"আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী"বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: কোরআন পড়েছি বহুবার। কিন্তু তেমন কিছুই বুঝি নি, ভেতরে ডুব দিতে পারি নি কখনাে। যখন এক নীরব মুহূর্তে কোরআনের গভীরে ডুবে গেলাম, আয়াতগুলাে যেন কথা বলতে শুরু করল। শিহরিত, চমকিত হলাম। এক জীবনে যা চাই, তার সবই সাজানাে রয়েছে কোরআনের পরতে পরতে। সুস্থ সুন্দর সুখী পরিতৃপ্ত জীবনের জন্যে যা প্রয়ােজন, পাতায় পাতায় রয়েছে তারই দিক-নির্দেশনা। সবকিছু মিলিয়েই জীবন। তাই সমস্যা শরীরের হােক বা মনের, যৌন জীবনের জট হােক বা অর্থনৈতিক জটিলতা, পণ্যের আসক্তি হােক বা প্রবৃত্তির দাসত্ব, ব্যক্তির অসততা হােক বা সামাজিক অবিচার, পার্থিব সুখ হােক অথবা পরকালীন পরিত্রাণ, সব একই সূত্রে গাঁথা। একটাকে আরেকটা থেকে আলাদা করা যায় না। কোরআন এই চিরায়ত সত্যকেই প্রকাশ করেছে সুস্পষ্টভাবে। ‘পড়াে! তােমার সৃষ্টিকর্তা প্রভুর নামে। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন নিষিক্ত ডিম্ব থেকে। পড়াে! তােমার প্রতিপালক মহান দয়ালু। তিনি মানুষকে জ্ঞান দিয়েছেন কলমের। আর মানুষকে শিখিয়েছেন, যা সে জানত না।' সূরা আলাক-এর এই পঙক্তিমালা দিয়েই কোরআন নাজিলের সূচনা। শুরুতেই কোরআন মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে পড়তে ও জানতে। কোরআন অজ্ঞতাকে অভিহিত করেছে মহাপাপ রূপে। মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে জ্ঞানের পথে, মুক্তবুদ্ধির পথে । এমনকি বিশ্বাসের স্তরে পৌছার জন্যেও মানুষের সহজাত বিচারবুদ্ধির প্রয়ােগকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে কোরআন। বৈষয়িক ও আত্মিক জীবনকেও একই সূত্রে গেঁথেছে কোরআন। সুস্পষ্টভাবেই বলেছে, আল্লাহর বিধান অনুসরণ করাে। দুনিয়া ও আখেরাতে তুমি সম্মানিত হবে। কোরআনের প্রথম আয়াত নাজিলের ২৩ তম বছরে নাজিল হওয়া সূরা বাকারার ২৮১ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “তােমরা সেই দিন সম্পর্কে সচেতন। হও, যেদিন তােমাদেরকে আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে আনা হবে । কোরআনের অনুসারীরা যখন শিল্প সাহিত্য জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চায় অবগাহন। করছিল তখন ইউরােপ ডুবে ছিল অজ্ঞতা ও ধর্মান্ধতার অন্ধকার যুগে। প্রাচ্যের এই আলােকোজ্জ্বল সভ্যতা থেকেই ইউরােপের দেশে দেশে কোরআনের মানবিকতা ও মুক্তবুদ্ধির বাণী পৌছাতে থাকে বিভিন্নভাবে। ইউরােপে সূচনা হয় রেনেসাঁ বা মুক্তবুদ্ধির জাগরণ। নতুনভাবে শুরু হয় জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা। এগােতে থাকে বিজ্ঞান। তাই নিঃসংশয়ে বলা যায়, কোরআন যে মানবিকতা জ্ঞানচর্চা ও মুক্তবুদ্ধির শিক্ষা দিয়েছে, তারই ফল্গুধারায় লালিত হয়ে বিশ্ব প্রবেশ করেছে বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যুগে। প্রতিটি মানুষ বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই একটি মৌলিক প্রশ্নের জবাব জানতে চায়। তা হলাে, দুনিয়ায় আমি কীভাবে ভালাে থাকব? মৃত্যুর পর কোনাে জীবন আছে কি? থাকলে সেখানে কীভাবে ভালাে থাকব? চৌদ্দ শ বছর ধরে কোরআন থেকে যত বেশি সংখ্যক মানুষ এই প্রশ্নের বােধগম্য জবাব। পেয়েছে, আর কোনাে গ্রন্থ থেকে সে তা প্রায় নি। কোরআন তাই কোটি কোটি মানুষের কাছে অনুভূত হয়েছে পরম করুণাময়ের করুণার এক উজ্জ্বল নিদর্শনরূপে। কোরআন নিঃসন্দেহে আল্লাহর কালাম। নাজিল হয়েছে আরবি ভাষায় । এর শব্দবিন্যাস, এর ছন্দ, এর সৌন্দর্য, এর ব্যঞ্জনা, এর অন্তর্নিহিত শক্তি, এর গভীরতা অতুলনীয়। তাই আজ পর্যন্ত এর একটি ছােট্ট সূরার সমকক্ষ সূরা কেউ রচনা করতে পারে নি। কোরআন যেহেতু আল্লাহ সরাসরি আরবি ভাষায়। নাজিল করেছেন, তাই অন্য কোনাে ভাষায় এর মহিমাকে অক্ষুন্ন রেখে অনুবাদ। করা কোনাে মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় । তবে আন্তরিকতা নিয়ে এর মর্মবাণী অনুধাবন করতে চাইলে যে-কোনাে সাধারণ মানুষের পক্ষেই তা সম্ভব। কারণ ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সকল মানুষের হেদায়েতের জন্যেই কোরআন নাজিল হয়েছে। তাই কোনাে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহতে সমর্পিত একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আত্মনিমগ্ন হয়ে ধ্যানের স্তরে তাঁর কালামের মর্মবাণী উপলব্ধি করেছি আর বিস্মিত, চমকিত হয়েছি। বাংলা মর্মবাণী
শহীদ আল বোখারী মহাজাতক বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক মেডিটেশন চর্চার পথিকৃৎ। জীবনযাপনের বিজ্ঞান 'কোয়ান্টাম মেথড'-এর উদ্ভাবক ও প্রশিক্ষক। পরম করুণাময়ের অনুগ্রহে ২৯ বছর ধরে একনাগাড়ে দেশজুড়ে কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। মেডিটেশন চর্চার ইতিহাসে উদ্ভাবক কর্তৃক এককভাবে ক্লাস নিয়ে ৪৭০টি কোর্স সম্পন্ন করা বিশ্বে এই প্রথম। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলা ভাষায় সর্বাধিক পঠিত নন-ফিকশন গ্রন্থ সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড-সহ তার রচিত সবগুলো বই ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১৪ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী পেয়েছে সর্বাধিক পাঠকপ্রিয়তা।