"জীবনের গল্প" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: এই সমাজে নারীর সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হলেও অধিকার ভােগের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। উচ্চ, মধ্য, নিম্ন যেকোনাে অবস্থানের নারী হােক না কেন, পদে পদে তারা নিগৃহীত। গ্রন্থকার সেই সৌভাগ্যবান মানুষদের একজন, যিনি সমাজের বিভিন্ন স্তরের নারীর অবস্থান দেখার সুযােগ পেয়েছেন। প্রতিটি গল্পই গ্রন্থকারের দেখা ঘটনার নির্যাস। প্রত্যেকটি গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নারী। নারীর বেঁচে থাকা, প্রেম, সংগ্রাম উঠে এসেছে। এই বেঁচে থাকার লড়াইয়ে কখনাে পুরুষ তার সঙ্গী হয়েছে, কখনাে হয়নি। কিন্তু নারী থেমে থাকেনি। যুদ্ধ চালিয়ে গেছে হারজিতের কথা না ভেবেই। নিজের জীবন বিপন্ন করেও প্রতিনিয়ত সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখে। গ্রন্থভুক্ত বীজ’ গল্পের সােমা সেই নারী। সময় বদলালেও সমাজ সংসারে নারীর অবস্থান বদলায়নি। অপরের ইচ্ছায় বেঁচে থাকে নারী। গ্রন্থকারের চাওয়া, নিজের ইচ্ছেতেই বাঁচুক নারী। নাম গল্পের ‘মেঘলা' যেমনটি চেয়েছিল। জমিলা, নদী, সাবিনা, সীমা, সাহানা অনেক অনেক নাম, আমরা কটাই বা জানি। গ্রন্থকার জীবনের অনেকটা পথ হেঁটে এসেছেন। চলতি পথে ঘটনার মুক্তাকণা কুড়িয়ে কালির আঁচড়ে বন্দী করেছিলেন। কিন্তু একবিংশ শতকের যন্ত্রের যন্ত্রণায় আলাের মুখ দেখার আগেই অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। তা না হলে অনেক আগেই তার ভাবনাগুলাে আলাের মুখ দেখত। গ্রন্থকার হেরে যাননি। তার চরিত্রগুলােও লড়াকু নারী। তিনি প্রথাগত লেখক নন। সাদা চোখে যা দেখেন তাই বলেন। জীবনের গল্প পাঠকের ভালাে লাগলে সৃষ্টির আনন্দে আপ্লুত হবেন। সাদা চোখে দেখা গল্প আবারও বলার চেষ্টা করবেন।
তুলা রাশির জাতক ফেরদৌসী পারভিনের জন্ম শরৎ ও হেমন্তের সন্ধিক্ষণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার্স করেছেন ।সরকারি কলেজে শিক্ষাকতা দিয়ে পেশাগত জীবন শুরু। দেশে ও বিদেশে শিক্ষা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। নামের আগে অধ্যাপক যুক্ত হয়েছে অনেক আগেই। ছাত্রছাত্রীরা তার জীবনের অর্ধেক সময় জড়িয়ে আছে। অধ্যাপনার পাশাপাশি এক যুগের বেশি বাংলাদেশ বেতারে নিয়মিত সংবাদ পাঠ করছেন। উপস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করায় ভালোবাসার জায়গাটি থেকে দূরে। সুযোগ পেলেই দেশ ও দেশের বাইরে ঘুরে বেড়ানো শখের মধ্যে অন্যতম। বৃক্ষপ্রেম তার প্রধান দুর্বলতা। জীবন কাটাতে চান সবুজের মধ্যে। আবৃত্তি করেন। মন খারাপে আশ্রয় নেন রবীন্দ্রনাথের কাছে। অক্ষর দিয়ে ছবি আঁকার পাশাপাশি সুচ সুতোয় ছবি আঁকতে ভালোবাসেন। কন্যাসন্তানের জননী গ্রন্থকার নারী হয়ে জন্ম নেয়ায় গর্বিত। লজ্জিত হন নারীর লাঞ্চনায়। বিশ্বাস করেন পরিশ্রমের বিকল্প নাই । ‘কাজ করে যাও সাফল্যে আসবেই’ – এটিই তার জীবনের মূলমন্ত্র। পাহাড়, সমুদ্র তাকে প্রতিনিয়ত হাতছানি দেয়। জীবনের মূলধন ভালোবাসাকে সঙ্গে করে সামনে এগিয়ে যেতে চান। চলতি পথে মনে দাগ কেটে যাওয়া ঘটনা তার লেখার মূল উপাদান। লেখালেখি করলেও এটিই তার প্রকাশিত প্রথম গল্পগ্রন্থ।