"এমাজউদ্দীন আহমদ রচনাসমগ্র - ১ম খণ্ড" বইটিতে লেখা ফ্ল্যাপের কথা: এটি প্রথম খণ্ড (Volume)। এতে রয়েছে ৯টি বই : মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তা বইতে ছয় শতকের পরবর্তী প্রায় হাজার বছরের রাষ্ট্র চিন্তাবিদদের মতাদর্শ ও অবদান তুলে ধরা হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, মধ্যযুগের রাষ্ট্রতত্ত্ব এক উষর মরুভূমির মতো। কিন্তু এও তো সত্যি, মধ্যযুগের সৃষ্টিই আধুনিককালের ধারাকে বেগবান করেছে। বাংলাদেশ : রাজনীতির গতিপ্রকৃতি ও অন্যান্য প্রবন্ধ বইতে বাংলাদেশে রাজনীতির গতিধারা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পর্যালোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংকট বইয়ে ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালের বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে মাত্র ৭টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়েছে। সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া বইয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চার অতীত ও সাম্প্রতিক ধারার প্রসঙ্গ বিশ্লেষণ করে এ সম্পর্কিত বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ উপস্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ : সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতি গ্রন্থে দিক-নির্দেশনা স্বরূপ বলা হয়েছে, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্যে এ জাতিকে বারে বারে ফিরে তাকাতে হবে পেছনের দিকে, অতীতে। কোনো ছিদ্র অন্বেষণের জন্যে নয়, বরং অভিজ্ঞতার মণিমুক্তা সংগ্রহের জন্যে। সমাজ ও রাজনীতি : জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক শীর্ষক বইতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর পর্যালোচনা করা হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে কিন্তু গণতন্ত্রের পথ সুগম হয় নি। দায়িত্বশীলতার নির্যাসে সিক্ত হয় নি রাজনৈতিক কাজকর্ম। শান্তিচুক্তি ও অন্যান্য প্রবন্ধ বইয়ে বলা হয়েছে, কোনো জাতীয় সমস্যা সমাধানের জন্যে যেমন প্রয়োজন জাতীয় পর্যায়ে ঐকমত্য, তেমনি প্রয়োজন দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের সমর্থন। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানে এর কোনোটি প্রতিফলিত হয় নি। তাই এ ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা এখনো বিদ্যমান গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ বইটির মূল প্রতিপাদ্য হলো, গণতন্ত্র অনেকটা স্পর্শমণির মতো। এর স্পর্শে সবকিছু সোনা হয়ে ওঠে। ভিন্ন মত ও পথের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বৈরী ধূলিঝড়ের মধ্যে গণতন্ত্র সৃষ্টি করে বাসযোগ্য রাজনৈতিক সমাজ। আঞ্চলিক সহযোগিতা, জাতীয় নিরাপত্তা ও অন্যান্য প্রবন্ধ বইয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-অর্থনৈতিক অবস্থান। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ভবিষ্যতমুখী বাণিজ্যনীতির প্রয়োজন হবে জাতীয় সাফল্যের জন্যে ঐক্য এবং নেতৃত্বের সচেতন দৃষ্টি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ দেশের একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ এবং একাডেমিক ব্যক্তিত্ব। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রূপেও দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘ আট বছর। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ একজন প্রখ্যাত গবেষক-পর্যালোচক। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে তুলনামূলক রাজনীতি, প্রশাসন ব্যবস্থা বাংলাদেশের রাজনীতি, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক বাহিনী সম্পর্কে গবেষণা করে চলেছেন। এসব ক্ষেত্রে তিনি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রখ্যাত। তাঁর লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা বর্তমানে ৭০ টির অধিক। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা জার্নালে তাঁর প্রকাশিত গবেষণামূলক প্রবন্ধের সংখ্যা শতাধিক। তাঁর লিখিত গ্রন্থগুলির (ইংরেজি) মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো Bureaucratic Elites in Segmented Economic growth: Bangladesh and Pakistan (1980),Development Administration : Bangladesh (1981), SARC : Seeds of Harmony (1985) Military Rule and Myth of Democracy (1988)তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থগুলির (ইংরেজি )মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে Bangladesh Politics (1980), Foreign Policy of Bangladesh (1984), Society and Polities in Bangladesh (1989), Bangladesh, South Asia and the World (1992), তাঁর বাংলায় লেখা গ্রন্থগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কথা (১৯৬৬) তুলনামূলক রাজনীতি(১৯৮২) বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংকট (১৯৯১), বাংলাদেশ : সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতি (১৯৯২), সমাজ ও রাজনীতি (১৯৯৩), গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ (১৯৯৪), শান্তিচুক্তি ও অন্যান্য প্রবন্ধ (১৯৯৮), আঞ্চলিক সহযোগিতা, জাতীয় নিরাপত্তা( ১৯৯৯), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য প্রবন্ধ (২০০০) শিক্ষাক্ষেত্র অবদান এবং সৃজনশীল লেখার জন্য তিনি দেশেও বিদেশে বিশেষভাবে সম্মানিত হয়েছেন । শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ অবদানের জন্য তিনি লাভ করেছেন আকরাম খান গোল্ড মেডেল, মাইকেল মধুসূদন গোল্ড মেডেল, জিয়া স্মৃতি সংসদ গোল্ড মেডেল, শেরে বাংলা স্মৃতি স্বর্ণপদক, ঢাকা সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক স্বর্ণ পদক , বাংলাদেশ যুব ফ্রন্ট গোল্ড মেডেল, রাজশাহী বিভাগীয় উন্নয়ন ফোরাম স্বর্ণ পদক সৃষ্টিশীল গবেষনা ও আলেখ্য রচনার জন্য তিনি লাভ করেছেন মহাকাল কৃষ্টি চিন্তা সংঘ স্বর্ণ পদক। জাতীয় সাহিত্য সংসদ স্বর্ণ পদক এবং জিয়া সাংস্কৃতিক সংস্থা স্বর্ণ পদক এবং অন্যান্য অনেক সম্মাননা। ১৯৯২ সালে শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্যে তাঁকে দেয়া হয় জাতীয় একুশে পদক। যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক এবিআই কর্তৃক তিনি নব্বই দশকে সার্বাপেক্ষা প্রশংসিত ব্যক্তিত্ব।