এক জীবনে অনেকটা পথ পেরুতে হয়। পথের বাঁকে বাঁকে ছড়িয়ে আছে কত অচেনা জনপদ। তাদের যাপিত জীবনের গল্পও আলাদা। সুখের গল্প যেমন থাকে বঞ্চনার গল্পও তেমন থাকে। মন খারাপের গল্পও কখনো কখনো বলে যায় সুন্দরের আবাসভূমি। মর্ত্যের স্বর্গখ্যাত কাশ্মীরের পথে পথে সুন্দরের আলিঙ্গন। ঝিলামের তীরে গতিবাদের তত্ত্ব। সস্তিন উচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সৈনিকের ভিড়ে হারিয়ে গেছে আপেল গালের শিশু। নীল চোখের আর্তিতে বেদনার পারাবার। দেবদারু পাতায় সন্ধ্যে ঘনায় মানুষদের মনে অস্বস্তি নিয়ে। চিনারের পাতা ঝরে পরে টুপটাপ ডাল লেকের জলে। শংকর পাহাড়ে রাত নামে হাড়ে কাঁপুনি দিয়ে। সম্ভৱ বেজে যায় কোনো প্রেমিক মনের ছোঁয়ায়। পাহাড়ের পথে পথে সুন্দরের আলিঙ্গন। পাইনের সারিতে ছায়া ছায়া পথ মন খারাপের পদাবলি লেখে। তিস্তা ব্যাকুল হয়ে ছুটে চলে কালিম্পং-এর চড়াই উত্রাইয়ে। সোনার কলস ভেসে ওঠে মেঘের সমুদ্রে। কাঞ্চনজঙ্ঘা রঙের হোলি খেলে মেঘের আঁচলে। খেলনা গাড়ির কু ঝিক ঝিকে ঘুম ভেঙ্গে যায় ঘুম স্টেশনের। মেঘের লুকোচুরি খেলায় হারিয়ে যায় পথের সাথী। রোহিনী নেমে আসে পাথরের বুকে। পাহাড় কাব্য লেখে পাহাড়ের ভাঁজে। সিকিমের কবিতা ঝরনার নূপুরে একাকার হয়ে যায়। ছাঙ্গু লেকের জলে জমাট বাঁধে পাহাড়ের কষ্ট। থাংকা শিল্পীর তুলিতে রঙ ছড়ায় সিকিমের প্রাত্যহিক জীবনের ছবি। মেঘের ডাকে সাইরু আর সাড়া দেয় না। সাইরু হারিয়ে গেছে মেঘের রাজ্যে। প্রেমিক মন খুঁজে বেড়ায় যুগলপ্রেমের গল্প । তক্ষক ডেকে যায় নিশুতি রাতের ঘুম ভাঙিয়ে। বাইরে তখন বাতাসের আর্তচিৎকারে বুকের মধ্যে হিম হয়ে আসে। ভেসে আসে অতন্দ্র প্রহরীর বুটের শব্দ। সব ছাপিয়ে জেগে থাকে যাযাবর মন। ঘুরে বেড়ায় পথে পথে। ঝিরির পানিতে আঁজলা ভরে, বুভুক্ষু মন তৃষ্ণা মেটায় মেঘের ছোঁয়ায়। এইসব দিনরাত্রির কাব্যগাথা শুনিয়ে যায়। অচেনা ভুবন । লেখক পরিচিতি : ফেরদৌসী পারভিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে লেখাপড়া করেছেন। সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন জীবনের অনেকটা সময়। দেশে বিদেশে শিক্ষা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ছাত্রছাত্রীরা তাঁর জীবনের অনেকটা দখল করে আছে। অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এখন অবসর গ্রহণ করেছেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি বাংলাদেশ বেতারে খবর পড়েছেন দুই যুগেরও বেশি। উপস্থাপনার সাথে জড়িত ছিলেন অনেকটা সময়। এটি ছিল তার শখের অনুসঙ্গ। ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। বার বার প্রেমে পড়েন পাহাড় সমুদ্রের। পছন্দ করেন ছবি তুলতে, সেলাই ও রান্না করতে, ঘর সাজাতে। বৃক্ষপ্রেম ও কবিতা তার আজীবন সঙ্গী। এক কন্যা সন্তানের জননী অধ্যাপক ফেরদৌসী পারভিন নারী হয়ে জন্ম নেয়ায় গর্বিত। লজ্জা পান নারীর নিগ্রহে। বিশ্বাস করেন আত্মমর্যাদাশীল নারীই পারে নিজের অবস্থান বদলে দিতে। এই বিশ্বাস নিয়েই বর্তমানে পার্বত্যাঞ্চলে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর নারীদের উদ্যোক্তা তৈরি করছেন নিজ অর্থ ব্যয়ে । পাহাড়ের এই নারীরা ক্রমান্বয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আর্থিকভাবে নিজের সক্ষমতা প্রমাণ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে। এভাবেই স্বপ্ন দেখেন নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির। তুলা রাশির জাতিকা ফেরদৌসী পারভিন মানুষের প্রতি ভালোবাসা ধারণ করেন নিরন্তর। এটি তার নবম গ্রন্থ। প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকায়ও এটি নবম ও দ্বিতীয় ভ্রমণগদ্য গ্রন্থ। জীবনের মূল মন্ত্র- ‘কাজ করে যাও সাফল্য আসবেই'। কাজের মধ্য দিয়ে অবশিষ্ট জীবনটা কাটাতে চান মানুষের ভালোবাসায়।
তুলা রাশির জাতক ফেরদৌসী পারভিনের জন্ম শরৎ ও হেমন্তের সন্ধিক্ষণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার্স করেছেন ।সরকারি কলেজে শিক্ষাকতা দিয়ে পেশাগত জীবন শুরু। দেশে ও বিদেশে শিক্ষা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। নামের আগে অধ্যাপক যুক্ত হয়েছে অনেক আগেই। ছাত্রছাত্রীরা তার জীবনের অর্ধেক সময় জড়িয়ে আছে। অধ্যাপনার পাশাপাশি এক যুগের বেশি বাংলাদেশ বেতারে নিয়মিত সংবাদ পাঠ করছেন। উপস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করায় ভালোবাসার জায়গাটি থেকে দূরে। সুযোগ পেলেই দেশ ও দেশের বাইরে ঘুরে বেড়ানো শখের মধ্যে অন্যতম। বৃক্ষপ্রেম তার প্রধান দুর্বলতা। জীবন কাটাতে চান সবুজের মধ্যে। আবৃত্তি করেন। মন খারাপে আশ্রয় নেন রবীন্দ্রনাথের কাছে। অক্ষর দিয়ে ছবি আঁকার পাশাপাশি সুচ সুতোয় ছবি আঁকতে ভালোবাসেন। কন্যাসন্তানের জননী গ্রন্থকার নারী হয়ে জন্ম নেয়ায় গর্বিত। লজ্জিত হন নারীর লাঞ্চনায়। বিশ্বাস করেন পরিশ্রমের বিকল্প নাই । ‘কাজ করে যাও সাফল্যে আসবেই’ – এটিই তার জীবনের মূলমন্ত্র। পাহাড়, সমুদ্র তাকে প্রতিনিয়ত হাতছানি দেয়। জীবনের মূলধন ভালোবাসাকে সঙ্গে করে সামনে এগিয়ে যেতে চান। চলতি পথে মনে দাগ কেটে যাওয়া ঘটনা তার লেখার মূল উপাদান। লেখালেখি করলেও এটিই তার প্রকাশিত প্রথম গল্পগ্রন্থ।