত্র আদান প্রদান হয়েছিল। কূটনীতিকরা অসংখ্য বৈঠক করেছেন। চিঠিপত্রের মধ্যে কোনােটি ‘মােস্ট কনফিডেন্টশিয়াল, কোনটি ‘মােষ্ট সিক্রেট' হিসেবে ছিল চিহ্নিত। সেসব চিঠিপত্র ও বৈঠকের বিবরণ এক মূল্যবান দলিল। কোনাে কোনাে দেশ সেইসব চিঠিপত্র পুস্তক আকারে প্রকাশ করেছে, কোনাে কোনাে দেশ এত দিন পর তা অবমুক্ত করেছে- যা আজ ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান। অবশ্য কিছু চিত্র অপমানজনক। কিন্তু বাস্তবতা হলাে বাংলাদেশ আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম। ইতিহাসের সেই মূল্যবান উপাদান জানার সুযােগ করে দিতেই এই বই। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিছু কষ্টকল্পিত বইও প্রকাশিত হয়েছে কিন্তু বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের অভিমত একমাত্র এই বইয়েই হয়ত পাওয়া যাবে। বিভিন্ন দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়সমূহের এসব গােপন তথ্য অন্যথায় অপ্রকাশ্যই থেকে যেত। তবে এই বই নিয়ে একটা খটকা আছে। বিভিন্ন দেশের জাতিরজনক, রাষ্ট্রনায়ক, সরকার প্রধান ও বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম ডিপ্লোমেটিক নােটে খুবই সংক্ষিপ্তাকারে উল্লেখ করা হয়েছে। তথ্যনির্ভর থাকতে গিয়ে সে নামগুলাে হুবহু সেভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে। এক অর্থে বিষয়টি দৃষ্টিকটু হলেও ইতিহাসের নিরিখে যৌক্তিক। মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসু পাঠক, গবেষক, কূটনীতিক, হবু কূটনীতিক, তরুন সমাজ, ইতিহাসবিদ ও সিরিয়াস পাঠকের জন্য এ গ্রন্থ এক অমূল্য সম্পদ। দৈনিক নয়াদিগন্তে কিস্তিতে এর অংশ বিশেষ প্রকাশকালেই ব্যাপক সাড়া ফেলে।
কায়কোবাদ মিলন বাংলাদেশের একজন অন্যতম লেখক ও সাংবাদিক। তাঁর জন্ম বরিশাল শহরে। তবে তাঁর স্থায়ী ঠিকানা কাঁঠালিয়া থানার শৌলজিয়ার মিয়া বাড়িতে। পেশায় তিনি পুরোদস্তুর সাংবাদিক। সংবাদমাধ্যমে আছেন প্রায় পাঁচ দশক ধরে। এই সময়ের সিংহভাগই কাজ করেছেন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়, প্রায় চল্লিশ বছর। পেশাগত জীবনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন বিভিন্ন সংবাদ সংস্থায়। তিনি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এর নেতৃত্বে ছিলেন বেশ কিছু সময়। জাতীয় প্রেস ক্লাবের শিশু শিক্ষা উপ-কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন পর পর দুই মেয়াদে। সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে ভারত ও নেপাল সফর করেছেন। এরই সাথে তিনি ঢাকা সাব-এডিটর্স কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকায় অবস্থিত বরিশাল বিভাগ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্বরত ছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি লেখালেখিও করেছেন তিনি। কায়কোবাদ মিলন এর বই সমগ্র আধুনিক পাঠকদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাঁর লেখার ধরণ পাঠকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। কায়কোবাদ মিলনের এর বই সমূহ হলো ‘মোসাদ (দুই খন্ড)’, ‘একাত্তরে পরাশক্তির যুদ্ধ’, ‘ঢাকা কলিকাতার যত যুদ্ধ’, ‘তুমি শুধু তুমি’ ইত্যাদি। তাঁর স্ত্রী দিলরুবা জলিল শাহিন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। কায়কোবাদ মিলন বাংলাদেশের সাংবাদিকতার অঙ্গনে এক অন্যতম উজ্জ্বল নাম। লেখক ও সাংবাদিক হিসেবে তিনি উপহার দিয়েছেন বেশ কিছু সাড়া জাগানো লেখা ও প্রবন্ধ। সংবাদ মাধ্যমগুলোয় একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে তিনি সকলের শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র হিসেবে সমাদৃত হচ্ছেন।