রাহুল সাংকৃত্যায়ন ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর প্রদেশের আজমগড়ের একটি ছোট্ট গ্রামে সনাতন হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ভারতের একজন স্বনামধন্য পর্যটক, বৌদ্ধ সহ বিভিন্ন শাস্ত্রে সুপণ্ডিত, মার্কসীয় শাস্ত্রে দীক্ষিত। তিনি বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাদাতা হিসাবেও প্রসিদ্ধ ছিলেন। বলা হয়েছে তিনি হিন্দি ভ্রমণসাহিত্যের জনক। তিনি বহু ভাষায় শিক্ষা অর্জন করেছিলেন যথা : হিন্দি, উর্দু, বাংলা, পালি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, ইংরেজি, তিব্বতি ও রুশ। তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ সংস্কৃত ভাষায় অনুবাদ করেন। পালি ও সিংহল ভাষা শিখে তিনি মূল বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলো পড়া শুরু করেন এবং বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। তার সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো ‘ভোলগা থেকে গঙ্গা’। এটি রচনার পর ভারতের হিন্দীভাষী প্রায় সমস্ত অঞ্চল থেকে তাকে তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো। এছাড়াও তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল — ‘মেরি জীবনযাত্রা’, ‘মধ্য এশিয়ার ইতিহাস’, ‘দর্শন দিগ্দর্শন’, ‘কিন্নর দেশে আমি’, ‘যাত্রাপথে’, ‘মানব সমাজ’, ‘আমার লাদাখ যাত্রা’, ‘ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের উত্থান পতন’, ‘তিব্বতের সওয়া বছর’, ‘ভবঘুরে শাস্ত্র’, ‘ইসলাম ধর্মের রূপরেখা’, ‘মাও সে তুং’, ‘আকবর’, ‘স্তালিন’, ‘বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ’ ইত্যাদি। তিনি ভারত সরকার কতৃর্ক ‘পদ্মভূষণ (১৯৬৩)’ ও ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৮)’ লাভ করেন। শ্রীলঙ্কায় বসবাসকালে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। পরে তিনি স্মৃতিশক্তিও হারিয়ে ফেলেন। ১৯৬৩ সালের ১৪ই এপ্রিল দার্জিলিং শহরে রাহুল সাংকৃত্যায়ন মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর জন্ম ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে সনাতন হিন্দু ভূমিহার ব্রাহ্মণ পরিবারে। জন্মস্থান উত্তর প্রদেশের আজমগড়ের একটি ছোট্ট গ্রাম। তাঁর আসল নাম ছিল কেদারনাথ পাণ্ডে। ছোটোবেলাতেই তিনি মাকে হারান। তাঁর পিতা গোবর্ধন পান্ডে ছিলেন একজন কৃষক। বাল্য কালে তিনি একটি গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিলেন। আর এটিই ছিলো তাঁর জীবনে একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। অষ্টম শ্রেণী অবধি অধ্যয়ন করেছিলেন। এখানে তিনি উর্দু ও সংস্কৃতের উপর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি বহু ভাষায় শিক্ষা করেছিলেন যথা : হিন্দি, উর্দু, বাংলা, পালি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, ইংরেজি, তিব্বতি ও রুশ।
পুরস্কার তালিকা পদ্মভূষণ (১৯৬৩) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৮)
ব্যক্তিগত জীবন জালিওয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকান্ড (১৯১৯) তাঁকে একজন শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী কর্মীতে রূপান্তরিত করে। এ সময় ইংরেজ বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তাকে আটক করা হয় এবং তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। এ সময়টিতে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ সংস্কৃতে অনুবাদ করেন। পালি ও সিংহল ভাষা শিখে তিনি মূল বৌদ্ধ গ্রন্থগুলো পড়া শুরু করেন। এ সময় তিনি বৌদ্ধ ধর্ম দ্বারা আকৃষ্ট হন এবং নিজ নাম পরিবর্তন করে রাখেন রাহুল (বুদ্ধের পুত্রের নামানুসারে) সাংকৃত্যায়ন (আত্তীকরণ করে যে)।, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি বিহারে চলে যান এবং ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ-এর সাথে কাজ করা শুরু করেন। তিনি গান্ধিজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং এসময় তিনি গান্ধীজী প্রণীত কর্মসূচীতে যোগদান করেন। যদিও তাঁর কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না, তবুও তার অসাধারণ পান্ডিত্যের জন্য রাশিয়ায় থাকাকালীন লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে শিক্ষকতার অনুরোধ করা হয়। তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। ভারতে এসে তিনি ডঃ কমলা নামক একজন ভারতীয় নেপালি মহিলা কে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান হয়, কন্যা জয়া ও পুত্র জিৎ। পরে শ্রীলংকায় (তৎকালীন সিংহল) বিদ্যালঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এখানে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দার্জিলিংয়ে, ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল তারিখে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।