“কোথাও কেউ নেই" বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃ গেটের কাছে এসে মুনা ঘড়ি দেখতে চেষ্টা করল । ডায়ালটা এত ছােট—কিছুই দেখা গেল। আলােতেই দেখা যায় না, আর এখন তাে অন্ধকার। রিকশা থেকে নেমেই একবার ঘড়ি দেখেছিল—সাড়ে সাত । গলির মােড় থেকে এ পর্যন্ত আসতে খুব বেশি হলে চার মিনিট লেগেছে। কাজেই এখন বাজে সাতটা পঁয়ত্রিশ। এমন কিছু রাত হয়নি। তবু মুনার অস্বস্তি লাগছে। কালও ফিরতে রাত হয়েছে। তার মামা শওকত সাহেব একটি কথাও বলেননি। এমন ভাব করেছেন যেন মুনাকে দেখতেই পাননি। আজও সে রকম করবেন। | মুনা গেট খুলে খুব সাবধানে ভেতরে ঢুকল। জায়গাটা পঁাচপ্যাচে কাদা হয়ে আছে। সকালে বাবুকে দু’বার বলেছিল ইট বিছিয়ে দিতে। সে দেয়নি। বারান্দায় বাতিও জ্বালায়নি। পা পিছলে উল্টে পড়লে শাড়ি নষ্ট হবে। নতুন জামদানী শাড়ি। আজই প্রথম পরা হয়েছে। একবার কাদা লেগে গেলে আর তােলা যাবে না। মুনা পা টিপে টিপে সাবধানে এগুতে লাগল। মামার গলা পাওয়া যাচ্ছে। বকলকে ইংরেজী পড়াচ্ছেন।সকাল বেলা রাখাল বালক বাঁশি বাজাইতেছিল, বল ইংরেজী কি হবে? বকুল ফোঁপাচ্ছে। চড়টর খেয়েছে হয়ত। ইদানীং মামার মেজাজ বেশ খারাপ যাচ্ছে। মুনা মনে মনে ট্রানস্লেশনটা করতে চেষ্টা করল। রাখাল বালকের ইংরেজী কী হবে? ফারমার বয়? না অন্য কিছু? অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে সে দরজার কড়া নাড়ল—একবার, দু’বার, তিনবার। দরজা খুলতে কেউ এগিয়ে আসছে মুনা নিচু স্বরে ডাকল-বকুল, এই বকুল। | বকুল ভয়ে ভয়ে তাকাল বাবার দিকে। শওকত সাহেব ধমকে উঠলেন—একটা ট্রানস্লেশন করতে
বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তী হুমায়ূন আহমেদ। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম স্থান দখল করে আছেন। একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও নাট্যকার এ মানুষটিকে বলা হয় বাংলা সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি বেশ সমাদৃত। বাদ যায়নি গীতিকার কিংবা চিত্রশিল্পীর পরিচয়ও। সৃজনশীলতার প্রতিটি শাখায় তাঁর সমান বিচরণ ছিল। অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ সফলতা এবং তুমুল জনপ্রিয়তা। স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালি জাতিকে হুমায়ুন আহমেদ উপহার দিয়েছেন তাঁর অসামান্য বই, নাটক এবং চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের বদৌলতে মানুষকে করেছেন হলমুখী, তৈরি করে গেছেন বিশাল পাঠকশ্রেণীও। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’ দেখতে দর্শকের ঢল নামে। এছাড়া শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, ঘেটুপুত্র কমলা প্রভৃতি চলচ্চিত্র সুধীজনের প্রশংসা পেয়েছে। অনন্য কীর্তি হিসেবে আছে তাঁর নাটকগুলো। এইসব দিনরাত্র, বহুব্রীহি, আজ রবিবার, কোথাও কেউ নেই, অয়োময়ো আজও নিন্দিত দর্শকমনে। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের জনক তিনি। রচনা করেছেন নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্পের মতো সব মাস্টারপিস। শিশুতোষ গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমূহ এর পাঠক সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমগ্র পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদক (১৯৯৪), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূধন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮), শিশু একাডেমি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদকসহ নানা সম্মাননা। হুমায়ূন আহমেদ এর বই, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য রচনা দেশের বাইরেও মূল্যায়িত হয়েছে৷ ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে পীরবংশে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। গাজীপুরে তাঁর প্রিয় নুহাশ-পল্লীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।